ক্রিকেটীয় বিদ্বেষ ও ভারতের পরাজয়

প্রতিবেশি দেশ হিসেবে ভারত বিদ্বেষের প্রশ্ন অবান্তর। মমতা ব্যানার্জী যখন বাংলাদেশকে গঙ্গার পানি দিতে অস্বীকৃতি জানায়

রাজু আহমেদ।  কলামিস্ট।  জিবি নিউজ ||

ক্রিকেটে ভারতের সমর্থন না করা ভারত বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ-সম্প্রতি বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় নাট্যকারের সাক্ষাৎকারে এমনটাই উচ্চারিত হয়েছে। অন্যদেশের খেলার সমর্থনের সাথে আরেকদেশের সমর্থকদের সে দেশের প্রতি বিদ্বেষ-ভালোবাসা জড়িত এটা আধা আহাম্মকদের বচন হতে পারে। নিজ দেশের খেলার সময়েও যারা বিশেষ আরেকটি দেশকে সমর্থন করে তাদের ব্যাপারে দেশ বিদ্বেষের প্রশ্ন  উঠা স্বাভাবিক। ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট সমর্থনের প্রশ্নে এমন উম্মাদনা বারবার পরিলক্ষিত হয়েছে। 

 

আমরা সকল খেলার মধ্যে ক্রিকেটকে একটু বেশি ভালোবাসি। অন্য সব খেলার চেয়ে একটু ভালোও খেলি। সে ক্রিকেটে প্রতিবেশি দেশ যখন নো-বল বিতর্কে জড়ায়, ইচ্ছা করে মোস্তাফিজের বুকে সজোরে আঘাত করে, মাথায় অর্ধচুল কেটে আমাদেরকে ব্যঙ্গ করে তখন বাংলাদেশি সমর্থকদের আবেগে ধাক্কা লাগে। তাছাড়াও নিজ দেশ ছাড়া অন্যদেশের সমর্থনে প্রজন্মের মাঝে সমসাময়িক খেলোয়ারদের প্রভাব থাকে। সৌরভ, দ্রাবির, টেন্ডুলকারদের খেলা দেখে যে প্রজন্ম ভারতকে সমর্থন করত তাদের পরের প্রজন্ম বিরাট-রোহিতদের আচরণে ভালোবাসতে পারেনি। এমনকি উপমহাদের ক্রিকেটদলগুলোকে নিয়ে যে উম্মাদনা ছিল  তা অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের সৌন্দর্য ও ভদ্রতার দিকে আকর্ষিত হয়েছে। কোন দলকে সাপোর্ট করা বা না করার সাথে দেশপ্রেম বা দেশবিদ্বেষ গুলিয়ে ফেলা নিরেট বোকামি। 

 

প্রতিবেশি দেশ হিসেবে ভারত বিদ্বেষের প্রশ্ন অবান্তর। মমতা ব্যানার্জী যখন বাংলাদেশকে গঙ্গার পানি দিতে অস্বীকৃতি জানায় তখন বিরোধিতায় এবং যখন তিনি এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে সম্মুখে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে তখন প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছি। এ বিরোধিতার মমতা ব্যানার্জীর বিরুদ্ধে নয় বরং তার নীতির বিরুদ্ধ্বে। বিজেপির কোন নেতা কিংবা স্বয়ং নরেন্দ্রে মোদী যখন বাংলাদেশের স্বার্থীবিরোথী কোন কথা বলেছেন তখন বাংলাদেশের সেটার বিরুদ্ধে সরব উপস্থিতি-আন্দোলন হয়েছে। এটাতে ভারত বিদ্বেষ প্রমাণ করে না বরং তাদের নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান বোঝায়। 

 

অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপের শিরোপা বিজয়ে সমর্থকগোষ্ঠীর একাংশের আনন্দ ছিল। পরবর্তীতে ভারতের অনেক নেতৃবৃন্দ এটাকে ভারত বিদ্বেষ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এটা তাদের বড় দুঃখকে ছোট ব্যথা দিয়ে ঢেকে দেয়ার প্রয়াস। কিন্তু চঞ্চল চৌধুরী সে সুরে যেভাবে রঙ মিশিয়েছেন সেটা কোনভাবেই বুদ্ধিদৃপ্ত ভাষ্য ছিল না। তার কথায়, 'যারা ভারতের পরাজয়ে. অস্ট্রেলিয়ার জয়ে আনন্দ করেছেন তার ভারত বিদ্বেষী’-একজন ভারতীয় দলের ক্রিকেট সমর্থক হিসেবে এটার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। একটা দেশের ক্রিকেট দলের পরাজয়ে আনন্দ করলে কী পুরো দেশটা বিরোধী হয়ে যায় কেউ? অস্ট্রেলিয়া প্রিয় দল হতে পারবে না, পাকিস্তান ক্রিকেটকে সাপোর্ট করা যাবে না-এমন কথা বলা নিরেট মুর্খামি। যারা ভারতের সমর্থন করে না তারা চুপ থাকবে-এমন আশা মানুষ কেমনে আশা করে?

 

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, যারা ভারতের হারে নেচেছে তারা হিন্দি গানের সাথেই নেচেছে, যে  চ্যানেল থেকে খেলা দেখেছে সেটাও হিন্দি কোন চ্যানেল নয়তো ভারতের মালিকানাধীন। এই মানুষগুলোই খেলা দেখার পর রাত জেগে হিন্দি কিংবা দক্ষিণ ভারতের সিনেমা দেখবে। তাদের পছন্দের নায়কের নাম সালমান কিংবা শাহরুখ। জীবনে যতগুলো গান শুনেছে তার বেশিরভাগ হিন্দি। বেড়াতে যাওয়ার প্রশ্নে তাদের পছন্দ দার্জিলিং। তাই বলে এদের সবাইকে কী ভারত প্রেমী বলা যাবে? জনাব চৌধুরী কি একবারও সেটা বলেছেন? অথচ তিনি ক্রিকেটের সমর্থন প্রশ্নের এখানে বিদ্বেষ দেখলেন! কিছুটা হাস্যকর বটে! বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্রিকেট দর্শক-সমর্থক ভারতের ক্রিকেটকে পছন্দ করে অথচ সে কথা জনাব চৌধুরি সেভাবে হাইলাইটস করেনি।  বিদ্বেষ-ভালোবাসার প্রশ্ন অবান্তর!

 

ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফুটবলের সমর্থন প্রশ্নে গোটা বাংলাদেশ বিভক্ত হয়ে যায়। মারামারি এমনকি খুনোখুনি পর্যন্ত হয়। ক্রিকেট নিয়ে ততোটা উম্মাদনা এখনো নাই তবে সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেট নিয়ে বাজি ধরার প্রবণতা লক্ষণীয় হয়েছে। এটায় কোন দলকে সমর্থনের চেয়েও টাকা খোয়ানো কিংবা টাকা কামাই প্রধাণ্য পায়। কাজেই সমর্থনের ব্যাপারকে কোন দেশের প্রতি বিদ্বেষ আখ্যা দিয়ে লড়াই বাধাবেন না। কারো কাছে ভালো সাজতে গিয়ে সম্পর্কটাকে আরও খারাপ করে তোলা উচিত হবে না। প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। তাই বলে ক্রিকেটে কে সমর্থন করে আর কে সমর্থন করে না সেই বিশ্লেষণে গিয়ে সম্পর্কের অসমতা করা ঠিক নয়। বরং ভারতের বহু  খেলোয়ার, দর্শক-সমার্থক বাংলাদেশের ক্রিকটকে অবজ্ঞা করে সেই অভিযোগ আমরা তুলতে পারি। কিন্তু তাই বলে ভারতের বাংলাদেশ বিদ্বেষ  বাড়ছে সেই অযৌক্তিক দাবি করতে পারি না।

 

 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন