সিসিকে মহোৎসবে পদোন্নতি, বাতিল গোপনে

gbn

প্রায় ৭ মাস ধরে সিলেট সিটি করপোরেশনে (সিসিক) চলছিল পদোন্নতির মহোৎসব। কোন ধরণের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে একের পর এক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে যাচ্ছিলেন বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এই সময়ের মধ্যে তিনি স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রায় ৩শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পদোন্নতি দেন বলে সিসিক সূত্র জানিয়েছে। তবে বিধিবর্হিভ‚তভাবে পদোন্নতি দেওয়ায় ফেঁসে যেতে পারেন এমন আশঙ্কায় দায়িত্ব হস্তান্তরের দিন সকালে তিনি এসব নিয়োগ স্থগিত করে যান। এসব পদোন্নতির বিপরীতে নগরভবনে কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে।


সিসিক সূত্র জানায়, গত ১০ বছরে নগরভবনে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে ঘিরে একটি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। তার আস্থাভাজনরাই অস্থায়ীভিত্তিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ ও অভ্যন্তরিণ বদলির নামে বাণিজ্য করে আসছিলেন। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা নিয়োগ বাণিজ্যের পরিকল্পনা নেন। মেয়রকে ‘ম্যানেজ’ করে তারা শুরু করেন পদোন্নতি বাণিজ্য। পদোন্নতির বিনিময়ে অনেকের কাছ থেকে সর্বনি¤œ দুই লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৫-৬ লাখ টাকা নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। গত সাত মাস ধরে নগরভবনে এভাবে পদোন্নতির মহোৎসব চলে। অনেক উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে সহকারী প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলীকে তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী, কার্যসহকারী থেকে উপসহকারী এবং সুপারভাইজার থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তবে ঠিক এই সাত মাসে কতজনকে এভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি।

 

 


গত ৯ নভেম্বর নগরভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করা মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর কাছে পদোন্নতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, সাবেক মেয়র প্রায় তিনশ’ জনকে পদোন্নতি দিয়েছিলেন। কিন্তু যাওয়ার সময় তিনি সেগুলো বাতিল করে গেছেন। বাতিলের বিষয়টি সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তাকে ফোনে জানিয়েছেন।’


তবে সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হানিফুর রহমান জানিয়েছেন, পদোন্নতিপ্রাপ্তদের সংখ্যা ৩০-৩৫ জন হবে। পরে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সেগুলো স্থগিত করে গেছেন।

সিসিক সূত্র আরও জানায়, এখনো সিলেট সিটি করপোরেশনের কোন অর্গানোগাম পাশ হয়নি। কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পদোন্নতি দিতে হলে বোর্ড গঠন করতে হবে। বোর্ড বা কমিটি বসে পদোন্নতির বিষয়টি চুড়ান্ত করবে। প্রয়োজনে তারা পরীক্ষাও নিতে পারে। কিন্তু আরিফুল হক চৌধুরী পদোন্নতির চিঠি ইস্যূর ক্ষেত্রে সে নিয়ম অনুসরণ করেননি। এছাড়া পদোন্নতির ক্ষেত্রে তিনি শুভঙ্করের ফাঁকিরও আশ্রয় নিয়েছেন। পদোন্নতিপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, পদোন্নতি দেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আগের গ্রেড অনুযায়ী বেতন ও আর্থিক সুবিধা পাবেন। মুলত নগরভবন কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটকে পদোন্নতির নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেই আরিফুল হক চৌধুরী পদোন্নতির এই নাটক সাজিয়েছিলেন বলে মনে করছেন নগরভবনের অনেকে।

 


এদিকে, যারা টাকা দিয়ে পদোন্নতি নিয়েছিলেন তাদের এখন মাথায় হাত পড়েছে। যাদের মাধ্যমে টাকা দিয়েছিলেন তাদের কাছ থেকে ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ ছাড়া আর কোন আশ্বাস মিলছে না। সূত্র আরও জানায়, আপগ্রেড বেতন স্কেল ছাড়া পদোন্নতি দিয়ে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মুলত পদোন্নতিপ্রাপ্তদের উচ্চ আদালতের দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছিলেন। আদালতের রায়ে যাতে পদোন্নতি ও বেতন আপগ্রেড হয় সেটিই তিনি চেয়েছিলেন। কিন্তু পদোন্নতির প্রক্রিয়াটি বিধিবর্হিভ‚ত এবং এ ঘটনায় নিজে ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে দায়িত্ব হস্তান্তরের দিন সকালেই তাড়াহুড়ো করে সার্কুলার জারি করে পদোন্নতি স্থগিত করেন।


এ প্রসঙ্গে জানতে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রায় তিনশ’ কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদোন্নতি বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন