১০৬ শ্রমিককে মুনাফা দেওয়ার রায় বাতিল, হাইকোর্টে জিতলেন ড. ইউনূস

নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত অলাভজনক সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ কল্যাণের ১০৬ শ্রমিককে বিধি অনুযায়ী মুনাফা দিতে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের রায় এখতিয়ারবহির্ভূত ঘোষণা করে তা বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেছেন, গ্রামীণ কল্যাণের শ্রমিকেরা মুনাফার অংশ পাবে কি না, শ্রম আইন অনুসারে সে সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের নেই।

জারি করা এ সংক্রান্ত রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি খোন্দকার দীলিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. গোলাম রাব্বানী শরীফ। গ্রামীণ কল্যাণের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শেখ হাসান আরিফ ও আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন।

 

হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন শ্রমিক পক্ষের আইনজীবী আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

আর গ্রামীণ কল্যাণের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘শ্রম আইনের ২৩১ ধারা অনুসারে দুই পক্ষের মধ্যে কোনো চুক্তি হলে এবং সে চুক্তি নিয়ে কোনো বিরোধ সৃষ্টি হলে তা নিষ্পত্তি করারিএখতিয়ার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের আছে।

কিন্তু সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের সঙ্গে গ্রামীণ কর‌্যাণের কোনো চুক্তি না থাকায় কোনো বিরোধও ছিল না। ফলে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়টি এখতিয়ারবহির্ভূত ঘোষণা করে তা বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। তবে উচ্চ আদালত রায়ে বলে দিয়েছেন, এই শ্রমিকরা চাইলে শ্রম আইনের ১৩২ ধারা অনুসারে প্রতিকার চেয়ে শ্রম আদালতে যেতে পারবেন।’

 

হাইকোর্টের এ রায়ের ফলে গ্রামীণ কল্যাণের সাবেক ১০৬ কর্মীকে মুনাফার দিতে টাকা দিতে হবে না বলে জানান এই আইনজীবী।

 

গ্রামীণ কল্যাণ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ কম্পানিভুক্ত একটি অলাভজনক সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ১০৬ জন শ্রমিক ২০০৬ সাল থেকে ২০১৩ পর‌্যন্ত বিভিন্ন পদে এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ অবসরে গেছেন। আবার কাউকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কিন্তু চাকরির পর প্রতিষ্ঠানটির মুনাফার কোনো অংশ তাদের দেওয়া হয়নি।

অথচ ২০২১ সাল থেকে গ্রামীণ কল্যাণের মুনাফার অংশ শ্রমমিকদের দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে এই শ্রমিকরা ভূতাপেক্ষভাবে মুনাফার অংশ দাবি করেন। এর জন্য প্রথমে তারা গ্রামীণ কল্যাণ কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিশ দেন। নোটিশে সাড়া না পেয়ে পরে তারা শ্রম আইনের ২৩১ ধারায় মামলা করেন। গত ৩ এপ্রিল এ মামলার রায় দেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। রায়ে ট্রাইব্যুনাল শ্রম আইন অনুসারে ২০০৬ থেকে ২০১৩ পর‌্যন্ত সময়ের মুনাফার অংশ শ্রমিকদের দিতে গ্রামীণ কল্যাণকে নির্দেশ দেন।

 

এ রায় চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন গ্রামীণ কল্যাণ কর্তৃপক্ষ। সে রিটের প্রাথমিক শুনানির পর গত ৩০ মে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। শ্রমিকদের মুনাফার অংশ দিতে নির্দেশ দেওয়া শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের রায় কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। আর অন্তবর্তী আদেশে ট্রাইব্যুনালের রায়ে স্থিতাবস্থা (স্টেটাসকো) দেওয়া হয়। ফলে ১০৬ শ্রমিকের মুনাফা প্রাপ্তির প্রক্রিয়া আটকে যায়।

গত ২১ জুন এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন শ্রমকিরা। পরদিন আবেদনে শুনানির পর চেম্বার আদালত শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ে হাইকোর্টের দেওয়া স্থিতাবস্থা স্থগিত করেন। সেই সঙ্গে আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন। সে ধারাবাহিকতায় গত ১০ জুলাই আবেদনটিতে শুনানির পর তা নিষ্পত্তি করে আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত। ট্রাইব্যুনালের রায়ে হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ বহাল রেখে দুই মাসের মধ্যে রুল নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সে ধারাবাহিকতায় রুল শুনানির রুলটি যথাযথ ঘোষণা করে রায় দিলেন উচ্চ আদালত।

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন