ইসরায়েল ও হামাস যুদ্ধবিরতি আরো এক দিন বাড়ানোর জন্য সম্মত হয়েছে। বিরতিতে জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময় করা হয়েছে এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় সহায়তা পৌঁছেছে।
৭ অক্টোবরের এক নজিরবিহীন হামলার সময় হামাস যোদ্ধারা দক্ষিণ ইসরায়েল থেকে প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে গিয়েছিল। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেই হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক।
জবাবে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র হামাসকে নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইসরায়েল। গাজা শাসনকারী হামাস সরকারের মতে, স্থল আক্রমণের পাশাপাশি বিমান, কামান, নৌ বোমাবর্ষণসহ নিরলস ইসরায়েলি অভিযানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।
যুদ্ধের ৫৫তম দিনে গত ২৪ ঘণ্টার পাঁচটি উল্লেখযোগ্য খবর :
হামাস আরো জিম্মিকে মুক্তি দেবে
হামাসের একটি সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে, এক দিনের যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার গাজা উপত্যকা থেকে ১০ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সূত্র জানিয়েছে, ‘তারা (জিম্মি) সবাই জীবিত।
’
বৃহস্পতিবার যুদ্ধ থামানোর কয়েক মিনিট আগে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছিল, এটি দীর্ঘায়িত হবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পরে জানায়, তারা হামাসের কাছ থেকে মুক্তির জন্য নারী ও শিশু জিম্মিদের একটি নতুন তালিকা পেয়েছে। ‘তাই যুদ্ধবিরতি অব্যাহত থাকবে’।
প্রথম চার দিনের জন্য শুক্রবার থেকে বিরতি শুরু হয়েছিল এবং সর্বশেষ দুই দিন আগে তা এক দিনের জন্য দীর্ঘায়িত হয়েছিল।
যুদ্ধবিরতি সম্প্রসারণে ব্লিনকেনের চাপ
সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি নেতাদের বলেছেন, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ‘ফলাফল দিচ্ছে’ এবং এটি চালিয়ে যাওয়া উচিত। সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ব্লিনকেন এই অঞ্চলে তার তৃতীয় সফরে রয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগের সঙ্গে বৈঠকে ব্লিনকেন বলেছেন, ‘গত সপ্তাহে আমরা জিম্মিদের বাড়িতে ফিরে আসার এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলিত হওয়ার খুব ইতিবাচক বিকাশ দেখেছি। এটি গাজার নিরীহ বেসামরিক লোকদের কাছে যাওয়ার জন্য মানবিক সহায়তা বৃদ্ধিকেও সক্ষম করেছে, যাদের এটি অত্যন্ত প্রয়োজন।’
ব্লিনকেন পরে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের আসন রামাল্লায় পৌঁছন এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে দেখা করেন।
জেরুজালেমে হামলা, হামাসের দায় স্বীকার
হামাস জেরুজালেমে একটি বন্দুক হামলার দায় স্বীকার করেছে। যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর পরপরই বৃহস্পতিবার এ হামলায় তিনজন নিহত হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, দুই বন্দুকধারী জেরুজালেমের পশ্চিম দিকে একটি বাস স্টপের কাছে লোকজনের ওপর গুলি চালায়। পরে বন্দুকধারীদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
জেরুজালেমের পুলিশ প্রধান ডোরন টরগেম্যান ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, দুই ‘সন্ত্রাসী’ একটি গাড়িতে এসে উপস্থিত হয় এবং গুলি চালায়। তাদের একজনের কাছে একটি এম-১৬ এবং অন্যজনের হাতে একটি পিস্তল ছিল।
পরে দায় স্বীকার করে একটি বিবৃতি জারি করে হামাস। গোষ্ঠীটি এ হামলাকে ‘গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নজিরবিহীন অপরাধ এবং জেনিনে শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের’ স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া বলে অভিহিত করেছে।
বাড়ি ফিরেছে থাই বন্দিরা
গাজায় হামাস কর্তৃক অপহৃত এবং কয়েক সপ্তাহ ধরে বন্দি ১৭ থাই জিম্মি বৃহস্পতিবার ব্যাংককে অবতরণ করেছে। সেখানে আনন্দিত স্বজনরা তাদের বাড়িতে স্বাগত জানাতে অপেক্ষা করছিল।
থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী পার্নপ্রি বাহিদ্ধা-নুকারা এ সপ্তাহের শুরুতে ইসরায়েলে সফর করেন এবং জিম্মিদের সঙ্গে দেশে ফেরেন। এ সময় সবাই থাই ও ইসরায়েলি পতাকা সংবলিত টি-শার্ট পরে ছিল।
স্পেন থেকে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার
ইসরায়েলের শীর্ষ কূটনীতিক বৃহস্পতিবার বলেছেন, তিনি গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের ‘আক্রোশজনক মন্তব্যের’ জন্য মাদ্রিদে নিযুক্ত তার দেশের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করছেন।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন টুইটারে বলেছেন, ‘আমি জেরুজালেমে পরামর্শের জন্য স্পেনে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে তলব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
সানচেজ এর আগে স্প্যানিশ পাবলিক টেলিভিশন টিভিইতে সাক্ষাৎকারের সময় বলেছিলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া। এটি ওই ‘অঞ্চলকে স্থিতিশীল করবে’ বলেও যুক্তি দিয়েছেন তিনি।
সমাজতান্ত্রিক এই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ইউরোপের স্বার্থে নৈতিক প্রত্যয় থেকে এই সমস্যাটির সমাধান করতে হবে। কারণ গাজায় যা হচ্ছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়।
সূত্র : এএফপি
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন