গত সপ্তাহে সাত দিনের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সোমবার গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে বর্ধিত স্থল অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল।
৭ অক্টোবর গাজা থেকে হামাস যোদ্ধারা দক্ষিণ ইসরায়েলে একটি নজিরবিহীন হামলা চালায়। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মতে, সেখানে প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত এবং প্রায় ২৪০ জন জিম্মি হয়। জবাবে ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে বিমান, সমুদ্র এবং স্থল আক্রমণ শুরু করে।
হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুসারে, এতে প্রায় ১৫ হাজার ৯০০ মানুষ নিহত হয়েছে।
এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতির সময় হামাস ৮০ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে ২৪০ ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে মুক্তি দেয়। আরো ২৫ জন জিম্মিকে চুক্তির বাইরে মুক্ত করা হয়েছিল, যাদের বেশির ভাগ থাই নাগরিক।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজায় এখনো ১৩৭ জনকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে।
যুদ্ধের ৫৯তম দিনে গত ২৪ ঘণ্টার পাঁচটি উল্লেখযোগ্য খবর :
দক্ষিণ গাজায় ট্যাংক
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সোমবার ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো অঞ্চলটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খান ইউনিসের কাছে দক্ষিণ গাজায় প্রবেশ করেছে।
ইসরায়েল তার কার্যক্রম সম্প্রসারিত করার সঙ্গে সঙ্গে সাঁজোয়া যান এবং বুলডোজারও দেখা গেছে।
গাজার বাসিন্দা আমিন আবু হাওলি বলেন, ইসরায়েলি যানবাহনগুলো খান ইউনিসের কাছে আল-কাররা গ্রামে গাজার ‘দুই কিলোমিটার ভেতরে’ ছিল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা দক্ষিণ শহরে ‘হামাস ও অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠনের’ বিরুদ্ধে ‘আক্রমণাত্মক’ পদক্ষেপ নিচ্ছে।
‘অসহনীয় কষ্ট’
রেড ক্রসের ইন্টারন্যাশনাল কমিটির সভাপতি সোমবার জানিয়েছেন, তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় পৌঁছেছেন। সেখানকার দুর্ভোগ ‘অসহনীয়’ বলে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন।
মিরজানা স্পোলজারিক টুইটারে বলেছেন, ‘আমি যুদ্ধের আইনের সঙ্গে সংগতি রেখে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষিত করার জন্য এবং বিনা বাধায় সহায়তা প্রবেশের জন্য আমাদের জরুরি আহ্বানের পুনরাবৃত্তি করছি।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘জিম্মিদের মুক্তি দিতে হবে এবং আইসিআরসিকে তাদের নিরাপদে দেখার অনুমতি দিতে হবে।’
ইসরায়েল স্থায়ীভাবে বাস্তুচ্যুত করার ‘চেষ্টা করছে না’
সামরিক মুখপাত্র জোনাথন কনরিকাস বলেছেন, ‘ইসরায়েল কাউকে বাস্তুচ্যুত করার চেষ্টা করছে না, আমরা কাউকে স্থায়ীভাবে কোথাও সরানোর চেষ্টা করছি না।
’
অনেক ফিলিস্তিনি তাদের সাত লাখ ৬০ হাজার মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছে, যা ৭৫ বছর আগে ইসরায়েলের সৃষ্টির দিকে পরিচালিত যুদ্ধের সময় হয়েছিল।
আল-মাওয়াসি নামের একটি ক্ষুদ্র উপকূলীয় এলাকা উল্লেখ করে কনরিকাস বলেন, ‘আমরা গাজা উপত্যকার অভ্যন্তরে একটি মনোনীত মানবিক অঞ্চল প্রদান করেছি।’
জাতিসংঘের অধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, গাজার কয়েক হাজার বাসিন্দা দক্ষিণে ‘অত্যন্ত ছোট এলাকায় সীমাবদ্ধ’ হয়ে পড়েছে।
ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত উত্তেজনা
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী রবিবার বলেছে, তাদের বিমান ও কামান বাহিনী সীমান্তজুড়ে ‘বেশ কয়েকটি হামলার’ প্রতিক্রিয়া হিসেবে লেবাননে আঘাত করেছে।
লেবাননের ইরান-সমর্থিত ও হামাসের মিত্র হিজবুল্লাহ গ্রুপ বলেছে, তারা ইসরায়েলের একটি ‘সামরিক যানের’ ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলাসহ কমপক্ষে পাঁচটি হামলা চালিয়েছে।
লেবাননের সরকারি গণমাধ্যম বলেছে, ‘শত্রুদের আর্টিলারি শেলিং’ এবং ভারী বোমা হামলা সীমান্ত গ্রামগুলোতে আঘাত হেনেছে। এ ছাড়াও অন্তত একটি ‘শত্রু ড্রোন’ দিয়ে বিমান হামলার খবর দিয়েছে।
জাহাজে ইয়েমেনের বিদ্রোহীদের হামলা
ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা রবিবার বলেছে, তারা ইয়েমেনি উপকূলে ‘দুটি ইসরায়েলি জাহাজে’ আক্রমণ করেছে, গাজা যুদ্ধের জন্য জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
হুথিরা বলেছে, তারা বাব আল-মান্দাব প্রণালিতে জাহাজ আক্রমণ করেছে। পানিপথটি লোহিত সাগরকে এডেন উপসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।
একজন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, ওয়াশিংটন লোহিত সাগরে হামলার বিষয়ে ‘প্রতিবেদন সম্পর্কে অবগত’। এর কয়েক ঘণ্টা আগে একটি সামুদ্রিক নিরাপত্তা গোষ্ঠী বলেছিল, যুক্তরাজ্যের মালিকানাধীন একটি জাহাজ রকেটের আঘাতে পেয়েছে বলে জানা গেছে।
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন