বিবিসির প্রতিবেদন ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের অভিযোগ মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের

৭ দিনের হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে অনেক বন্দি ও জিম্মি মুক্তি পেয়েছে। ইসরায়েলি কারাগার থেকে কিছু বন্দি মুক্তি পেয়ে নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে বন্দিদের নির্যাতনের কথা।

ফিলিস্তিনি মুক্তিপ্রাপ্ত কিছু এক বন্দি বলেছেন, ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলার চালানোর পর ইসরায়েলি কারারক্ষীরা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং সম্মিলিতভাবে শাস্তি দেওয়া শুরু করে।

তাদের বর্ণনা অনুয়াযী, লাঠি, কুকুর দিয়ে তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়। বন্দিদের ওপর টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপসহ এক নারীকে ধর্ষণের হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। সংবাদমাদ্যম বিবিসি মোট ছয়জনের সঙ্গে কথা বলেছে। যাদের সবাই বলেছে, জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার আগে তাদের মারধর করা হয়েছিল।

 

ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স সোসাইটি বলছে, কিছু কারারক্ষী হাতকড়া পরা বন্দিদের গায়ে প্রস্রাব করেছে, এমন অভিযোগও আছে। এদিকে গত সাত সপ্তাহে ইসরায়েলি হেফাজতে ছয় বন্দির মৃত্যুও হয়েছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 

াি

মোহাম্মদ নাজ্জাল বলেছেন, কারাগারে মারধরের সময় তার হাত ভেঙে গেছে। ছবি: বিবিসি

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে একজন আঠারো বছর বয়সী মোহাম্মদ নাজ্জাল।

তাঁকে গত আগস্ট মাসে কোনো অভিযোগ ছাড়াই নাফহা কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছিল। বিবিসর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরের উত্তরে জেনিনের কাছে কাবাতিয়া গ্রামে মোহাম্মদ নাজ্জারের বাড়ি।

 

বাড়িতে মোহাম্মদ তাঁর বাকি আত্মীয়দের সঙ্গে বসে ছিলেন। তাঁর উভয় হাতেই মোটা করে ব্যান্ডেজ বাঁধা। তিনি জানান, মুক্তির দশদিন আগে ইসরায়েলি কারারক্ষীরা একটি মাইক্রোফোন এবং স্পিকার নিয়ে তাঁর কারা কক্ষে এসেছিল।

বন্দিদের নাম চিৎকার করে হাততালি দিয়ে ডাকতে থাকে। মুহম্মদ বলেন, ‘যখন তারা দেখল আমরা জবাব দিচ্ছি না, তখন আমাদের মারতে শুরু করে।

 

তিনি আরো জানান, ‘বয়স্ক বন্দিদের রাখা হতো পিছনে আর তরুণদের সামনে। তারা আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে মারধর শুরু করে। আমি আমার মাথা রক্ষা করার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু আমার পা এবং আমার হাত ভাঙার চেষ্টা করছিল ওরা।’ গত সোমবার মুক্তি পাওয়ার পর মোহাম্মদকে যখন হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করানো হয়, তখন জানা যায়, আঘাতের কারণে তাঁর হাতে ফ্র্যাকচার হয়েছে। যুক্তরাজ্যের দুই ডাক্তারকে এক্সরে দেখানো হয়েছিল। তবে মোহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার এটা শুনে খুব অবাক হয়নি বলে জানান।

মোহাম্মদ বিবিসিকে বলেছেন, ‘শুরুতে আমি অনেক ব্যথা পেয়েছিলাম। তার কিছুক্ষণ পর বুঝলাম হাত ভেঙে গেছে। এরপর থেকে আমি হাত ব্যবহার বন্ধ করে দিই। শুধুমাত্র বাথরুমে গেলে ব্যবহার করতাম।’ তিনি আরো বলেছেন, অন্যান্য বন্দিরা তাঁকে খাওয়া থেকে শুরু করে সব কাজে সাহায্য করত। আবার মারধর করতে পারে, এই ভয়ে কারারক্ষীদের কাছে চিকিৎসা সহায়তা চাননি তিনি।

তবে ইসরায়েলে কারা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছে, কারাগার থেকে বের হওয়ার আগে তাকে একজন ডাক্তার পরীক্ষা করেছিল কিন্তু হাতে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। তারা একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে জেল থেকে বের হয়ে রেড ক্রসের একটি ঢুকতে দেখা যায় মোহাম্মদকে। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ভিডিওটি দেখে বোঝা যাবে তাঁর দাবিগুলো মিথ্যা। তবে ভিডিওতে তাঁকে হাত নাড়াতে দেখা যায়নি।

মোহাম্মদ বিবিসিকে বলেছিলেন, তিনি প্রথম চিকিৎসা পেয়েছিলেন সেই রেড ক্রসের বাসে। রামাল্লার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। হাসপাতাল থেকে তাঁকে বলা হয়,  ফ্র্যাকচার নিজে থেকে সেরে না গেলে একটি প্লেট লাগাতে হতে পারে। রেড ক্রসকে প্রশ্ন করা হলে তারা জানান, বন্দিদের বিষয়ে শুধু আমরা সরাসরি আটক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলি। 

মোহাম্মদ বলেন, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েলি কারাগারের ভেতরে রক্ষীদের আচরণ বদলে যায়। রক্ষীরা তাদের লাথি মারা শুরু করে। লাঠি ব্যবহারের পাশাপাশি একজন প্রহরী তার মুখের ওপর পা দিয়ে চেপে ধরে। তিনি বলেন, ‘তারা কুকুর নিয়ে এসেছিল। আমাদের পেছেনে ওই কুকুর ছেড়ে দেয় এবং মারধর শুরু করে। আমাদের জামাকাপড়, আমাদের বালিশ, বিছানা বের করে দেয়। খাবার মেঝেতে ছুড়ে ফেলে। এতে বন্দিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল।’

মোহাম্মদ তাঁর পিঠে এবং কাঁধে চিহ্নগুলো দেখিয়ে বলেন, ‘এগুলো মারধরের ফল। আক্রমণকারী কুকুরের নখ আমার সারা শরীরে চিহ্ন রেখে গেছে।’  বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের কর্মকাণ্ডের জন্য ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর প্রতিশোধ নিতে এমনটা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স সোসাইটির প্রধান আবদুল্লাহ আল-জাঘরি বিবিসিকে বলেছেন, অনেক বন্দি বাকি বন্দিদের মুখে, শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন। তাদের খুব বাজেভাবে মারা হয়েছে। হাতকড়া পরা বন্দিদের ওপর প্রস্রাব করার অভিযোগ উঠেছে করারক্ষীদের বিরুদ্ধে। আমরা ইসরায়েল প্রিজন সার্ভিসের কাছে এই অভিযোগের জবাব চেয়েছিলাম। তারা বলেছে, সমস্ত বন্দিকে আইন অনুযায়ী আটক করা হয়েছে এবং আইনগতভাবে প্রয়োজনীয় সমস্ত মৌলিক অধিকার পূরণ করা হয়েছে। 

ি্‌

মোহাম্মদ বিবিসিকে ইসরায়েলি বন্দিদশায় পাওয়া আঘাতে চিহ্ন দেখাচ্ছে। ছবি: বিবিসি

বিবৃতিতে ইসরায়েল আরো বলেছে, ‘আপনার করা দাবি সম্পর্কে আমরা অবগত নই। তবুও বন্দিদের অভিযোগ দায়ের করার অধিকার রয়েছে। সেটা করলে সরকার সম্পূর্ণভাবে তদন্ত করবে।’

এই সপ্তাহের শুরুতে ইসরায়েলি  কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া লামা খাতের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি  ভিডিও প্রকাশ করে অভিযোগ করেন, অক্টোবরের শেষের দিকে গ্রেপ্তারের পরপরই একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা তাকে ‘স্পষ্টভাবেই ধর্ষণের হুমকি’ দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে হাতকড়া পরানো হয়েছিল এবং চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল। তারা আমাকে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছিল...  এটা স্পষ্ট তারা আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছিল।’

এই অভিযোগের বিরুদ্ধে ইসরায়েল বলেছে, ‘এই দাবিগুলো লামা খাতেরের আইনজীবী করেছিল এবং বন্দি পরে নিজেই তা অস্বীকার করেন। কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল।’ কিন্তু লামা খাতের টেলিফোনে বিবিসিকে বলেন, ‘নারী বন্দিদের আসলেই ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছিল এবং ড্যামন কারাগারে তাদেরকে লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস ছোড়া হয়েছিল।’

ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স সোসাইটি বলেছে, ৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকে ইসরায়েলি হেফাজতে ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। সে দিন থেকে আজ পর্যন্ত ছয়জন জেলে মারা গেছে। ইসরায়েল এই বিষয়ে আমাদের প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেয়নি। তবে বলেছে, গত সপ্তাহে চারটি পৃথক তারিখে চারজন বন্দি মারা গেছে এবং  মৃত্যুর কারণ অজানা।

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন