মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে খাসিয়াদের ‘বর্ষ বিদায় উৎসব’ সম্পন্ন

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে খাসিয়াদের ভাষায় তাদের নিজস্ব বর্র্ষপুঞ্জি হিসেবে বছরের শেষ দিন ‘খাসি সেং কুট স্নেম’। খাসিয়া আদিবাসী ভাষায় এ অনুষ্ঠানটি হচ্ছে ‘খাসি সেং কুট স্নেম’ দেশব্যাপি খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী ‘খাসি সেং কুট স্নেম’ উৎসব (বর্ষ বিদায়) মাগুরছড়া পুঞ্জিুর মাঠে উৎসবের আমেজে মিলিত হয়।
 

বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মাঠে মাগুরছড়া পুঞ্জির ইয়োথ ক্লাবের উদ্যোগে খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হলেও মূল পর্ব শুরু হয় বেলা ২টায়।

 

 

এই উৎসবের মধ্য দিয়ে তারা পুরোনো বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। বর্ষপুঞ্জি অনুযায়ী ১২৪তম বর্ষকে বিদায় ও ১২৫তম বর্ষকে বরণ করে নিলো খাসিয়া জনগোষ্ঠী। ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ২৩ নভেম্বর খাসি বর্ষ বিদায় ‘খাসি সেঙ কুটস্যাম’ পালন করা হয়। ২৪ নভেম্বর শুক্রবার থেকে শুরু হবে খাসি বর্ষ বরণ।
 

মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি মাঠে খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী বর্ষ বিদায়ে সিলেটের বৃহত্তর আদিবাসী ফোরামের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় আদিবাসী সধারণ সভা।

বর্ণাঢ্য আয়োজনে বৃহত্তর সিলেটের খাসিয়া পুঞ্জির প্রধানদের সাথে মতবিনিময়, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সভার মধ্যদিয়ে আলোচনা সভা ও নানান খেলাধূলা, খাসিয়া নৃত্যে মাগুরছড়া খেলার মাঠে এ উৎসব হয়।
 

 

প্রাকৃতিক পরিবেশে মাগুরছড়া ফুটবল মাঠের একপ্রান্তে বাঁশের খুঁটির উপর নারিকেল গাছের পাতায় ছাউনী দিয়ে আলোচনা সভার মঞ্চ তৈরি করা হয়। সভাপতিত্ব করেন বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের কো-চেয়ারম্যান ও মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান জিডিসন প্রধান সুচিয়াং।
 

লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান ফিলা পত্মীর পরিচালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন।

বিশেষ অতিথি ছিলেন- অফিসার ইনচার্জ সঞ্জয় চক্রবর্তী, বাংলাদেশ মণিপুরি সমাজ কল্যাণ সমিতির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আনন্দ মোহন সিনহা প্রমুখ।
 

 

বর্ণিল সাজে খাসিয়া সম্প্রদায়ের ছেলে মেয়েরা সাজে। এ উৎসবের মাধ্যমে তাদের বিলুপ্ত প্রায় সংস্কৃতি ও খেলাধূলাকে তুলে ধরা হয়। আদিবাসী খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসবের মূল আকর্ষণ ঐহিত্যবাহী খাসি পোশাক পরে মেয়েদের নাচ-গান, তৈল যুক্ত একটি বাঁশে উঠে উপরে রাখা মুঠোফোন গ্রহন, দুটি পুকুরে বড়শী দিয়ে মাছ শিকার, তীর ধনুক খেলা, গুলতি চালানো বিভিন্ন ধরণের তাদের নিজস্ব ভাষাতে গান গেয়ে অতিথিদের আনন্দ দেওয়া হয়। বেশ বড় আকারে মেলাসহ নানা আয়োজন করা হয়।
 

বৃহত্তর সিলেটে প্রায় ৮০টির মতো খাসিয়া পুঞ্জি রয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটি খাসিয়া পুঞ্জির খাসিয়ারা মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির ‘খাসি সেং কুট স্নেম’ অর্থাৎ বর্ষবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। খাসিয়া স¤প্রদায়ের পাশাপাশি এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালি ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষসহ দেশী-বিদেশী পর্যটকরা অংশগ্রহণ করেন। মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান জিডিসন প্রধান সুচিয়াং জানান, সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং আদিবাসীদের অধিকার বাস্তবায়নে সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা এবং খাসিয়া জনগোষ্ঠীর বর্ণিল সংস্কৃতির সৌরভ বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ার আহবান নিয়ে ঐতিহ্যবাহী ‘খাসি সেং কুট স্নেম’ উৎসব পালিত হয়।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন