সংসদে এক দিনে রেকর্ডসংখ্যক ৭টি বিল পাস

একাদশ জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনের সমাপ্তি দিনে বিল পাসে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এদিন সংসদের ইতিহাসে এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক সাতটি বিল পাস হয়েছে। এ নিয়ে মাত্র ৯ কার্যদিবসের অধিবেশনে ২৫টি বিল পাস হলো। এর আগে ২৪তম অধিবেশনে ৯ কার্যদিবসে ১৮টি বিল পাস হয়েছিল।

 

এই সংসদে কার্যদিবস কম হলেও সর্বোচ্চসংখ্যক ২৫টি অধিবেশন বসেছে। সংসদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সক্রিয় থাকলেও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। রাজপথে সক্রিয় বিএনপি সংসদে এলেও এক বছর আগেই তারা পদত্যাগ করায় সেই প্রশ্ন আরো বড় হয়ে দেখা দেয়। এই সংসদে জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিশ ও মুলতবি প্রস্তাব উপেক্ষিত ছিল।

অবশ্য সরকার ও বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এই সংসদ অনেক বেশি কার্যকর বলে দাবি করা হয়।

 

গত প্রায় পাঁচ বছরে কোনো মুলতবি প্রস্তাব নিয়ে সংসদে আলোচনা হয়নি। প্রথম অধিবেশনে সংসদীয় কমিটিগুলো গঠিত হলেও কার্যক্রম ছিল অনেকটা নিষ্ক্রিয়। এই সংসদের রেকর্ডসংখ্যক ৩১ জন সংসদ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে।

 

দশম জাতীয় সংসদের মতো একাদশ জাতীয় সংসদেও সরকার ও বিরোধী দল মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। আইন প্রণয়নে সংসদ সদস্যদের কার্যকর ভূমিকা দেখা যায়নি। সংসদের শুরুতে যোগ না দিলেও পরে বিএনপির সংসদ সদস্যদের যোগদানের পর অনেকটা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে সংসদ। টানা সাড়ে তিন বছর বিএনপির সংসদ সদস্যরা সংসদে সরকারের বিভিন্ন নীতি ও সিদ্ধান্তের সমালোচনায় মুখর ছিলেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্তে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা।

 

এরপর বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, গণফোরাম ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা নানা ইস্যুতে জোরালো বক্তব্য দিলেও সংসদের কার্যকারিতা ও বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পর্যবেক্ষক মহল।

জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-এ আলম চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, সংবিধানের বাধ্যবাধকতার কারণে করোনার ঝুঁকির মধ্যেও অধিবেশন চালাতে হয়েছে। বিরোধী দলের সংসদ বর্জনের ঘটনা ঘটেনি। ওয়াকআউটের ঘটনাও ছিল খুবই কম। বিরোধীদলীয় সদস্যরাসহ সবাই সংসদে বাধাহীনভাবে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। ফলে সংসদ ছিল পুরোপুরি কার্যকর।

অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে চলতি সংসদ অনেক বেশি কার্যকর বলে দাবি করেছেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি বলেন, সংসদকে কার্যকর করতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। অতীতের মতো সংসদ বর্জনের পরিবর্তে বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা সরকারের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিতে সব সময় সোচ্চার ছিল।

চলতি সংসদের যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। আগামী ২৯ জানুয়ারি এই সংসদের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হবে। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে, সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। সে অনুযায়ী, ১ নভেম্বর থেকে নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে।

সংসদ সচিবালয়ের তথ্যানুযায়ী, চলতি সংসদে রেকর্ডসংখ্যক অধিবেশন বসলেও তুলনামূলক কমসংখ্যক বিল পাস হয়েছে। শেষ অধিবেশনের ২৫টিসহ এই সংসদে মোট ১৬৫টি বিল পাস হয়েছে। এর আগে নবম সংসদে ২৭১টি ও দশম সংসদে ১৯৩টি বিল পাস হয়েছিল। এই সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তরের জন্য এক হাজার ৩৩৬টি প্রশ্ন পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রী ৫৬৬টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। আর মন্ত্রীর উত্তরদানের জন্য পাওয়া ৩০ হাজার ৬৪১টি প্রশ্নের মধ্যে ১৭ হাজার ৭৬২টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা।

বেসরকারি বিল ও মুলতবি প্রস্তাব উপেক্ষিত

চলতি সংসদে নিয়ম মেনে সরকারি বিল পাস হলেও কোনো বেসরকারি বিল পাস হয়নি। এসংক্রান্ত কমিটি নিয়মিত বৈঠকও করেনি। সংসদের কাজ স্থগিত রেখে সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার জন্য মুলতবি প্রস্তাব আনার বিধান থাকলেও জাতীয় সংসদে কোনো মুলতবি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়নি।

২০২২ সালের জুনে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনার দাবি জানিয়েছিলেন বিএনপির সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশিদ। এ জন্য তিনি ওই বাজেট অধিবেশনে একটি মুলতবি প্রস্তাবও এনেছিলেন। তবে কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী, বাজেট অধিবেশনে সাধারণ আলোচনার জন্য মুলতবি প্রস্তাব উত্থাপন করা যায় না। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ‘হরিলুট’ ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে সংসদে একদিন আলোচনার ব্যবস্থা করারও দাবি করেছিলেন তিনি। তবে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়নি।

জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিশের আলোচনা স্থগিত

কার্যপ্রণালী বিধিতে জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার বিধান আছে। চলতি সংসদে বেশির ভাগ সময় এসংক্রান্ত নোটিশের ওপর আলোচনা স্থগিত রাখা হয়। এ ছাড়া কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারা অনুযায়ী, জনস্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তাব আনা যায়। এই আলোচনাও খুব বেশি হয়নি।

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন