নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেছেন, ‘পুরো সরকারি আইন ও রাষ্ট্র আমাদের অধীনে এসেছে, এটা আপনাদের কে বলেছে? এটা কোথায় পেয়েছেন? টক শো দিয়ে দেশ চলে না। সংবিধানে আছে, নির্বাচন কমিশন নির্বাহী বিভাগের সহায়তা চাইলে তারা দিতে বাধ্য।’
আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রশাসনে নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য রদবদল করবেন কি? এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি আলমগীর বলেন, ‘অনেকে নিজেদের ভাবনা থেকে এগুলো বলেন।
আইনের ব্যাখ্যাটা হলো, আরপিও অনুযায়ী পুলিশের কমিশনার, বিভাগীয় কমিশনার ও এর নিচে যত কর্মকর্তা আছেন তাঁরা নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া বদলি হতে পারবেন না। সরকার চাইলে তাঁদের বদলি করতে পারবে না। সবাই আমাদের অধীনে এসেছে এই আইনটি আপনারা কোথায় পেলেন? যদি এটা দেখাতে পারেন তাহলে আমরা এর উত্তর দিতে পারব।’
বিরোধী দলের অভিযোগ, সরকার নিজের মতো প্রশাসন সাজিয়ে রেখেছে―এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি আলমগীর বলেন, ‘এই অভিযোগ ১৯৭০ সাল থেকে শুনে আসছি।
আমি তখন ছোট ছিলাম, প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র ছিলাম, যথেষ্ট বুঝতাম। তখন ইত্তেফাক পত্রিকা পড়েই দেখতাম এসব অভিযোগ। এরপর যত নির্বাচন বাংলাদেশে হয়ে এসেছে এ ধরনের অভিযোগ শুনে এসেছি। এই অভিযোগ কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে।
’
রাজশাহীতে একজন প্রার্থী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন, সে বিষয়ে কমিশনের মতামত জানতে চাইলে ইসি আলমগীর বলেন, এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা রিপোর্ট দিয়েছেন। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বদলিসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ইসি মো. আলমগীর বলেন, ‘অযৌক্তিক কারণে কাউকে বদলি করব না। তবে যদি যৌক্তিক কোনো কারণ থাকে, বিশেষ করে কোনো অফিসার নিরপেক্ষ নন, তাঁর আচরণে ও কাজে প্রমাণ হয়েছে, তখন বদলি করব। যেমন জামালপুরের একজন জেলা প্রশাসককে আমরা বদলি করেছি, সেই সময় শিডিউল ঘোষণা হয়নি।
উনি একটি অনুষ্ঠানে একজন রাজনৈতিক দলের সংসদ সদস্যের পক্ষে কথা বলেছেন। তখন তাঁকে বদলি করেছি।’
এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, কোনো বিভাগের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি নির্বাচন কমিশনের কাছে মনে হয় আচরণ নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিপক্ষে, তখন নির্বাচন কমিশন সেই বিভাগ বা কর্মকর্তাকে বদলি করতে পারে। রিটার্নিং অফিসার যাঁদের নিয়ে নির্বাচন করবেন অর্থাৎ প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার তাঁদের জেলার বাইরে বদলি করা যাবে না।
প্রশাসনে রদবদল প্রসঙ্গে মো. আলমগীর বলেন, ‘আমরা রদবদল করব কেন করব? একটা যৌক্তিক কারণ বা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকতে হবে। যদি অভিযোগ থাকে এই কর্মকর্তা নিরপেক্ষ নন বা অমুকের পক্ষে কাজ করছেন যদি সেই প্রমাণ থাকে তখন আমরা ব্যবস্থা নেব। তা ছাড়া এত হাজার হাজার কর্মকর্তাকে বদলি করা হলে প্রশাসনে বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দেশ পরিচালনায় বা নির্বাচন পরিচালনায় যে একটা বিশাল বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে, এই দায়িত্ব কে নেবে? এখন কোন যুক্তিতে আমরা সবাইকে বদলি করব? একটা যুক্তি তো থাকতে হবে। বদলি করলে তাঁদেরকে প্রচুর টিএ বিল দিতে হবে। এই টিএ বিলের টাকাটা কে দেবে? প্রচুর টাকা লাগলে কয়েক শ কোটি টাকা টিএ বিল লাগবে। আপনারা জানেন একটা কর্মকর্তাকে বদলি করা হলে তাঁর ফ্যামিলির যাওয়া-আসার খরচ ও মালামাল পরিবহনের খরচ দিতে হয়। অনেক টাকা দিতে হয়। তারপর বাসা পরিবর্তন করতে হয়। নতুন অফিসার এসে বলবেন, বাসায় রং করো, তার একটা খরচ আছে। কারণ আগের বাসায় তিনি থাকবেন না। এই টাকা কে দেবে? মুখ দিয়ে বদলি বললেই হয় না। বদলি করতে টাকা লাগে। হ্যাঁ, আমরা অবশ্যই বদলি করব, যদি তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকে এবং প্রমাণ পাই।’
মিছিল করে পার্টির মনোনয়নপত্র কেনা ও জমা দেওয়াতে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়নি বলে জানিয়ে মো. আলমগীর জানান, নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ হচ্ছে কি না, তা দেখতে আগামী ২৮ নভেম্বর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা আচরণবিধি না মানলে ব্যবস্থা নেবেন ম্যাজিস্ট্রেটরা। এ ছাড়া কোনো জায়গায় আচরণবিধি ভঙ্গ হচ্ছে কি না, তা রিটার্নিং কর্মকর্তারা দেখবেন। আচরণবিধি অনুযায়ী, নির্বাচনী এলাকায় গাড়ি বা মোটরসাইকেল নিয়ে শোডাউন করে প্রার্থীরা কোনো প্রচারণা চালাতে পারবেন না। কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য কেউ এখন ভোট চাইতে পারবেন না।
বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের নির্বাচন কমিশনারদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমরা কেবল তাঁদের স্থানীয় খরচ বহন করব। কিন্তু অন্য কোনো খরচ বহন করব না। অন্য দেশেও নির্বাচন হলে আমাদের আমন্ত্রণ জানালে তারাও আমাদের খরচ বহন করে। নির্বাচন কমিশনাররা বাদে অন্য যাঁরা সাংবাদিক বা অন্য সংস্থার লোকজন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসবেন, তাঁরা নিজের খরচে এসে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন।’
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন