ইসরায়েলি সামরিক অভিযান দক্ষিণ গাজায় সম্প্রসারিত হওয়ায় অতীতের মতো স্থায়ীভাবে বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা করছে অনেক ফিলিস্তিনি। এদিকে দোহা সম্মেলনে অংশ নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে অকার্যকর আখ্যা দিয়েছেন মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এদিকে ইসরায়েলের হামলা জোরদার হওয়ায় নতুন যুদ্ধবিরতির সুযোগ কমে আসছে বলেও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে কাতার।
গাজার বিভিন্ন স্থানে গতকাল রবিবারও হামাসের যোদ্ধাদের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর তুমুল লড়াই হয়েছে।
হামাসের সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেডস জানিয়েছে, উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থীশিবির ও আল-ফালুজা এলাকায় ইসরায়েলি সেনাদের ওপর হামলা চালিয়েছে তারা। আরেক সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের সামরিক শাখা আল-কুদস ব্রিগেডস খান ইউনিস শহরে ইসরায়েলি বাহিনীকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ার কথা বলেছে।
ইসরায়েল বেসামরিক লোকজনকে খান ইউনিসের কেন্দ্র থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। একজন সেনা কর্মকর্তা বলেছেন, তিনি চান না ‘কঠিন লড়াইয়ের’ মধ্যে বেসামরিক নাগরিকরা সেখানে আটকা পড়ুক।
খান ইউনিসের একজন প্রত্যক্ষদর্শী ক্রমাগত গোলাবর্ষণ এবং ভয়াবহ যুদ্ধের মধ্যে শহরের কেন্দ্রস্থলে ‘সন্ত্রাস ও ভয়ের’ কথা বলেছেন। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রধান এর আগে তাঁর সেনাদের ‘আরো জোরে চাপ দিতে’ বলেছিলেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলের শত্রু হামাসের গুঁড়িয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ইসরায়েলি অভিযানে গতকাল রাত পর্যন্ত ১৭ হাজার ৭০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
এর মধ্যে সাত হাজারের বেশি শিশু।
বাস্তুচ্যুতির ভয়ে ফিলিস্তিনিরা
ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়া ফিলিস্তিনিরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সম্প্রসারিত হওয়ায় তাদের অনেকে স্থায়ীভাবে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে। ওই ফিলিস্তিনিদের ধারণা, ইসরায়েলি অভিযান অব্যাহত থাকলে মিসর সীমান্ত পেরোনো ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না তাদের কাছে। ইসরায়েলি হামলা থেকে বাঁচতে তথাকথিত নিরাপদ এলাকা আল-মাওয়াসিতে আশ্রয় নিয়েছে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি।
সেখানে অবস্থান করা বাস্তুচ্যুত ইয়াসের আবু আসি বলেন, ‘আমাদের সমাধান প্রয়োজন। তিন সপ্তাহের মধ্যে খাবার, ওষুধ ও চিকিৎসার অভাবে লোকজন মারা যাবে।’
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা বলেছে, ইসরায়েলি হামলার মুখে মিসর সীমান্তসংলগ্ন রাফাহ এলাকায় বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছে। সংস্থাটির অভিযোগ, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের গণহারে বাস্তুচ্যুত করে মিসরে পাঠানোর পরিস্থিতি তৈরি করছে ইসরায়েল।
নিরাপত্তা পরিষদ অকার্যকর : গুতেরেস
গাজায় যুদ্ধবিরতির আহবান জানিয়ে তোলা প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে আবারও ব্যর্থ হওয়ায় পরিষদকে অকার্যকর আখ্যা দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
গতকাল দোহা ফোরামে অংশ নিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ‘ভূ-কৌশলগত বিভাজনের কারণে সংঘাত নির্মূল না হওয়ায় নিরাপত্তা পরিষদ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। যুদ্ধবিরতির আহবান জানাতে বিলম্ব করায় পরিষদের কর্তৃত্ব ও বিশ্বাসযোগ্যতা গুরুতরভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। আমি মানবিক যুদ্ধবিরতির আহবান পুনর্ব্যক্ত করছি।’
দোহা ফোরামে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল থানি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে অন্য অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা হাল ছাড়ব না।’
এর আগে দুই দফায় সাত দিনের একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে প্রধান মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছিল কাতার। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেন, অব্যাহত বোমাবর্ষণ যুদ্ধবিরতির পথকে সংকুচিত করছে।
আরো দুই মাস স্থায়ী হতে পারে যুদ্ধ
ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দেশটির সম্প্রচার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধ আরো দুই মাস স্থায়ী হতে পারে। এই সময়ে কোনো যুদ্ধবিরতি হবে না। তবে বাকি জিম্মিদের মুক্ত করতে সমঝোতার চেষ্টাও করা হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্বেগ
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গাজায় স্বাস্থ্যসেবার একটি ‘বিপর্যয়কর’ পরিস্থিতি বর্ণনা করেছে। সংস্থাটি বলেছে, সেখানে রোগ ছড়িয়ে পড়ার জন্য ‘আদর্শ’ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
সূত্র : আলজাজিরা, এএফপি
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন