ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজার চরম দুর্দশায় বিপর্যস্ত জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘আমরা গাজায় বিপর্যয়ের প্রান্তে আছি। সে কারণেই গাজার বিষয় নিয়ে ভোট দিতে জাতিসংঘের আর্টিকল ৯৯ ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছি।’ গত বশ কয়েক মেয়াদের কোনো মহাসচিব এ উদ্যোগ নেননি।
অন্যদিকে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি রিয়াদ মনসুর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বলেছেন, ইসরায়েলের উদ্দেশ্য পরিষ্কার।
তারা গাজার মানুষকে জোর করে এলাকা থেকে বের করে দিতে চায়।
আর্টিকল ৯৯ ব্যবহার করে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার হুমকির বিষয়ে নিজ উদ্যোগে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকতে পারেন। বিশেষ এই ক্ষমতাবলেই গতকাল গাজায় যুদ্ধবিরতি দিতে নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠক ডাকেন গুতেরেস।
নিরাপত্তা পরিষদে গাজা নিয়ে নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভোটাভুটি শুরু হওয়ার কথা।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ওয়াশিংটনে আরব নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ব্যস্ত থাকার কারণে ভোটাভুটির সময় পেছানো হয়। গুতেরেসের আহ্বানে গাজায় অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতি দিতে আরবসহ মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত একটি খসড়া প্রস্তাব দেয়।
গুতেরেস বলেন, ইসরায়েলে হামাসের সংঘটিত ৭ অক্টোবরের বর্বরতা ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর সম্মিলিত শাস্তিকে কখনোই ন্যায্যতা দিতে পারে না। হামাসের হামলা ইসরায়েলকে তার নিজের মানবিক আইন লঙ্ঘন থেকে অব্যাহতি দেয় না।
তিনি ‘শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের জন্য একমাত্র কার্যকর সম্ভাবনা’ হিসেবে একটি দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের কথাও বলেন।
ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ক্রমাগতভাবে যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বানের বিরোধিতা করে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছিল, গতকাল বাংলাদেশ সময় গভীর রাতের ভোটের সময়ও তারা যুদ্ধবিরতির বিরুদ্ধে রায় দেবে। নিরাপত্তা পরিষদের অন্যতম স্থায়ী সদস্য ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত বলেন, এ নিয়ে আলোচনার জন্য আরো সময় দরকার, যাতে আগের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে এটিও ব্যর্থ না হয়। জাতিসংঘের আলোচনায় ফিলিস্তিনি দূত রিয়াদ মনসুর বলেন, ইসরায়েল গাজাকে সবার জন্য বসবাসের অযোগ্য করে তুলবে এবং মানুষকে বাস্তুচ্যুত করবে।
মনসুর আরো বলেন, তিনি মনে করেন ইসরায়েল গাজার জনগণকে দক্ষিণে ঠেলে দিচ্ছে এবং শেষ পর্যন্ত এ অঞ্চলে পূর্ণ আক্রমণ শুরু করবে। তবে জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান দৃঢ়ভাবে যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তিনি জাতিসংঘে বলেন, ‘একটি যুদ্ধবিরতি গাজার ওপর হামাসের নিয়ন্ত্রণকে শক্তিশালী করবে এবং এই বার্তা পাঠাবে যে হামাসকে তাদের পরিকল্পিত নৃশংসতা সত্ত্বেও ক্ষমা করা হচ্ছে।’
ব্লিনকেনের চাপ
যুদ্ধের মধ্যে গাজার সাধারণ মানুষের সুরক্ষায় ইসরায়েলকে আরো বেশি কিছু করার চাপ দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। তিনি বলেছেন, গাজার মানুষের সুরক্ষায় ইসরায়েল যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, বাস্তবের সঙ্গে তার ফারাক দেখা যাচ্ছে।
ভেঙে পড়েছে গাজার সমাজ
যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ আর ক্ষুধার তাড়নায় মরিয়া হয়ে উঠেছে গাজার মানুষ। গাজায় জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার পরিচালক টমাস হোয়াইট সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, গাজার সমাজ পুরোপুরি ভেঙে পড়ার মুখে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেছেন, গাজার সড়কগুলো বন্য এলাকার মতো মনে হয়, বিশেষ করে রাতের অন্ধকারে।
যুবকদের আটকের ভিডিও ফুটেজ
গাজা উপত্যকার খান ইউনিস শহর ঘিরে ও উত্তর গাজায় তুমুল যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধের মধ্যেই ফিলিস্তিনি যুবকদের অর্ধনগ্ন করে ধরে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এই যুবকদের গাজার বেইত লাহিয়া এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র আইলন লেভি বলেছেন, ওই যুবকদের উত্তর গাজার জাবালিয়া ও শেজাইয়াতে আটক করা হয়েছিল। একে তিনি হামাসের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, ‘আমরা সামরিক বয়সী পুরুষদের কথা বলছি। তাদের এমন এলাকায় পাওয়া গেছে যেখান থেকে বেসামরিক লোকদের কয়েক সপ্তাহ আগেই সরে যাওয়ার কথা ছিল। কে প্রকৃতপক্ষে হামাস সন্ত্রাসী এবং কে নয়—তা বের করার জন্য তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
সূত্র : এএফপি ও বিবিসি
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন