সাত সপ্তাহের যুদ্ধের পর চার দিনের যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দিনে শনিবার আশা করা হচ্ছে, ৪২ ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে হামাস আরো ১৪ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ১৩ ইসরায়েলিকে মুক্তি দেয় এবং যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ইসরায়েল তার কারাগার থেকে ৩৯ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়।
৭ অক্টোবর ইসরায়েল হামাস এক নজিরবিহীন হামলা চালায়। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মতে, সেই হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ জন নিহত এবং প্রায় ২৪০ জন হিম্মি হয়েছে।
হামলার জবাবে ইসরায়েল হামাসকে নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে যুদ্ধ শুরু করে। গাজায় নিরলস বিমান হামলা ও স্থল অভিযান শুরু করে। হামাস সরকার বলছে, যুদ্ধে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক।
যুদ্ধের গত ২৪ ঘণ্টার চারটি উল্লেখযোগ্য খবর :
আরো মুক্তি
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজা উপত্যকায় এখনো যুদ্ধবিরতি চলায় ১৪ জিম্মি এবং ৪২ ফিলিস্তিনি বন্দিকে শনিবার মুক্তি দেওয়া হবে।
এর আগে শুক্রবার হামাস ১৩ ইসরায়েলি জিম্মির সঙ্গে ১০ থাই ও একজন ফিলিপিনোকে মুক্তি দিয়েছে। তাদেরকেও ৭ অক্টোবরের হামলার সময় জিম্মি করা হয়েছিল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, প্রায় ২১৫ জন জিম্মি এখনো গাজায় বন্দি রয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে তারা জীবিত না কি মৃত তা জানা যায়নি।
প্রধানত কাতারের মধ্যস্থতায় সমঝোতা চুক্তির অধীনে হামাস ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ১৫০ ফিলিস্তিনির বিনিময়ে মোট ৫০ জন জিম্মিকে মুক্ত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গাজায় ত্রাণ
এএফপিটিভির লাইভ ফুটেজে দেখা গেছে, পর পর দ্বিতীয় দিনের মতো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ত্রাণ বহনকারী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করছে।
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ জানিয়েছে, শুক্রবার মিসরের সঙ্গে রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে ১৩৭টি ট্রাক জ্বালানি, খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে।
এ ছাড়া ২১ জন গুরুতর রোগীকেও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ওসিএইচএ জানিয়েছে, শুক্রবার ইসরায়েলের নিতজানা গ্রাম থেকে রাফাহ ক্রসিংয়ে মোট ২০০ ট্রাক পাঠানো হয়েছে।
ইসরায়েলের মালিকানাধীন জাহাজে আঘাত
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) উৎক্ষেপণ করা সন্দেহভাজন একটি ড্রোন ভারত মহাসাগরে ইসরায়েলের মালিকানাধীন একটি কার্গো জাহাজে আঘাত করেছে। একজন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। মেরিটাইম সিকিউরিটি কম্পানি অ্যামব্রেও এই হামলার খবর জানিয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেছেন, শুক্রবার ভারত মহাসাগরে একটি বেসামরিক মোটর জাহাজে ড্রোন আঘাত হানার ঘটনা সম্পর্কে তারা অবগত। একটি সন্দেহভাজন শাহেদ-১৩৬ ড্রোন জাহাজটিতে আক্রমণ করেছে। এতে জাহাজের সামান্য ক্ষতি হয়েছে এবং কেউ আহত হয়নি।
এক সপ্তাহ আগে ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা দক্ষিণ লোহিত সাগরে একটি ইসরায়েল-সংযুক্ত পণ্যবাহী জাহাজ জব্দ করেছিল।
হামাসের সমর্থনে গত অক্টোবর থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে হুথিরা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েলে হিজবুল্লাহর আক্রমণ
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী শনিবার বলেছে, তারা একটি ক্ষেপণাস্ত্রকে গুলি করে ধ্বংস করেছে, যা ইসরায়েলি ড্রোনকে লক্ষ্যবস্তু করতে লেবানন থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।
সামরিক বাহিনী বলেছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশ করেনি। জবাবে তারা হিজবুল্লাহ অবকাঠামোতে আঘাত করার জন্য যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে।
হামাসের মিত্র হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলিরা যত দিন যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে শিয়া দলটিও তত দিন মেনে চলবে।
এএফপির গণনা অনুসারে, ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে আন্তঃসীমান্ত সংঘর্ষে লেবাননে ১০৯ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত ৭৭ জন হিজবুল্লাহ যোদ্ধা এবং ১৪ জন বেসামরিক নাগরিক। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের মতে, ইসরায়েলি পক্ষের ছয় সেনা ও তিনজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
সূত্র : এএফপি
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন