অপেক্ষার ফল বরাবর মধুর। হতাশ না হয়ে, হাল ছেড়ে না দিয়ে রবের কাছে চাইতে হবে। পাশাপাশি নিজের দায়িত্ব পালন করতে হবে
রাজু আহমেদ। কলামিস্ট।| GBnews24.com ||
একটি ফুল না পেয়ে মন খারাপ করেছেন? অভিশাপ দিচ্ছেন নিজেকে? দুষছেন ভাগ্যকে? রাগ করেছেন যে দেয়নি তার ওপর? আপনি ফুলে সন্তুষ্ট হতে চান অথচ তিনি হয়তো আপনার জন্য আস্ত বাগান প্রস্তুত করছেন! মন খারাপ করার আগে, কাউকে দায়ী করার আগে আরেকটু ভাববেন! আপনার পরিকল্পনায় আপনার জীবনের খুব অল্প কিছুই ঘটে। আপনার কাছে আসে। এর বাইরেও মহৎ পরিকল্পনা হয়। আপনি না চাইতেও যিনি আপনার সব প্রয়োজন মেটান, আপনাকে বিস্মিত করেন, আপনাকে খুশি করেন, তিনি আর কেউ নন; তিনি রব। যার কাছে অতি অল্প চেয়ে সুবিশাল পেয়েছেন। যেটাকে অনেকবার চেয়েছেন অথচ আপনার জন্য কল্যাণকর না হওয়ায় তিনি সেটাকে আপনার করেননি। আপনি হতাশায় দীর্ঘশ্বাস ফেলতে পারেন কিন্তু কল্যাণের চিন্তা করলে আপনি কৃতজ্ঞ হতেন। শুকরিয়ার তসবি জপতেন। সেজদায় মস্তিষ্ক বিনয়াবনত রাখতেন।
কিছু না পেতেই হতাশ হবেন না। ভেঙে পড়বেন না। বরাতকে গালি দিবেন না। ভাগ্যকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন না। না জেনে-বুঝে দোষ দেয়া উচিত নয়। তিনি আপনার মঙ্গল সম্পর্কে আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞাত। মনে করে দেখুন, জীবনে এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে যা আপনার স্বপ্ন-কল্পনাতেও ছিল না অথচ আপনি পেয়েছেন। চেষ্টাবিহীন অর্জন হয়েছে। তিনি আপনাকে যোগ্য বলেই দিয়েছেন। সবার আগে আপনার কল্যাণের কথা প্রতিপালক ভাবেন। বাঁচিয়ে রাখার জন্য আপনাকে যে অমূল্য অক্সিজেন বিনামূল্যে দিয়েছেন, জীবনধারণের জন্য আশ্রয়-খাদ্য দিয়েছেন তিনি আপনাকে নিরাশ করবেন না। সেজন্যই তিনি প্রতিপালক, জাহানের রব। রুবুবিয়্যাত মামুলি কোন ক্ষমতা নয়। আমরা কেবল চাইতে পারি। দেয়া, না দেয়ার সিদ্ধান্ত এককভাবে তাঁর। তবে তিনি কাউকে বিন্দুমাত্র ঠকান না। কখনোই কাউকে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করেন না।
আমরা যদি রবের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না থাকি তবে ধীরে ধীরে আমাদের ওপর থেকে রবের অনুগ্রহ উঠিয়ে নেয়া হয়। চেষ্টার সীমা ভাগ্যকে অতিক্রম করতে পারে না। ভাগ্য চেষ্টার অতিরিক্ত কিছু। চেষ্টায় যা অর্জিত হয় সেটা ভাগ্যের ক্ষুদ্র প্রকাশ। কিন্তু রবের সন্তুষ্টি থেকে আপনার মঙ্গলের নিমিত্তে যে অনুগ্রহ আসে সেটা ভাগ্যের বৃহত্তর রূপ। আপনি না চাইতেও যে রহমত পেয়ে যান সেটা আপনার পূর্ব কর্মের পুরস্কার। কাউকে না ঠেকালো খোদাও আপনাকে ঠেকিয়ে রাখবেন না। ন্যায়ের পথে কাউকে সন্তুষ্ট করুন, কারো উপকার করুন, তবে তাঁর প্রার্থণাতেই আপনার প্রাপ্তির পথ প্রশস্ত হবে, সন্তুষ্টির দরজা উম্মুক্ত হবে। আপনিও প্রশান্তিময় চিত্ত লাভ করবেন।
যিনি স্রষ্টা তিনি বেহিসাব দান করেন। কোন একটি চাওয়া অপূর্ণ হলেই ভাগ্যকে গালি দেয়া, ,হতাশায় নাভিশ্বাস তোলা বিশ্বাসীদের জন্য শোভনীয় নয়। অনেক না পাওয়ার মাঝে বড় বড় পাওয়া লুকিয়ে থাকে। কোন কিছু না পাওয়া যদি আপনার জন্য মঙ্গলের হয় তবে রব সে সিদ্ধান্তই আপনার কল্যাণে বহাল রাখেন। যার চিন্তুাকে বে-ইনসাফ স্পর্শ করতে পারে না তার ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ধৃষ্টতার নামান্তর।বড় পাপ। যিনি মানুষের ভাগ্য নিয়ন্তা তিনি ক্ষুধা দিয়ে, ভয় দিয়ে সৃষ্টিকে পরীক্ষা করেন। যদি পাশ করে যান তবে অনাবিল নেয়ামত। যদি কেউ ফেলও করে তবে তাকে ছাড় দেন বটে কিন্তু ছেড়ে দেন না।
অপেক্ষার ফল বরাবর মধুর। হতাশ না হয়ে, হাল ছেড়ে না দিয়ে রবের কাছে চাইতে হবে। পাশাপাশি নিজের দায়িত্ব পালন করতে হবে। অল্প কিছুর জন্য একটুও মন খারাপ নয় কেননা আশাবাদীর জন্য আরও বড় বড় নেয়ামত সজ্জিত অবস্থায় অপেক্ষা করছে। চাওয়া পূর্ণ হয়নি বলে কি হয়েছে?-তিনি এতো বেশি দিতে পারেন যা আপনার সন্তুষ্টির সীমাকে অতিক্রম করতে সক্ষম। যদি অবিশ্বাসী না হই, যদি অকৃতজ্ঞ না হই তবে স্বীকার করবো বোধহয়, এমন খুশির মুহূর্ত আমাদের প্রত্যেকের জীবনে বহুবার এসেছে। যদি কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হওয়ার কোন কাজ না করি তবে আশা রাখছি, ভবিষ্যতেও রবের পক্ষ থেকে বারবার সন্তুষ্ট হওয়ার পয়গাম আমার জন্য উপস্থিত হবে। নিঃসন্দেহে তিনি ন্যায়-বিচারক।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন