ছয় সপ্তাহ পর শনিবারও গাজায় যুদ্ধ চলছে। হামাসের হামলার জবাবে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বিমান ও স্থল আক্রমণের সূচনা হয়। দেশটি ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে ধ্বংস করার অঙ্গীকার নিয়ে যুদ্ধে নেমেছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মতে, ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার প্রায় এক হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছে, যার অধিকাংশই বেসামরিক।
সেই সঙ্গে প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে হামাসের কর্মকর্তাদের মতে, যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে অসংখ্য শিশু।
যুদ্ধের গত ২৪ ঘণ্টার পাঁচটি উল্লেখযোগ্য খবর :
শরণার্থীশিবিরে দুইবার হামলা
হামাস পরিচালিত গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলের দুটি পৃথক হামলায় ৮০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
কর্মকর্তা বলেন, জাতিসংঘ পরিচালিত আল-ফাখৌরা স্কুলে ইসরায়েলি হামলায় ‘কমপক্ষে ৫০ জন’ নিহত হয়েছে।
স্কুলটি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়েছিল। অন্য একটি ভবনে পৃথক হামলায় একই পরিবারের ৩২ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৯ জন শিশু।
এর আগে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস অঞ্চলে একটি আবাসিক ভবনে হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এখনো হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
শত শত মানুষ হাসপাতাল থেকে পালিয়েছে
শত শত মানুষ গাজার আল-শিফা হাসপাতাল থেকে পায়ে হেঁটে গেছে। ঘটনাস্থলে থাকা একজন এএফপি সাংবাদিক এ দৃশ্য দেখেছেন। এর আগে হাসপাতালের পরিচালক বলেছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হাসপাতাল খালি করার নির্দেশ দিয়েছে।
হামাসের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, অনির্দিষ্টসংখ্যক অকালে জন্ম নেওয়া শিশুর সঙ্গে ১২০ জন আহত মানুষ এখনো হাসপাতালটিতে রয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী হাসপাতাল খালি করার আদেশের কথা অস্বীকার করেছে।
তারা বলেছে, মানুষকে চলে যাওয়ার অনুমতি দিতে হাসপাতালের পরিচালকদের অনুরোধে তারা ‘রাজি’ হয়েছে।
গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফা যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলের অভিযোগ, হামাস হাসপাতালের নিচে একটি ঘাঁটি পরিচালনা করে। তবে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি এ অভিযোগ অস্বীকার করে।
পশ্চিম তীরে যোদ্ধা নিহত
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ফাতাহ পার্টির সশস্ত্র শাখার পাঁচ যোদ্ধা অধিকৃত পশ্চিম তীরে বিরল ইসরায়েলি বিমান হামলায় রাতে নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট ও ফাতাহ সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা নাবলুসের বালাতা শরণার্থীশিবিরে হামলা চালিয়ে ‘বেশ কিছু সন্ত্রাসীকে’ হত্যা করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, হামলাটি একটি ড্রোন থেকে করা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। ফাতাহ সূত্র নিশ্চিত করেছে, নিহতরা প্রয়াত ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত প্রতিষ্ঠিত আন্দোলনের সদস্য।
লেবাননে ভেতরে হামলা
ইসরায়েল লেবাননের ভূখণ্ডের ভেতরে একটি কারখানায় আঘাত করেছে বলে লেবানিজ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। একটি সুদূরপ্রসারী হামলার এক সপ্তাহ পর নতুন এ হামলা হলো।
লেবাননের সরকারি ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি বলেছে, ‘একটি শত্রু (ইসরায়েলি) ড্রোন তুল ও কেফোরের মধ্যবর্তী রাস্তায় একটি অ্যালুমিনিয়াম কারখানায় দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে এবং এতে অগ্নিকাণ্ড হয়।’
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল ও লেবাননের সশস্ত্র দলগুলোর মধ্যে, প্রধানত হিজবুল্লাহর মধ্যে মারাত্মক সংঘর্ষ মূলত সীমান্ত এলাকায় সীমাবদ্ধ রয়েছে।
গাজায় জ্বালানি
মিসর থেকে জ্বালানির প্রথম চালান গাজায় প্রবেশ করেছে। এর আগে ইসরায়েল সীমিত সরবরাহের অনুমতি দিতে মার্কিন অনুরোধে সম্মত হয়।
ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডাব্লিউএ বলেছে, ইসরায়েল মিসর থেকে দৈনিক ৬০ হাজার জ্বালানি সরবরাহের অনুমতি দিতে সম্মত হয়েছে। তবে সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, হাসপাতাল, পানি ও স্যানিটেশন সুবিধাগুলো চালু রাখার জন্য যা প্রয়োজন, এটি তার এক-তৃতীয়াংশের কিছুটা বেশি।
সূত্র : এএফপি
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন