রাজু আহমেদ। কলামিস্ট।| জিবি নিউজ ||
আপনি ভালো কিন্তু আপনার ভালো থাকাকে কখনো কখনো সমাজ-রীতি বাধাগ্রস্ত করবে! মূলবোধ-সততা নিয়েও আপনি হেরে যেতে পারেন। যখন দেখবেন বিলোস্টান্ডার্ড কেউ সমাজের নেতৃত্ব দিচ্ছে তখন নিশ্চয়ই আপনার ভালো লাগবে না! ক্ষমতার প্রতাপ, অর্থের উত্তাপ সমাজের অসভ্য-বর্বর শ্রেণি থেকে উদগীরিত হলে নিশ্চয়ই আপনি সহজভাবে মেনে নিবেন না! আপনি আপনাকে সব অনাচার থেকে সংযত করতে জেহাদ করতে পারেন কিন্তু সংসার-সমাজ আপনাকে সহজে ছাড়বে?- ভাবছেন!
অফিসে আপনার পর্যায়ে কিংবা আপনার নিম্নপদে একজন চাকুরি করে, তার অনেক কিছু আছে কিন্তু আপনার বেতনের অর্থের বাইরে আর কিছুই নাই অথচ আপনারও সুযোগ আছ এমনকি তার থেকে বেশি আছে-তখন নিজেকে কতোদিন সংযত রাখতে পারবেন? বরং আপনি সৎ বলে সহকর্মীরা আপনার দিকে আড়ে আড়ে তাকালে, দু'চার কথা শোনালে কতোদিন স্থির থাকা যাবে? চরিত্রহীন-বাটপার আপনাকে নীতি-নৈতিকতার দরস দিলে আপনি সেটা কতোদিন সহ্য করতে পারবেন! সমাজের তলা ভালো হয়ে খুব একটা লাভ নাই যদি উর্ধ্বস্তর সাধু না হয়! উপরিভাগ না শোধরালে নিম্নভাগ ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাবে! বদলে যাওয়ার প্রশ্ন অবান্তর!
সমান বেতন, অনুরূপ ডেস্ক অথচ কারো কারো প্লট-ফ্লাট, বাড়ি আছে, আর আপনার মাসের শেষে ভাড়া পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হয়-ভাবছেন সততার এরূপ সারাজীবন ধরে রাখা যাবে? কেউ কেউ পারবে হয়তো কিন্তু বেশিরভাগ অনিয়মকে নিয়ম বানাবে! ফাইল আটকাবে, ফাঁকি দেবে অতঃপর পত্রিকার পাতায় বড় বড় হেডিংয়ে লেখা থাকবে-অনেক টাকাই পাখনা পেয়ে উড়ে গেছে পরবাসে!
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদী ছেলেগুলোো, ন্যায়নীতিতে টইটম্বুর আত্মাগুলো সুযোগ পেলেই অতীতের সব বিশ্বাস-রীতিনীতি ভুলে যায় কেন? কিছু দোষ সমাজের চরিত্রকেও বহন করতে হবে। এখানে টাকাওয়ালাকে স্বাগত জানানো হয়, কীভাবে অর্থ কামাই হলো সেটা বিবেচনা করা হয় না! যার অধিক ক্ষমতা তাকে নমঃ নমঃ করা হয়। ক্ষমতা কীভাবে অর্জিত হলো তা একবারও জিজ্ঞাসা করা হয় না!
অর্থবানরা পরিবারের কাছে আদরনীয়, সমাজের কাছে পূজনীয়, রাষ্ট্রের কাছে বরণীয় দেখেই সবাই অধিক উপার্জনের পথে নামে! ক্ষমতাহীন হয়ে অর্থ আয় করা দুস্কর! অতঃপর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে দেদারসে দু'হস্ত ব্যস্ত রেখে কামাই করে! যেখানে সাধুত্বের চেয়ে বড়ত্বের দাম বেশি সেখানে অর্থকে লোকজন প্রথম ঈশ্বরের মর্যাদা দেয়নি সেটাই তো আসল ঈশ্বরের সৌভাগ্য!
তাও যদি ক্ষমতার সিঁকিভাগ ভালো মানুষের কাছে যেত! যায়নি বোধহয়! পাড়া-মহল্লার ক্ষমতা পেশীবহুলের কাছে পুঞ্জীভূত হয়েছে! ভদ্ররা ইজ্জত রক্ষায় কান-কলার বাঁচিয়ে চলে! অফিসের সৎ কর্মচারী চাকুরি বাঁচানোর টেনশনে থাকে! বেতনের টাকায় জীবনযাপনকারীদেরকে সামাজিকভাবে অসামাজিক হতে বাধ্য হতে হয়! পারিবারিক-সামাজিক অনেক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলে! যেখানে উপহার দিতে হয় সেখান থেকে পালিয়ে বেড়ায়!
সমাজ শিক্ষিতের অধিক ক্ষমতাবানকে কুর্নিশ করে! টাকা দেখে ইজ্জত করে! পোশাক দেখে আসন পাতে! সমাজের এ অবক্ষয় সমাজের সৃষ্টি নয়, আমাদের সৃষ্টি! কাছের গরীব আত্মীয়ের চেয়ে ভুড়িওয়ালা দূরের আত্মীয় বেশি কদর পায়! চোর-চোট্টা সমর্থন পায়! সৎ-সাধু লাঞ্ছনা পায়! সমাজ নিয়ন্ত্রকেরা একটু একটু ভাবুক? আচ্ছা তারা কারা? তারা কীভাবে, কোনপথে নিয়ন্ত্রক হলেন? তারা কী অর্পিত দায়িত্ব পেয়েছেন নাকি ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে বেশিরভাগ নিজেদের কাছে রেখে বাকিটুকু ভাগ করে দিয়েছে! সমাজ বদলালে মানুষ বদলে যাবে? উল্টোভাবে হোক, মানুষ বদলালে সমাজ বদলে যাবে!
সব ধরনের,অবক্ষয়, অধঃপতনের পরেও কিছু মানুষ স্রোতের উল্টোপথে হাঁটবে আমাদেরকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে-আমরা ভালো মানুষদের সঙ্গী হব, সঙ্গ দেবো। নীতিবিবর্জিত ক্ষমতা, ন্যায়বহির্ভূত আয় মানসিক প্রশান্তি, সুস্থজীবন অর্জনের অন্তরায়। কাউকে ঠকালে, কারো অধিকার হরণ করলে প্রকৃতির ক্ষোভের মুখে পড়তে হবে! আর ওপারের বিচার ওপারেই দেখা যাবে! নিশ্চয়ই বিশ্বাসীগণ এবং অবিশ্বাসীগণ সমান মর্যাদা সম্পন্ন হবে না! অন্যায়কারী ন্যায়ের ওপরে কখনোই জয়লাভ করবে না।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন