বিভিন্ন মিডিয়ায় যা দেখি তার কিঞ্চিৎ সত্য। আয়ের জন্য, ভিউয়ের জন্য হীন কাজ নাই যা এরা করতে পারে না।
রাজু আহমেদ। কলামিস্ট। | জিবি নিউজ ||
আমরা জীবনে বহুবার ভুল মানুষের কাছে ঠকেছি। মেয়ে বিয়ে দিবে, মাকে চিকিৎসা করাবে, ছেলের ফরম ফিলাপের ফি দেবে-এমন নানা ধরনের মানুষের সাথে চলতি পথে দেখা হয়। বন্যা দুর্গতের সাহায্য করবে, শীতার্তদের গরম কাপড় দেবে, এতিমখানায় খাওয়াবে-এমন মানুষকেও অর্থ পাঠাই। সব টাকা আসল কাজে যায়?-এমন নিশ্চয়তা শতভাগ নাই। কিছু বাজে মানুষের খপ্পরে পরে প্রকৃত সাহায্যার্থীরা বঞ্চিত হন। তবে আমাদের সব সাহায্য-দান ভুল মানুষের হাতে যায়, এমন কথাও জোর দিয়ে বলা যাবে না। অনেক সাহায্যই বিপন্ন মানুষের সেবায় ব্যয় হয়। বিপদগ্রস্তে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে। মধ্যখানে দু'চারজন চোর-বাটপারের খপ্পরে পরে কখনো কখনো দান বিমুখতা তৈরি হয়।
একজন মানুষ তার পেশার বাইরে পরের জন্য যা করে তা-ই সে। অর্থের অভাবে মেয়েকে সম্প্রদান করতে পারছে না, সাহায্য না পেলে চুলোয় হাড়ি চাপবে না, সহায়তা না পেলে শিক্ষাজীবন শেষ হবে না-এমন ভূক্তভোগীর সংখ্যা আমাদের চারপাশে কম নয়। গরম কাপড় না পেলে শীতে কষ্ট পাবে, বিপর্যয়ে সহায়তা না পেলে জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে-দেশের আনাচে কানাচে এমন মানুষ কম নয়। সাহায্য-সহায়তা করার মনোভাব আছে-আমাদের চারপাশে এমন মানুষের সংখ্যাও প্রশংসনীয় সংখ্যক। কাজেই দু'চারজন ভুল মানুষের জন্য প্রকৃত সাহায্যার্থীদের জীবনযাপন যেনো কঠিন হয়ে না যায় সে মনোভাব আমাদের থাকুক। বারবার ভুল মানুষের কাছে হেরেও যদি একবার একজন সঠিক মানুষকে জিতিয়ে দিতে পারি তবে সেটাই মানবজীবনের সবচেয়ে বড় জয়।
বিভিন্ন মিডিয়ায় যা দেখি তার কিঞ্চিৎ সত্য। আয়ের জন্য, ভিউয়ের জন্য হীন কাজ নাই যা এরা করতে পারে না। একজন মাতাল নেশার টাকা জোগাড়ের জন্য বারবার মেয়ে বিয়ে দেয়ার অর্থাভাবের ইমোশনকে অপব্যবহার করে ঠকিয়েছে-এখানে দায় সে বাটপারের। তবে ছোট ঠগের বিরুদ্ধে যে ভার্চুয়াল আন্দোলন দেখেছি তা যদি সমাজের বড় বড় ঠগদের বিরুদ্ধে, দুর্নীতিবাজ-ঘুষখোরদের বিরুদ্ধ থাকতো তবে এই সমাজের চিত্রই বদলে যেতো। ফিতাকৃমিদের নিয়ে আমাদের যে ঘৃণা সেটা যদি রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধেও দেখাতে পারতাম তবে আজ আমরা কোথায় থাকতাম তা কল্পনারও অতীত।
রাস্তাঘাটে, প্রকাশ্যে-গোপনে আমাদের দান যেনো বন্ধ হয়ে না যায়। সামর্থ্যানুযায়ী বিপদগ্রস্ত-বিপন্নের পাশে দাঁড়ানো মনুষ্যত্বের দাবি। বিভিন্ন পাত্রে দান রাখলে তার দুই একটি অপাত্র হতে পারে কিন্তু বাকিগুলো থেকে রিটার্ন আসবে। বিপদ-মুসিবত থেকে রক্ষা পেতে, মানসিক প্রশান্তি অর্জন করতে, সম্পদকে পবিত্র করতে দান-সদকার দ্বিতীয় বিকল্প নাই। একজন নেশাখোরের জন্য কন্যাদায়গ্রস্থ সত্যিকারের একজন বিপন্নতাবোধ করা বাবা, খেতে না পারা একজন অসহায় মানুষ যেনো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সম্পদের আমাদের কাছে কিছু দাবী আছে আর সেটা হচ্ছে, আমার অর্থ-বিত্ত, সুখ-সম্পদে এতিম-অসহায়, বিপন্ন-বিপদগ্রস্ত লোকদেরও প্রচ্ছন্ন অধিকার আছে। আমরা সেটা ভুলে না যাই।
কে সাহায্য পাওয়ার যোগ্য-চেহারায় নজর দিলেই সেটা আমাদের মন বলে দেয়। দু’পাঁচজন কুলাঙ্গারের জন্য অসহায় কমিউনিটির অধিকার তুলে নিলে সেটা মানবিক সিদ্ধান্ত হবে না । ফকিরের ভাণ ধরা ভন্ড-নেশাখোর সাহায্যার্থীর জন্য যেমন ঘৃণা পোষণ করি, ভদ্রতার মুখোশ পরিহিত কুলাঙ্গারের, সমাজকে শুষে খাওয়া বাটপারদের বিরুদ্ধেও যেনো তেমন অবস্থানে থাকি। অন্যায়ভাবে কেউ দু'চারশ টাকা নেয় আবার কেউ দু'চারশ কোটি টাকা লোপাট করে। ঘৃণা তীব্রতা, প্রতিবাদের ভাষা ক্ষতির বিবেচনায় হোক; ক্ষমতার বিবেচনায় নয়। দ্রব্যমুল্যের এই ঊর্ধ্বগতির সময়ে রাস্তায় রাতকাটানো মানুষগুলোর ভাত-ভর্তার ব্যবস্থাটুকু করা থেকে আমাদের মানসিকতা যেনো মুখ ফিরায়ে না নেয়!
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন