মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-হামাস সংঘাত আর লন্ডনে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের উত্তাল সময়ে ব্রিটিশ রাজনৈতিক অঙ্গনে অপ্রত্যাশিতভাবেই প্রত্যাবর্তন ঘটেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের। কারো কারো মতে, ক্যামেরনের এই প্রত্যাবর্তনে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে ব্রিটিশ নীতির অভিমুখ নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
সদ্য যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া ডেভিড ক্যামেরন একসময় হামাসের কারণে কঠোর ইসরায়েলি অবরোধের শিকার গাজা উপত্যকাকে ‘বন্দিশালা’ আখ্যা দিয়েছিলেন। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিরসনে ‘দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের’ পক্ষেও সোচ্চার ছিলেন তিনি।
পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের পুরনো মিত্র ইসরায়েলের কট্টর সমর্থকও ছিলেন।
লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের (এসওএনএস) আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক বেন হুইথাম বলেছেন, যদিও ধারণা করা হচ্ছে ক্যামেরন ‘অধিকতর সমঝোতামূলক সুরে’ কথা বলবেন, তবে চলতি সংঘাতে শেষ পর্যন্ত তিনি ফিলিস্তিনিদের পক্ষে যাবেন না।
অধ্যাপক হুইথাম বলেন, ‘কনজারভেটিভ দলের কিছু অভ্যন্তরীণ বিভেদ সারিয়ে তোলাও’ ক্যামেরনকে নিয়োগ দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল।
এসওএনএসের এ শিক্ষক আরো বলেন, ‘সৌদি নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত অর্থনৈতিক অংশীদারদের সঙ্গে ক্যামেরনের শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা হয়।
’
অবৈধ বসতির নিন্দা
প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ২০১০ সালে তুরস্ক সফরে গিয়ে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অবৈধ বসতির নিন্দা জানিয়েছিলেন ক্যামেরন। গাজাকে বন্দিশালা করে রাখা বরদাশত করা হবে না বলেও সে সময় হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তবে ২০১৪ সালে ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানির অনুমোদন না দিতে জোট সরকারের অংশীদারদের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে তাঁর দল।
অধ্যাপক হুইথামের মতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌদি আরবের ব্যক্তিগত সম্পর্ক তাঁর রাজনীতিতে ফেরার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক সম্পৃক্ততা
ক্যামেরন মধ্যপ্রাচ্যে ‘সন্ত্রাসী’ গোষ্ঠীগুলোকে দমনে ব্রিটেনের ‘সামরিক শক্তি’ ব্যবহারের পক্ষে ছিলেন। হুইথাম বলেন, অনেকটা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মতোই ক্যামেরন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অংশে প্রাণঘাতী বাহিনী মোতায়েনের পথ খুলে দিয়েছিলেন।
সুনাক কেন তাঁকে আনলেন
২০১৬ সালে গণভোটে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে রায় এলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান ক্যামেরন। এরপর মূলধারার রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন তিনি। সুয়েলা ব্রেভারম্যানের প্রস্থান আর ক্যামেরনের প্রত্যাবর্তন ইঙ্গিত দিচ্ছে, ঋষি সুনাক শেষ পর্যন্ত তাঁর আসল রূপ সামনে এনে মধ্যপন্থীদের প্রতি সমর্থনের বিষয়টিই প্রকাশ করেছেন।
পর্যবেক্ষকদের মতে, সরকারে ক্যামেরনের প্রত্যাবর্তন বলছে, সুয়েলা ব্রেভারম্যানের সমর্থক দলের ডানপন্থী অংশকে তুষ্ট করার চেয়ে ঋষি সুনাক মন্ত্রিসভায় আরো মধ্যপন্থী অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে চান। সরকারকে মধ্যপন্থার দিকে নিয়ে যাওয়া কার্যকর কৌশল বলেও মনে হচ্ছে।
সূত্র : আলজাজিরা, সিএনএন
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন