বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলায় বিশ্বনেতাদের প্রতি পাঁচ প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ শুক্রবার সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে আয়োজিত ‘দ্বিতীয় ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট’-এ অংশ নিয়ে তিনি এসব প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে ১২৫টি দেশের অংশগ্রহণে এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে ভারত। সংঘাতের অবসান ঘটাতে বিশ্বনেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিগুলোর মধ্যে আস্থার ঘাটতি এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধার অভাব ইউরোপে চলমান যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনকে গণহত্যার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
এই যুদ্ধরত দেশগুলো এবং জড়িত আন্তর্জাতিক নেতাদের মধ্যে সত্যিকারের আস্থা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করা জরুরি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের বিশ্ব আজ যে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, তা হলো বিশ্বাসের ঘাটতি। যেমনটা আছে আমাদের বিশ্বের অসহনীয় দারিদ্র্য, অবাঞ্ছিত বৈষম্য, অসহনীয় সন্ত্রাসবাদ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়মূলক হুমকি।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, গ্লোবাল সাউথের জনগণের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ এবং ক্রমবর্ধমান দুর্ভোগ হিসেবে এখন নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে।
এই সংকটময় মুহূর্তে বিশ্বকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং ‘প্রত্যেকের প্রবৃদ্ধি’ অর্জনের জন্য ‘প্রত্যেকের বিশ্বাস’ শক্তিশালী করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী নির্মম হত্যাযজ্ঞের মুখে অসহায় ফিলিস্তিনিদের মর্মান্তিক, অমানবিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বলেন, এখন সময় আমাদের সবার এক বিশ্ব হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং সংঘাতের অবসান দাবি করার। দ্বিতীয় ‘ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট ২০২৩’ আহ্বান করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করেন।
এ সময় পাঁচটি প্রস্তাবনা পেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্যনিরাপত্তা, বিনা মূল্যে আবাসন, কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ু অভিযোজন বিষয়ে বাংলাদেশ গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়ে প্রস্তুত।
প্রথম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার পক্ষের একজন দৃঢ় সমর্থক হিসেবে বিশ্বাস করি, মানবতার সার্বিক কল্যাণের জন্য বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্লোবাল সাউথকে অবশ্যই একতরফা নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট হিসেবে থাকতে হবে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, বিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠী হিসেবে নারীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং প্রাণবন্ত সমাজ গঠন গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালনকারী নারী নেত্রী হিসেবে আমি নিশ্চিতভাবে জানি, একটি উজ্জ্বল ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যতের জন্য নারীর ক্ষমতায়ন একটি কৌশলগত প্রয়োজন।
তৃতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু প্রসঙ্গে বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখা অত্যাবশ্যক। জলবায়ু অভিযোজনের জন্য অর্থায়ন বৃদ্ধি এবং প্রাসঙ্গিক প্রযুক্তি বিনিময় অপরিহার্য।
চতুর্থ প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, প্রধান জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশগুলো গ্লোবাল সাউথে। এ হিসেবে সবার জন্য উন্নত জীবন, জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশ এবং আমদানিকারক দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখতে গ্লোবাল সাউথের উচিত উন্নয়নপ্রক্রিয়ায় অভিবাসনকে সুবিন্যস্ত করা।
পঞ্চম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘাত এবং কভিড-১৯-এর কারণে স্বল্পোন্নত দেশগুলো বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এখানে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণকালে এবং উত্তরণের পর একটা ভালো সময় ধরে এসব দেশকে পণ্যের ডিউটি ও কোটা ফ্রি প্রবেশ সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার আহ্বান জানান।
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন