সিলেটে আশঙ্কাজনকভাবে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। একই সাথে পানিতে বাড়ছে লবণাক্ততা। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় নলকূপ দিয়ে পানি তুলতে আগের চেয়ে অনেক বেশি গভীরে পাইপ বসাতে হচ্ছে। কোন কোন উপজেলায় পূর্বে বসানো নলকূপ থেকে পানি উঠছেই না। উপজেলাগুলোর মতো সিলেট নগরী অবস্থাও একই। জলবায়ূ পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও যত্রতত্র গভীর নলকূপ বসিয়ে পানি উত্তোলনের ফলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র জানায়, সিলেট জেলার প্রায় সবকটি উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর গেল কয়েক বছরে ৩০-৪০ ফুট নিচে নেমে গেছে। ফলে সাধারণ নলকূপ থেকে পানি ওঠছে না। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় আগে যেসব নলকূপ দিয়ে পানি ওঠতো সেগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। যে কারণে সাধারণ নলকূপের স্থলে গভীর নলকূপ স্থাপন করছেন সাধারণ মানুষ। সিলেট নগরেও পানির স্তর নেমে যাওয়ায় চাহিদামাফিক পানি উত্তোলন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সংকট দিন দিন বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানির স্তর যেভাবে নিচে নামছে তা আশঙ্কাজনক। এই অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে হলে জলবায়ূ রক্ষায় সচেতন হতে হবে। বেশি করে গাছ লাগানোর পাশাপাশি নদ-নদী, খাল ও জলাশয়গুলো সংস্কার করে পানির প্রবাহ বাড়াতে হবে। পুকুর ভরাট বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব।
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, সিলেট নগরীর সাবেক ২৭টি ওয়ার্ডে প্রায় ১৭ হাজার পানির গ্রাহক রয়েছেন। এই ১৭ হাজার গ্রাহককেও নিয়মিত পানি সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন আরো ১৫টি ওয়ার্ড। বর্ধিত ওয়ার্ডে আরো অন্তত অর্ধলাখ বাসা-বাড়ি রয়েছে। যেগুলো সিসিকের বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের আওতার বাইরে। বর্ধিত এলাকার অনেক পাড়া-মহল্লায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানি সংকট তীব্র হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের পানি শাখার কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে একটি শোধনাগার ও ৪১টি গভীর নলকূপ থেকে পানির সরবরাহ করা হচ্ছে। নগরীতে চার কোটি লিটার পানির চাহিদা রয়েছে। কিন্তু অর্ধেকের বেশি সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের তথ্যমতে, সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় পানির স্তর নিম্নমুখী। এর মধ্যে সিলেট নগরীর বিভিন্ন অংশ, সিলেট সদর ও দক্ষিণ সুরমা ও টিলা অধ্যুষিত কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন রয়েছে। অনেক জায়গায় পানির স্তর ৩০-৪০ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে। যে কারণে পানি উত্তোলনের জন্য সাধারণ নলকূপের স্থলে এখন গভীর নলকূপ স্থাপন করতে হচ্ছে।
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে মাটির তলদেশে প্রচুর পাথরের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ফলে টিউবওয়েল বসিয়ে সেখানে সুফল মেলে না। তাই যুগ যুগ ধরে এখানে পানির একমাত্র উৎস কুয়া। স্থানীয়ভাবে যাকে ইন্দারা বলা হয়। এর ওপর নির্ভরশীল স্থানীয় মানুষের পানির যোগান।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে সারা দেশেই পানির স্তর নিম্নমুখী। সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমাসহ সব ক’টা উপজেলায় পানির স্তর নিম্নমুখী। তাই এখানে সাবমার্সিবল পাম্প বসানো হচ্ছে।’
আলমগীর হোসেন আরও জানান, জলবায়ু পরিবর্তন, বৃষ্টি না হওয়া, খাল, নদী, পুকুর ভরাট হয়ে যাওয়া; সর্বোপরি বাসাবাড়ির কাজের জন্য মাত্রাতিরিক্তভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে এমনটা হচ্ছে। আবার সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টিপাতও কম হচ্ছে। সব মিলিয়ে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, সিটি করপোরেশন থেকে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্ধিত এলাকায়ও পানি সরবরাহ করা হবে। সিলেট ওয়াসা গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই এর কার্যক্রম শুরু হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন