টাওয়ার হ্যামলেটস-এর কার ফ্রি জোনে গাড়ি পার্কিং এর ক্ষেত্রে নতুন কিছু সুবিধা সম্বলিত অনন্য এক পার্কিং পলিসি ঘোষণা করেছেন নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান। এ সপ্তাহের কেবিনেট মিটিংয়ে পার্কি নীতিমালায় আনা বৈপ্লবিক সংস্কার অনুমোদন লাভ করে।
৮ ডিসেম্বর শুক্রবার টাউন হলে আয়োজিত এক মিডিয়া বিফ্রিং-এ পার্কিং পলিসিতে আনা সংস্কারের বিস্তারিত তুলে ধরেন নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান।
একই বিফ্রিং-এ তিনি কাউন্সিলের নতুন দু’টি অনুদান কর্মসূচি – স্মল গ্রান্টস প্রোগ্রাম এবং ইমার্জেন্সি গ্রান্টস প্রোগ্রাম চালুর কথা জানান। মেয়র বলেন, “কাউন্সিল স্মল গ্র্যান্টস প্রোগ্রাম (ক্ষুদ্র অনুদান কর্মসূচি) এবং রিফ্রেশড ইমার্জেন্সি গ্র্যান্টস প্রোগ্রাম চালু করেছে। বছরে ৮ লাখ পাউন্ড করে ৩ বছরে ২.৪ মি অনুদান দেয়া হবে। বলেন, আগামী সাড়ে তিন বছরে আমরা মেয়রের কমিউনিটি গ্রান্ট প্রোগ্রাম (বার্ষিক ৩.৫ মিলিয়ন পাউন্ড), স্মল গ্রান্টস প্রোগ্রাম (প্রতি বছর ৮০০ হাজার পাউন্ড) এবং জরুরী তহবিল (বার্ষিক ১০০ হাজার পাউন্ড) এর মাধ্যমে ভিসিএস (ভলান্টিয়ার এন্ড কমিউনিটি সেক্টর) খাতে ১৫.৪ মিলিয়ন পাউন্ড প্রদান করবো।
কার ফ্রি জোনে নতুন সুবিধার অনন্য পলিসিঃ
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের কেবিনেট মিটিংয়ে পার্কিং নীতিতে দুর্দান্ত কিছু সংস্কার পাস হয়েছে।
বারার হাউজিং ওয়েটিং লিস্টে থাকা লোকজনের সংখ্যা কমিয়ে আনা এবং ওভার ক্রাউডিং সমস্যা মোকাবেলা সহ বাসিন্দাদের চলাফেরায় আরও স্বাচ্ছন্দ্য আনতে, বিশেষ করে গাড়ি পার্কিং নিয়ে বাসিন্দাদের দুর্ভোগ লাঘবের কথা চিন্তা করে কাউন্সিলের পার্কিং পলিসিতে বৈপ্লবিক সংস্কার আনা হয়েছে।
৮ ডিসেম্বর শুক্রবার টাউন হলে আয়োজিত বিশেষ মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এই সংস্কারের বিশদ বিবরণ তুলে ধরে টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র বলেন, “পার্কিং পলিসি বা নীতিমালা কারো কারো কাছে কিছুটা কঠিন বা ঠাসাঠাসি মনে হতে পারে। কেবিনেট মিটিংয়ে অনুমোদন পাওয়া পার্কিং নীতির সংস্কারগুলি বারার অনেক বাসিন্দা এবং তাদের পরিবারের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করা করছি।”
মেয়র বলেন, পার্কিং নীতিমালায় আনা এই সংস্কারগুলি সহ, অন্যান্য উদ্যোগ দেশের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ জনপদ টাওয়ার হ্যামলেটস্ বারায় ওভারক্রাউডিং সমস্যা (প্রয়োজনের তুলনায় কম সংখ্যক রুমের ঘরে বেশি সংখ্যক লোকের বাস) কমাতে সাহায্য করবে। আমাদের এই বারায় বর্তমানে প্রায় ২৩ হাজার লোক আবাসনের অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছেন।
তিনি বলেন, আগের পার্কিং নীতির কারণেই এই বারায় ওভারক্রাউডিং সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে। বাসিন্দারা কার ফ্রি জোনে ঘরের জন্য বিড করছিলেন না এই কারণে যে, তারা সেখানে গেলে পারমিট ট্রান্সফার স্কিম (পিটিএস) এর অধিকারী হবেন না। নতুন সংস্কারের ফলে এখন থেকে বাসিন্দারা কার ফ্রি জোনের ঘরের জন্যও বিড করতে দ্বিধাবোধ করবেন না, যা ওভারক্রাউডিং সমস্যার সমাধানে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে।
মিডিয়া ব্রিফিংয়ের সময় ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলর মাইয়ুম মিয়া তালুকদার এবং হেড অব মেয়র অফিস এমি জ্যাকসন সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কেবিনেট মিটিংয়ে অনুমোদন পাওয়া পাকিং নীতির সংস্কার গুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
আগের পার্কিং পলিসি অনুযায়ী, পিটিএস (পারমিট ট্রান্সফার স্কিম)—এর জন্য যোগ্যতা অর্জনের জন্য একজন বাসিন্দার একটানা ১২ মাসের গাড়ির মালিকানা এবং একটি বিদ্যমান পারমিটের প্রয়োজন ছিল। নতুন সংস্কার অনুযায়ি এই নিয়ম বাতিল করা হয়েছে, যা অনেক বেশি নমনীয়তার সুযোগ দিয়েছি। যদি একটি পরিবারের গাড়ির মালিকানা থেকে বিরতি নেওয়ার প্রয়োজন হয়, কিংবা কার ফ্রি জোনের কোন ফ্ল্যাটে চলে যায়, তাহলেও তারা পার্কিং পারমিটের অধিকার বজায় রাখতে পারবে।
পুরানো নিয়মের অধীনে, যদি আপনার বিদ্যমান পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় এবং আপনি বারার কোন একটি কার ফ্রি জোনে বসবাস করেন, তাহলে ২৮ দিনেরই মধ্যেই পারমিট রিনিউ বা নবায়ন করতে হতো। নতুন নিয়মে এই ক্যাপ সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
আগের নিয়ম অনুযায়ি, কার ফ্রি জোন পারমিট গুলো শুধুমাত্র ৩ বা ততোধিক বেডরুমের ফ্লাটে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে দেওয়া হত। নতুন নিয়মে সেটিকে ২ বেডরুমে কমিয়ে আনা হয়েছে।
টাওয়ার হ্যামলেটস-এর ওভারক্রাউডিং সমস্যার আরেকটি অংশ হচ্ছে আন্ডার—অকুপেন্সি (অর্থাৎ ৩ বেডরুমের ঘরে ২ জন লোক বসবাস করে)। দুই বা ততোধিক বেডরুমের ফ্ল্যাটের নতুন নিয়ম পরিবর্তন আন্ডার—অকুপেন্সি কমাতে সাহায্য করবে। কারণ বাসিন্দারা কার ফ্রি জোনে গেলেও তাদের গাড়ির পারমিট (পিটিএস) বহাল রাখার অধিকারী হবেন বলে নিশ্চিত হলে তারা কম বেডরুমের প্রপার্টিতে স্থানান্তরিত হতে নিরাপদ বোধ করবেন।
নতুন নিয়মের অধীনে, যদি কোনও বিদ্যমান পারমিট ধারক তাদের পিটিএস বাতিল করেন, তবে একই পরিবারে বসবাসকারী অন্য সদস্য এটির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
যারা বারার বাইরে প্রাইভেট রেন্টেড বা টেম্পোরারি একোমোডেশনে বসবাস করেন তারা যদি কার ফ্রি জোনে চলে যান, তাহলে এখন টাওয়ার হ্যামলেটসের পিটিএস—এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।
মেয়রস্ স্মল গ্রান্টস প্রোগ্রামঃ প্রতি বছর দেয়া হবে ৮০০,০০০ পাউন্ড
মেয়রের নতুন ক্ষুদ্র অনুদান কর্মসূচির আওতায় ২০২৭ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত প্রতি বছর ৮০০,০০০ পাউন্ডের আর্থিক অনুদান প্রদান করা হবে।
এই প্রোগ্রামে ৫টি থিম থাকবে যার মধ্যে রয়েছেঃ
— মেয়র এবং ইয়াং মেয়র – ইয়ুথ এমপাওয়ারমেন্ট ফান্ড (যুব ক্ষমতায়ন তহবিল) এর সহযোগিতায় তরুণরা তাদের সমবয়সীদের জন্য প্রকল্প ডিজাইন, বিড এবং বিতরণে সহায়তা করা হবে
— মেয়রস্ পজিটিভ এক্টিভিটিস ফর ইয়াং পিপল (তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য মেয়রের ইতিবাচক কার্যকলাপ) এর আওতায় স্কুল ছুটির সময় নানান ধরনের ক্রিয়াকলাপ আয়োজন ও বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা।
— কমিউনিটি ইভেন্টস্, যা কমিউনিটি গুলোকে একত্রিত করে এমন অনুষ্ঠান আয়োজন এবং আমাদের নৃতাত্ত্বিক বৈচিত্র্য উদযাপন, জাতীয় ও আঞ্চলিক উৎসব গুলি আয়োজন করা ।
— মেয়রস্ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রোগ্রাম – যা বিভিন্ন ধরনের সেবা কার্যক্রম পরিচালনা ও ডেলিভারি দেয়ার মত সাংগঠনিক সক্ষমতা অর্জনে স্থানীয় সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী হতে সহযোগিতা করা;
— কমিউনিটি চেস্ট – কমিউনিটি ইভেন্ট এবং ইভেন্টগুলোকে সহযোগিতা করার জন্য এটি একটি খুব ছোট অনুদান প্রকল্প।
নতুন এই স্মল গ্র্যান্টস প্রোগ্রাম চালু করা প্রসঙ্গে নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, “মেয়র হিসাবে, আমি গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিস, কার্যক্রম এবং ইভেন্টসমূহ প্রদানের মাধ্যমে বাসিন্দাদের সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে আমাদের স্বেচ্ছাসেবী এবং কমিউনিটি সেক্টরকে অসাধারণ ভূমিকা পালন করতে দেখছি।”
তিনি বলেন, “আমার দৃষ্টিভঙ্গি হল কাউন্সিলের পক্ষ থেকে একটি সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময় স্বেচ্ছাসেবী এবং কমিউনিটি সেক্টরকে সহযোগিতা করা হচ্ছে এবং বিনিয়োগ করছে, যাতে এই সেক্টর আমাদের বাসিন্দাদের জীবনকে উন্নত করতে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে। এই কারণেই কাউন্সিলের বর্তমান প্রশাসন আমাদের কমিউনিটি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলোকে সহায়তার জন্য তহবিলের পরিমাণ প্রতি বছর ১ মিলিয়ন পাউন্ড বাড়িয়েছে।
উল্লেখ্য, মেয়রের কমিউনিটি অনুদান কর্মসূচির (মেয়রস্ কমিউনিটি গ্র্যান্টস প্রোগ্রাম) আওতায় এরইমধ্যে টাওয়ার হ্যামলেটসের জনসাধারণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা পূরণের জন্য ১১০ টি প্রকল্প সরবরাহ করার জন্য ৮৬টি সংগঠন/সংস্থাকে অর্থায়ন করা হয়েছে। অনুদানের একটি মূল লক্ষ্য ছিল কমিউনিটির সকল অংশের উপকৃত হওয়া নিশ্চিত করা।
ক্ষুদ্র অনুদান কর্মসূচির লক্ষ্য হচ্ছে, ১ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডের কম আয়ের ছোট সংস্থাগুলিকে সহযোগিতা করা, যাতে বিস্তৃত সংস্থাগুলি কাউন্সিলের তহবিল লাভ করতে পারে এবং কমিউনিটির সকল অংশের সুবিধা নিশ্চিত করতে পারে।
অনুদান কর্মসূচি সমূহ এবং কীভাবে আবেদন করা যাবে সে সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করার জন্য কাউন্সিলের ভিসিএস (ভলান্টিয়ার এন্ড কমিউনিটি সেক্টর) টিম তথ্য ইভেন্টের একটি সিরিজ আয়োজন করবে।
শুক্রবার স্মল গ্র্যান্টস প্রোগ্রামের পাশাপাশি ইমার্জেন্সি গ্র্যান্টস প্রোগ্রাম নামের আরেকটি অনুদান কর্মসূচি নতুনভাবে চালু করা হয়।
কোন সংস্থা যদি কখনো জরুরী অবস্থার সম্মুখীন হয় যেমন ক্ষতি বা দুর্ঘটনা থেকে পুনরুদ্ধার, অত্যাবশ্যক জরুরী কাজের জন্য ভবন মেরামত বা স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তাহলে সেই সংস্থাকে আর্থিক সহযোগিতা দেয়ার জন্য ইমার্জেন্সি গ্র্যান্টস প্রোগ্রাম নামে একটি অনুদান কর্মসূচি রয়েছে কাউন্সিলের।
নতুন করে পুনর্গঠিত এই জরুরি অনুদান কর্মসূচি চালু করা প্রসঙ্গে নির্বাহী মেয়র বলেন, এই অনুদান কর্মসূচিটি আগে থেকেই ছিল, তবে এটি এখন আরো উন্নত করা হয়েছে। যে সংস্থা গুলোর জরুরি সহায়তার প্রয়োজন তাদের জন্য তহবিল অ্যাক্সেস করতে এবং বারার বাসিন্দাদের জন্য প্রয়োজনীয় সার্ভিসগুলো প্রদান করা চালিয়ে যাওয়া আরও সহজ করতে এই অনুদান প্রকল্পের জন্য ১০০,০০০ পাউন্ড বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে গিয়ে এই অনুদান প্রোগ্রামগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে। এই অনুদান প্রোগ্রামগুলি সম্পর্কে জানতে কাউন্সিলের অফিসারদের সাথে কথা বলুন, যারা আপনাকে আরও তথ্য প্রদান করতে পারেন।
নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, “আমরা আমাদের বাসিন্দাদের জীবন উন্নত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এই লক্ষ্য অর্জনে ভিসিএস সেক্টরের সাথে আমাদের অংশীদারিত্ব আমাদেরকে সহায়তা করতে পারে। আমি আমাদের কমিউনিটির কল্যাণে নিবেদিত স্বেচ্ছাসেবী ও কমিউনিটি সংগঠনগুলোকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। বারার যেসকল লোকদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তেমন গুরুত্বপূর্ণ সেবা কার্যক্রম আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া আমরা সরবরাহ করতে সক্ষম হব না। আমি আশা করি এই যাত্রায় আমাদের অংশীদারিত্ব আরও বাড়বে এবং শক্তিশালী হবে।”
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন