সিলেটের হরিপুরের পর বাঘের সড়কে মিললো তেলের খনি

সিলেটে আরও গ্যাস ও তেলের মজুদ পাওয়া গেছে। সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের আওতাধীন ১০ নম্বর কূপে (অনুসন্ধান কূপ) গ্যাসের পাশাপাশি জ্বালানী তেলেরও সন্ধান পাওয়া গেছে। সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নের বাঘের সড়ক এলাকায় এ কূপের অবস্থান।


কূপের তিনটি স্তরে বিপুল পরিমাণ গ্যাস ও একটি স্তরে তেলের মজুদের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

 

 


রবিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ তথ্য দেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে নতুন কূপ থেকে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ ব্যারেল তেল উত্তোলন সম্ভব হবে। বর্তমানে এটিই দেশের একমাত্র তেলকূপ। এর আগে সিলেটের হরিপুরে আরেকটি তেলকূপের সন্ধান পাওয়া গেলেও ৫ বছর উত্তোলনের পর এটি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে সিলেটে ১৩টি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে।


জানা গেছে, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড (এসজিএফএল) এর আওতাধীন ১০ নম্বর কূপটি প্রায় দু’বছর আগে খনন শুরু হয়। কূপটি ২ হাজার ৫৭৬ মিটার গভীরতায় খনন করা হয়। খনন কাজ শেষে কূপটির চারটি স্তরে তেল ও গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়।


এর মধ্যে তিনটিতে গ্যাস ও একটিতে জ্বালানী তেন। কূপটির ২ হাজার ৫৪০ মিটার থেকে ২ হাজার ৫৫০ মিটার পর্যন্ত গভীরতা পরীক্ষা করে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রবাহ পাওয়া যায়। যার ফ্লোয়িং প্রেসার ৩ হাজার ২৫০ পিএসআই। কূপের ওই স্তরে ৪৩ থেকে ১০০ বিলিয়ন গ্যাস মজুদ আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  

 


এছাড়া কূপের ২ হাজার ৪৬০ থেকে ২ হাজার ৪৭৫ মিটার গভীরে গ্যাসের আরও একটি ভালো স্তর পাওয়া যায়। ওই স্তরে আরও ২৫ থেকে ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে আশা প্রকাশ করেন জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী। আর ২ হাজার ২৯০ থেকে ২ হাজার ৩১০ মিটার গভীরে গ্যাসের আরেকটি স্তরের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।


সূত্র জানায়, সিলেট-১০ নম্বর কূপে তিনটি স্তরে গ্যাস পাওয়ার পাশাপাশি একটি স্তরে জ্বালানী তেলেরও মজুদ পাওয়া গেছে। তেলের এই স্তরটি কূপের ১ হাজার ৩৯৭ থেকে ১ হাজার ৪৪৫ মিটার গভীরতায়। গত শুক্রবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কূপের মধ্যে তেলের স্তরের উপস্থিতির ব্যাপারে নিশ্চিত হন সংশ্লিষ্টরা।


জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী জানান, এই স্তরের প্রাথমিক এপিআই গ্রাভিটি ২৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি। সেলফ প্রেসারে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫ ব্যারেল (১৫৯ লিটার) তেলের প্রবাহ পাওয়া যায়। পরীক্ষা সম্পন্ন হলে কূপটির ওই স্তরে কি পরিমাণ তেল মজুদ আছে তা জানা যাবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। কূপে কী পরিমাণ তেল মজুদ আছে তা নিশ্চিত হতে আরও চার থেকে পাঁচ মাস সময় অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

 


প্রতিমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে আরও জানান, ২ হাজার ৪৬০ মিটার থেকে ২ হাজার ৫৪০ হিসেবে এর মূল্য ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর ২০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে উৎপাদন করা হলে কূপটি ১৫ বছরের অধিক সাসটেইন করবে।


সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আরও জানান, প্রথম দিন কূপটি থেকে ২ ঘন্টায় ৭০ ব্যারেল তেল উত্তোলন হয়েছে। তবে এখন তেল উত্তোলন আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। কারণ উত্তোলনের আগে মজুদের ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে হবে। মজুতের বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে।


উত্তোলিত তেল ঢাকায় পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী ২০ বছর এই কূপ থেকে জ্বালানী তেল উত্তোলন করা সম্ভব হবে।

 


এসজিএফএল সূত্র জানায়, বর্তমানে সিলেটের ১৩টি কূপ থেকে গ্যাস  উত্তোলিত হচ্ছে। এসজিএফএল’র আওতাধীন কূপগুলো থেকে প্রতিদিন প্রায় ৯৮ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করে সারাদেশে সরবরাহ হচ্ছে। কূপগুলো থেকে গ্যাসের সাথে উপজাত হিসেবে কনডেনসেড উত্তোলিত হয়। পরে কনডেনসেড পরিশোধন করে জ্বালানী তেলে রূপান্তরিত হয়ে থাকে। এবার সিলেট-১০ নম্বর কূপে পাওয়া গেছে তেলের সন্ধান।

 


কূপটি থেকে সরাসরি জ্বালানী তেল উত্তোলিত হবে। এর আগে ১৯৮৬ সালে দেশে প্রথম তেলের সন্ধান পাওয়া যায় হরিপুরে। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত কূপটি থেকে জ্বালানী তেল উত্তোলন হয়। ওই সময় এপিআই গ্র্যাভিটি ২৭ ডিগ্রি ছিল। এবার হরিপুরের নিকটবর্তী গোয়ইনঘাটের বাঘের সড়ক এলাকায় পাওয়া কূপে প্রাথমিকভাবে এপিআই গ্র্যাভিটি ২৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি পাওয়া গেছে।

 


এসজিএফএল সূত্র আরও জানায়, সিলেটের ১৩ ও ১৪ নম্বর তেল-গ্যাস ব্লকে অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধান শেষ হলে আরও ৪-৫টি গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কারে সম্ভাবনা রয়েছে। থ্রিমাত্রিক জরিপ শেষ হলে সিলেট বিভাগের ঢুপিটিলা, বাতচিয়া, হারারগঞ্জ ও সিলেট সাউথে নতুন ফিল্ড আবিস্কারের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন