যুক্তরাজ্য যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর সিলেটের তরুণরা। কেউ যাচ্ছেন স্টুডেন্ট ভিসায়, আবার কেউ ছুটছেন ওয়ার্কপারমিট ও কেয়ার গিভার ভিসায়। যাওয়ার সময় সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন স্পাউস ও সন্তানদের। গেল তিন বছরে সিলেট থেকে কয়েক হাজার তরুণ এই তিন ক্যাটাগরির ভিসা নিয়ে গেছেন যুক্তরাজ্যে। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের নতুন ভিসানীতি কঠোর করায় অনেকের যুক্তরাজ্য যাওয়ার স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। নতুন ভিসানীতি অনুযায়ী আগামী বছরের শুরু থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বেতন ছাড়া স্পাউস সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবেন না কেয়ার গিভার ভিসাধারীরা। আর স্নাতকোত্তর গবেষক ছাড়া স্টুডেন্ট ভিসায় কেউ স্পাউস নিয়ে যেতে পারবেন না যুক্তরাজ্যে। ফলে স্পাউস নিয়ে যারা যুক্তরাজ্যে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
শিক্ষা ভিসানীতি শিথিল করায় গত কয়েক বছর থেকে সিলেট থেকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে পড়তে যাচ্ছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ স্পাউস সঙ্গে নিয়ে যান। কিন্তু বেশির ভাগ শিক্ষার্থী সেখানে গিয়ে পড়ালেখা না করে ওয়ার্কপারমিটে ভিসা ক্যাটাগরি পরিবর্তন করেন। আবার কেউ কেউ অবৈধভাবে যুক্তরাজ্য ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমান। ফলে গত সেপ্টেম্বর সেমিস্টারের পর যুক্তরাজ্যের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় সিলেটের শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি বন্ধ করে দেয়। এর পরও যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার উন্মুক্ত ছিল সেগুলোতে ভর্তির চেষ্টা করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু গত ১৯ জুলাই যুক্তরাজ্যের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ, হোম অফিস অভিবাসন আইনে বিশাল পরিবর্তন আনে। নতুন আইনে ঘোষণা দেওয়া হয় ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে স্নাতকোত্তর কোর্সের শিক্ষার্থীরা যুক্তরাজ্যে স্পাউস নিয়ে আসতে পারবেন না। কেবলমাত্র যারা পিএইচডি করতে যাবেন তারা সঙ্গে স্পাউস নেওয়ার সুযোগ পাবেন। এই ঘোষণার পর থেকে স্পাউস সঙ্গে নিয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স করতে যুক্তরাজ্যে যেতে আগ্রহী সিলেটের শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ফিকে হয়ে আসে। স্পাউস ও সন্তান সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকায় অনেকে শিক্ষাভিসার পরিবর্তে
ঝোঁকেন ‘কেয়ার গিভার’ ভিসায়। গেল প্রায় এক-দেড় বছরে সিলেট থেকে কয়েক হাজার লোক কেয়ার গিভার ভিসায় যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান।
এদিকে স্পাউস নিয়ে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার শেষ সম্ভাবনাও কালো মেঘে ঢেকেছে সর্বশেষ ভিসানীতি ঘোষণায়। সম্প্রতি ঘোষিত যুক্তরাজ্যের নতুন ভিসানীতিতে স্পাউস সঙ্গে নেওয়ার ব্যাপারে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে কেয়ার গিভার ভিসায় যে কেউ চাইলেই স্পাউস সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে পারবেন না। এজন্য ন্যূনতম বেতনের সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি জানিয়েছেন, দক্ষ বিদেশি কর্মীদের ভিসা পেতে হলে ন্যূনতম ৩৮ হাজার ৭০০ পাউন্ড আয় করতে হবে।
বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৫৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। বর্তমানে এই আয়ের সীমা হচ্ছে ২৬ হাজার পাউন্ড বা ৩৬ লাখ ২৩ হাজার টাকা প্রায়। যুক্তরাজ্যের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে অভিবাসী প্রবেশ ব্যাপক হারে বেড়েছে। ২০২২ সালে দেশটিতে নতুন অভিবাসীর সংখ্যা ছিল রেকর্ড ৭ লাখ ৪৫ হাজার। এটি যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতেও বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে।
চাপের মুখে থাকা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরম এক্সে বলেছেন, ‘অভিবাসী অনেক বেশি। এটিকে নামিয়ে আনার জন্য আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি। অভিবাসন যেন যুক্তরাজ্যের জন্য সবসময় উপকারী হয়, তা নিশ্চিত করবে এই পদক্ষেপগুলো।’
সিলেটে কেয়ার গিভার ভিসা প্রসেসকারী প্রতিষ্ঠান জেড অ্যান্ড এস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী জুবের আহমদ জানান, নতুন ভিসানীতির কারণে কেয়ার গিভার ভিসায় যারা স্পাউসসহ যেতে চাইছেন তারা মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন। অনেকে স্পাউসসহ যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য প্রসেসিংও শুরু করেছেন। কেউ কেউ আইইএলটিএস করছেন। কিন্তু নতুন ভিসানীতিতে তাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন