সারা দেশে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার রোগী বাড়ছে। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫০ হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে ৩৭ হাজার ৬৪১ জনের ডায়রিয়া ও ১২ হাজার ৩৬২ জনের নিউমোনিয়া হয়েছে। আক্রান্তদের বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) উপাত্ত থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতী বলেন, ‘দেশে ঠাণ্ডাজনিত রোগ নিউমোনিয়ায় প্রতিবছর পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ২৪ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়।’
জোবায়ের চিশতী বলেন, ‘অপুষ্টি, অপরিণত শিশুর জন্ম, ঘরের মধ্যে বায়ুদূষণ, অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়া এবং রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা ঠিক সময়ে শনাক্ত করতে না পারায় মূলত নিউমোনিয়ায় মৃত্যু বেশি হয়।’
এমআইএসের তথ্য মতে, চলতি বছর ২০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছে এক লাখ ৬৭ হাজার ১৭৮ রোগী।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৮ হাজার ১৫ জন, যা মোট ভর্তি রোগীর ২৯ শতাংশ। এরপর সবচেয়ে বেশি ২৬ হাজার ৪৩৯ রোগী ঢাকা বিভাগে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে, যা মোট রোগীর ১৬ শতাংশ।
এমআইএসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছর প্রতি মাসে গড়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৫ হাজার ১৯৮। গত অক্টোবরে সবচেয়ে বেশি ২৮ হাজার ৮৫৩ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে, যা অন্যান্য মাসের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি প্রায় ৪ লাখ
চলতি বছর ২০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছে তিন লাখ ৮১ হাজার ২৬৩ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৬ হাজার ১২৮ জন, যা মোট ভর্তি রোগীর প্রায় ২০ শতাংশ। এরপর সবচেয়ে বেশি ৭২ হাজার ৮৬০ রোগী রাজশাহী বিভাগে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে, যা মোট রোগীর ১৯ শতাংশ।
গড়ে প্রতি মাসে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩৪ হাজার ৬৬৯। গত জুলাই মাসে সবচেয়ে বেশি ৬৮ হাজার ৮৯৭ রোগী ভর্তি হয়েছে।
এরপর গত অক্টোবরে ভর্তি হয় ৬৭ হাজার ৫৭৭ জন।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ড. মো. মহিউদ্দীন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা, নগরীর অকার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন প্রকল্পের পরিবেশগত সুরক্ষার অভাব ও সুপেয় পানি সরবরাহ সংকটে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা পানিতে দুর্গন্ধ পাওয়া, ময়লাযুক্ত পানি সরবরাহ, ভূগর্ভস্থ পানির পাইপলাইন ফেটে গিয়ে মাটি ও ড্রেনের দূষিত পানি মেশার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।’
ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ সময় শিশুদের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। কারণ এটি ভাইরাসবাহিত রোগ ছড়ানোর জন্য উপযোগী সময়। শ্বাসের গতি থেকে বোঝা যায় নিউমোনিয়া কি না। শিশুর জ্বর থাকে, নেতিয়ে যায়, খেতে পারে না। কাশতে কাশতে বমি হয়। এসব লক্ষণ দেখলে বুঝতে হবে শিশুর নিউমোনিয়া হয়েছে। তখন দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, নিউমোনিয়ায় যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়, রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি তত কমে।’
ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এ সময়ে শিশুকে মোটা কাপড় না পরিয়ে একের অধিক হালকা কাপড় পরানো যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে শিশু যেন ঘেমে না যায়। শিশুকে এ সময় টাটকা ফল ও সবজি খাওয়াতে হবে। এতে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি।’
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন