ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মানবিক দিক বিবেচনায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের মতো সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবের কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকলেও কয়েকটি মিত্র দেশও প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ায় তেল আবিবের ওপর চাপ ক্রমে বাড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি গাজায় নির্বিচার হামলার জন্য দেশটির প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এখন আন্তর্জাতিক সমর্থন হারাচ্ছে ইসরায়েল।
এদিকে গাজায় গতকাল বুধবারও প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
দক্ষিণ গাজায় খান ইউনিস ও রাফাহ শহরে হামাসের সঙ্গে তীব্র লড়াই হয়েছে তাদের।
জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস
বাংলাদেশ সময় গতকাল ভোরের দিকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হয়। মিসর ও মৌরিতানিয়ার উত্থাপিত প্রস্তাবে বাংলাদেশ, ভারত, রাশিয়া, চীন, কানাডা, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড, পোল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়াসহ ১৫৩টি দেশ ভোট দিয়েছে।
প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেওয়া ১০টি দেশ হলো : ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, গুয়াতেমালা, লাইবেরিয়া, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরু, পাপুয়া নিউ গিনি ও প্যারাগুয়ে।
তবে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, ইউক্রেনসহ ২৩টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল।
ভোটের পর দেখা গেছে, ইসরায়েলের অন্যতম মিত্র দেশ অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নিউজিল্যান্ড প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য ও জার্মানির মতো ঘনিষ্ঠ মিত্র ভোটদানে বিরত থেকেছে। এর মাধ্যমে ইসরায়েলের ওপর মিত্রদের চাপ বাড়ার বিষয়টিই স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
তবে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন বলেছেন, আন্তর্জাতিক সমর্থন থাক বা না থাক, হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবেন তাঁরা।
আন্তর্জাতিক সমর্থন হারাচ্ছে ইসরায়েল : বাইডেন
জাতিসংঘের প্রস্তাবের বিপক্ষে থাকলেও অবশেষে কড়া ভাষায় গাজায় ইসরায়েলি নির্বিচার হামলার সমালোচনা করেছে দেশটির ঘনিষ্ঠতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক সমর্থন হারাচ্ছে ইসরায়েল।’ অক্টোবরে গাজায় হামলা শুরুর পর থেকে এটাই ইসরায়েলি প্রশাসনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সবচেয়ে কঠোর প্রতিক্রিয়া।
তবে আরেক সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি এ-ও বলেন, নিরীহ ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তা এখনো বড় উদ্বেগের বিষয়।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে গাজাকে কিভাবে পরিচালনা করা হবে, তা নিয়ে জো বাইডেনের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ হয়েছে। ইসরায়েলের বর্তমান সরকার চাইছে না মাহমুদ আব্বাসের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষও (পিএ) গাজার নিয়ন্ত্রণ নিক। বাইডেন প্রশাসন নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভায় রদবদল আনার আহ্বান জানিয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে। দেশটির ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে কট্টর ডানপন্থী সরকার।
হামলা, বৃষ্টি, শীতে দুর্ভোগ চরমে
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরে গতকালও ব্যাপক বোমাবর্ষণ চলেছে। খান ইউনিস ও পাশের রাফাহ শহরে তুমুল লড়াই হয়েছে। হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েলি সাঁজোয়া যানে হামলা চালিয়েছে তারা।
উত্তর গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের কর্মীদের আটক করা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। হাসপাতাল ছাড়ার সময় বেসামরিক লোকজনের ওপর গুলি চালিয়েছে তারা। এতে পাঁচজন আহত হয়েছে। এ ছাড়া আল-আওদা হাসপাতালও ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এদিকে গতকাল উত্তর গাজার শুজাইয়া শরণার্থী শিবিরে হামাসের অতর্কিত হামলায় ১০ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, নিহতদের মধ্যে একজন কমান্ডারও ছিল। হামাসের সশস্ত্র শাখা আল কাসেম ব্রিগেডস বলেছে, মধ্য গাজায় ১৫ জন ইসরায়েলি সেনা তাদের হামলায় হতাহত হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল রাত পর্যন্ত গাজায় ১৮ হাজার ৬০৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৫০ হাজারের বেশি আহত হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে আরো আট হাজার।
ইসরায়েলি হামলায় বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়া গাজার ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ কয়েক গুণ বাড়িয়েছে বৃষ্টি ও শীত। মূলত প্লাস্টিকের তাঁবুতে থাকতে হচ্ছে তাদের। মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় ভারি বৃষ্টি ও বাতাসের মধ্যে শীতের পোশাকের অভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে লোকজনকে।
সুড়ঙ্গ পানিতে ভরছে ইসরায়েল
মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, হামাসের সুড়ঙ্গগুলোতে সাগরের পানি ঢুুকিয়ে দিতে শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই প্রক্রিয়া কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে পারে।
মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এ কথা জানিয়েছে। ইসরায়েলের ধারণা, নিজেদের খোঁড়া এসব সুড়ঙ্গে হামাস যোদ্ধারা লুকিয়ে আছে এবং সামরিক সরঞ্জাম মজুদ করেছে।
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন