ব্রুকলিনে বাংলাদেশ মার্চেন্ট এসোসিয়েশন আয়োজিত মেলায় বিপুল সমাগম

নিউইয়র্ক: বীর মুক্তিযোদ্ধা গ্লোবাল পিস অ্যামব্যাসেডর স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ, বিশ্ব পরিস্থিতির আলোকে বাংলাদেশি-আমেরিকানদের অবস্থানগত ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, আমাদের প্রথম দায়বদ্ধতা হচ্ছে, আমেরিকার বিদেশ নীতির পক্ষে আমাদের অবস্থান নিশ্চিত করা। আমরা বাংলাদেশীরা এই আমেরিকায় এসেছি, এখানে বসবাস করি। বাংলাদেশি-আমেরিকান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থের পক্ষে দাঁড়ানো। আমেরিকার পক্ষে আমরা দাঁড়াতে বাধ্য। কারণ আমরা আমেরিকান নাগরিক।

তিনি গত ২২ অক্টোবর রোববার ব্রুকলিনে মৌসুমের শেষ পথমেলা উদ্বোধন করে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন। সেসময় কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স ৫ বরো কমান্ডার রিছি টেইলার, ৬৬ প্রিসিন্ট কমান্ডার কেনেথ হেরিটি, কিংস কাউন্টির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি এরিক গঞ্জালেস, অ্যাটর্নি পেরি ডি সিলভার, গেস্ট অফ অনার বাংলাদেশী আমেরিকান ফ্রেন্ডশীপ সোসাইটির সভাপতি কাজী আযম, বাংলাদেশ মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি লুৎফুল করিম, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, পথমেলা উদযাপন কমিটির আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম, প্রধান সমন্বয়কারী মোশাররফ হোসেন মুন, সদস্য সচিব এ এইচ খন্দকার জগলু, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. হায়দার, মো. ইসলাম শিমুল, মাঈনউদ্দিন বাবলু, যুগ্ম সদস্য সচিব কাজী হায়াত নজরুল, তাজুল ইসলামসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন করেন ড. আবু জাফর মাহমুদ। সেসময় মেলার আয়োজক কমিটির নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ ও মেলার অন্যান্য অতিথিবৃন্দসহ বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ার ইনক্ এর সকল কর্মকর্তারা ও কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

ড. আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আজ আমরা বাংলাদেশের মানুষ এই মেলায় একত্রিত হয়েছি, এক অকৃত্রিম ভালোবাসা ও আন্তরিকতার টানে। এই ভালোবাসাই আমাদের দেশাত্ববোধ। এই আন্তরিকতাই আমাদের নিজস্বতা। এই একতাই আমাদের ভিত্তি। এটিই আমাদের জীবন ও বাস্তবতার প্রথম সুর। তিনি একাত্তরে পাকিস্তানী বিহারীদের মতো বিশ্বাসঘাতক আচরণ থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে চলেন, একাত্তরে পাকিস্তানীরা যখন নিরীহ বাঙালীর উপর আক্রমণ করেছিল, তখন পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানকারী বিহারিরা এদেশের সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করার পরও আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় এবং আক্রমণে অংশ নেয়। ওই চরিত্রটা আমরা মনে রেখেছি। ওই মোনাফিকদের মতো কাজ করা আমাদের কাজ হতে পারে না। আমেরিকা আমাদের বিশ্ব নেতৃত্বের পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার সুযোগ দিয়েছে, আমেরিকা আমাদের জীবিকা দিয়েছে, সূতরাং যেকোনো পরিস্থতিতে আমরা আমেরিকার পক্ষে। এটিই আমাদের স্পষ্ট অবস্থান।

আবু জাফর মাহমুদ ব্রুকলীনে বছরের শেষ মেলার আয়োজন সম্পর্কে বলেন, এই মেলার মাধ্যমে বাংলাদেশ মার্চেন্ট এসোসিয়েশন নিজেদের উত্থাণ ঘোষণা দিচ্ছে। বাংলাদেশী সকল ব্যবসায়ীর প্লাটফরম এটি। আমাদের জাতীয় একতার একটি প্রতিচ্ছবি এই মেলা। এই চার্চ ম্যাকডোনাল্ড এলাকাই আমাদের জাতীয় একতার প্রাণকেন্দ্র। এটিই বাঙালীদের প্রথম ‘হাব’। এই ব্রুকলীনেই আমাদের লড়াকু পূর্ব পুরুষরা এসে অনেক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে পাহাড়, সমুদ্র, মহাসমুদ্র পার হয়ে এখানে বসতি স্থাপন করেন। তারাই এখানে বাণিজ্যিক ও সামাজিক অনুকুল পরিবেশ গড়ে তোলেন। এর মধ্য দিয়ে আমাদের বসবাস ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের পথ রচিত হয়।

তিনি প্রবাসের পথ প্রদর্শক বাঙালী পূর্ব পুরুষদের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের বদৌলতেই আমেরিকায় আমাদের সামাজিক সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ আমরা এখানে মূলধারার রাজনীতিতে অবদান রাখতে শুরু করেছি। আমাদের ভাইয়েরা, সন্তানেরা এখানকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছে। তিনি সবার উদ্দেশ্যে বলেন, চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে এই বহুজাতিক সমাজে সবাইকে প্রতিবেশি ভাবতে হবে। এখানে ফিলিস্তিনীও আছে, ইসরাইলও আছে। এখানে আমাদের মধ্যে কোনো বিরোধ সংঘাতে জড়ানোর সুযোগ নেই। কোনো উস্কানী দেয়া ও উস্কানীতে সাড়া দেয়া আমাদের কাজ হতে পারে না। আমরা ভালোবাসা ও ঐক্য চাই। আমেরিকা সরকার ও আমেরিকা সবসময় ঐক্যই প্রত্যাশা করে। তাই তারা পৃথিবীর সর্বত্র শান্তির নেতৃত্ব করছে। আমেরিকার এই শান্তিকামী নেতৃত্বের অংশীদার আমরাও।

ড. আবু জাফর মাহমুদ ব্রুকলীনের মেলা আয়োজক সবাইকে আজকের দিনের নেতৃত্ব হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এখানকার সবাই বহু বছর আগে থেকে আমার নেতৃত্ব অনুসরণ করেছে, তারা এখন নেতৃত্ব করছে। তাদের এই যোগ্য নেতৃত্বের প্রতি আমারও সমর্থন রয়েছে। তারা সময়ের যোগ্য প্রতিনিধি। তিনি বারংবার ঐক্যের আহবান জানিয়ে বলেন, কোনো সময় যেন আমরা রাজনৈতিক দলীয় সংকীর্ণতা দিয়ে আমাদের বৃহত্তর ঐক্য ও অবস্থানকে খন্ডিত করে না ফেলি। আমাদের পরিবার ও বাংলাদেশ আমাদের কাছে সবচেয়ে বড়। এই পরিচয়ের বিশালতা ধারণ করে ক্ষুদ্র স্বার্থের উর্দ্ধে উঠতে হবে। আত্মপরিচয়ের জায়গাতে সবাই এক থাকতে হবে। একে অপরের পাশে দাঁড়াতে হবে। এটিই আমাদের জাতিসত্তার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।

বছরের প্রথম শৈতপ্রবাহ ও ঠান্ডা উপেক্ষা করে মৌসুমের শেষ মেলায় দশ হাজারের বেশি নারী পুরুষ উপস্থিত হন। মেলায় খাদ্য, পোশাক ও অলংকারের স্টল সাজিয়ে বসেন বাংলাদেশী প্রবাসীরা। মেলায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন বাংলা সঙ্গীতের জনপ্রিয় শিল্পী রিজিয়া পারভীন, বাদশা বুলবুলসহ নিউইয়র্কের শিল্পী রানো নেওয়াজ, কৃষ্ণা তিথি প্রমুখ। জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন