চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াই ক্রিকেটের সেরা ব্র্যান্ড

নরেন্দ্র মোদির শহর, প্রত্যাশিতভাবে আহমেদাবাদে গেরুয়া রঙের প্রতিপত্তি বেশি। তবে গতকাল মোদির শহরে তাঁর নামে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামে ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় ম্যাচের গ্যালারি ছেয়ে গিয়েছিলেন নীলে। হাতে গোনা কজন বাদে সবার গায়ে যে ভারতের জার্সি। ২০২৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে তাই এক লাখ ৩২ হাজার দর্শকের গ্যালারিতে উচ্ছ্বাসের নীল ঢেউ ওঠার কথাই ছিল।

 

কিন্তু বেদনার রংও তো নীল। নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের গ্যালারি সেই নীল বেদনায় বিবশ দেখাল। অদম্য ভারত যে শেষ গন্তব্যে এমন ‍হুমড়ি খেয়ে পড়বে-নীল জার্সিধারীরা তো বটেই, ক্রিকেটবিশ্বও ভাবেনি। কিন্তু ক্রিকেটে ভাবনা আর বাস্তবতা থোড়াই রেললাইনের মতো সমান্তরালে চলে।

অস্ট্রেলিয়ার কাছে ফাইনালে ভারতের হার যেন সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

 

https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2023/11.November/20-11-2023/2/kalerkantho-sp-1a.jpgঅস্ট্রেলিয়াও দেখিয়ে দিল। কী? বড় ম্যাচ জিততে অভিজ্ঞতা ও মানসিক দৃঢ়তা জরুরি অনুষঙ্গ। স্কিল সেট ফাইনালে ওঠা সব দলেরই থাকে।

তবে অভিজ্ঞতা এবং মানসিক দৃঢ়তায় রোহিত শর্মার ভারতকে টেক্কা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। উপচে পড়া সুবিশাল গ্যালারি বিরুদ্ধ সমর্থন উগরে দিচ্ছে। ‘ইন্ডিয়া’, ‘ইন্ডিয়া’র সঙ্গে কোহলি-রোহিত শর্মার নামে গগনবিদারী স্লোগান উঠছে-এমন বজ্রনিনাদ যেকোনো প্রতিপক্ষের পিলে চমকে দিতে যথেষ্ট। বিশ্বকাপের শুরুর ভাগে এই মাঠে একই পরিবেশে কেমন ঘাবড়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া অন্য ধাতুতে গড়া।

 

স্নায়ুচাপে নিজেরা ভোগে না, তবে অন্যের ওপর ছড়িয়ে দিতে জানে। তাই উত্তাল গ্যালারির চোখের সামনে ঝাঁপিয়ে বাউন্ডারি বাঁচান ট্রাভিস হেড, অ্যাডাম জাম্পা সীমানা দড়ির কাছে আরো ক্ষিপ্র। উড়ে গিয়ে ট্রাভিস হেড দুর্দান্ত ক্যাচ নেন, যা দেখে ধারাভাষ্যকক্ষে চোয়াল ঝুলে পড়া বিস্ময়। আর গ্যালারির নিস্তব্ধতায় মনে হচ্ছিল রোহিত শর্মার ক্যাচ নয়, অনেকটা দৌড়ে ঝাঁপিয়ে হেড মুঠোয় পুরেছেন মাঠে উপস্থিত সোয়া লাখের ওপর ভারতীয়র!

পিনপতন নিস্তব্ধতা। ফাইনালের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে হাসতে হাসতে এই দৃশ্যকল্পের কথাই তো বলেছিলেন প্যাট কামিন্স, ‘জানি পুরো গ্যালারি ভারতকে সমর্থন করবে। তবে আমরা এমন গ্যালারিকে নীরব করে দিতে পছন্দ করি।’ পুরনো উইকেটে খেলা হবে শুনেও ভাবলেশহীন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক, ‘হুম, ওই উইকেটে পাকিস্তানের একটা ম্যাচ ছিল কোন একটা দলের সঙ্গে।’ মনে হতে পারে অজি অধিনায়কি বুঝি জানেন না সেই ম্যাচে পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। অবশ্যই জানতেন। কিন্তু সচেতনভাবে তিনি নামটি মুখে আনেননি কি ভারতের গায়ে উপেক্ষার জ্বালা ছিটিয়ে দেওয়ার জন্য? হতে পারে।

সেই কামিন্স ভারতের প্রশংসাও করেছেন। এটাই অস্ট্রেলিয়া। প্রতিপক্ষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে সেই শ্রদ্ধাঞ্জলির ভাঁজে ভাঁজে এমন কিছু শব্দ বিছিয়ে দিবে, যা প্রতিপক্ষের মনে কাঁটা হয়ে বিঁধবেই।
https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2023/11.November/20-11-2023/2/kalerkantho-sp-1a.jpgম্যাচের আগে এসব হলো অস্ট্রেলিয়ার জয়ের চেষ্টার প্রথম ধাপ। চাপ যদি থাকেও, তবে সেসব প্রকাশ্যে এনো না। তবে প্রতিপক্ষের পর চাপ বাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্পণ্য করা যাবে না। স্নায়ুচাপে অস্ট্রেলিয়াও ভাঙে। প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষেই তো চুরমার হয়ে গিয়েছিল। চেন্নাইয়ে সেদিন ১৯৯ রান করেও ভারতকে খাঁচায় প্রায় পুরেই ফেলেছিল। কিন্তু বিরাট কোহলির সহজ ক্যাচ ফেলা এবং এই ভুলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় কামিন্সদের হাল ছেড়ে দেওয়া মোটেও অজিসুলভ নয়। এঁরা শেষ হওয়ার আগে শেষ ভাবে না। চেন্নাইয়ে সেই ধাক্কায় আবার ধরাশায়ী পরের ম্যাচে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। লখনউয়ে সেদিন প্রোটিয়াদের কাছে ১৩৪ রানে হারের পর পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের ফুরিয়ে যাওয়ার আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল।

তবে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অদৃশ্য কিন্তু চিরকালীন কোচ সম্ভবত স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন! এই স্কটিশের জমানায় অবিশ্বাস্য সব প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। স্যার অ্যালেক্স অবসরে গেছেন, ম্যানইউরও সেই রমরমা নেই। তবে তিনি কোনোদিন অস্ট্রেলিয়ার কোনো ক্লাব ফুটবল দলকেও কোচিং করাননি, কামিন্স কিংবা তাঁর পূর্বসূরিদের সঙ্গে ফার্গুসনের যোগাযোগের কথা শোনা যায়নি। আসলে অজিদের এই শেষ পর্যন্ত লড়ার মানসিকতা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন উপমা মাত্র।

২০২৩ বিশ্বকাপও সেই লড়াই দেখল। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল স্টিভ ওয়াহর অস্ট্রেলিয়ার, পরের সাতটা ম্যাচই জিততে হবে। সেটাই করেছিল অস্ট্রেলিয়া। এবার টানা সাত জয়ে সেমিফাইনালে ওঠা অস্ট্রেলিয়াই যে ভারতের কঠিনতম প্রতিপক্ষ-এটা নিয়ে তর্কের অবকাশ নেই।  

ভাগ্য নির্ধারণী ম্যাচে সব দল অস্ট্রেলিয়াকে এড়িয়ে চলতে চায়। চায় কারণ, সাফল্যের প্রশ্নে অজিরা বড্ড নির্দয়। স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচে একটা খুচরা রানও প্রতিপক্ষের পাতে তুলে দেবে না। বরং সামান্যতম সুযোগ পেলে লুটেপুটে নেবে প্রতিপক্ষকে। গতকাল যেমন ভারতের সুসজ্জিত দুর্গ তছনছ করে দিল অজিরা।
এটাই অস্ট্রেলিয়া-শোকাতুর নীল জার্সিধারীদের দীর্ঘশ্বাস দূরের ঢাকা বসেও শোনা যাচ্ছে!

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন