ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার চেষ্টা আওয়ামী লীগের নেই মন্তব্য করে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা জনগণের কাছে যাব, জনগণ যাকে ভোট দেবে সে ক্ষমতায় আসবে। আমরা যতক্ষণ ক্ষমতায় আছি দেশের উন্নতি করছি। দেশের যে উন্নতি হয়েছে এটা তো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আজকে বাংলাদেশটা বদলে গেছে।
আমাদের হাওয়া ভবন নেই। কারো পাওনা দিয়ে ব্যবসা নিতে হয় না। ব্যবসায়ীরা স্বাধীনভাবে ব্যবসা করতে পারেন। তাই বলব ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার তো কোনো চেষ্টা আমাদের নেই।
’
আজ বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে গণভবনে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নবনির্বাচিত কমিটির সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি গাজীপুরে রেললাইন কাটা এবং ট্রেনের ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনার নিন্দা জানান।
মানুষ হত্যা করে বিএনপি সরকার উৎখাত করতে পারবে না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষকে হত্যা করে তারা সরকার উৎখাত করবে? মানুষ হত্যা করে আন্দোলন? আমি জানি না এই আন্দোলন করে কী পাবে তারা। বিএনপি যে এই জ্বালাও-পোড়াও করে যাচ্ছে, প্রতিদিন তারা অবরোধ আর হরতাল ডেকে যাচ্ছে, হরতাল-অবরোধ মানে কি কয়েকখান বাস পোড়ানো, গাড়ি পোড়ানো, যাত্রীসহ বাস পোড়ানো?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘চাল যাচ্ছে, চালের গাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে।
ধান যাচ্ছে, ধানের গাড়ি পোড়াচ্ছে। মানে মানুষকে ক্ষুধার্ত মারা। এই ঘটনা এর আগেও তারা করেছে ২০১৩ সালে। আমি জানি না তাদের কোনোমতে কেউ থামাতে পারবে কি না। এই মানুষ হত্যা করে সরকার উৎখাত তো করতে পারবে না।
’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমি ঠিক জানি না, মানুষকে পুড়িয়ে মারার মধ্য দিয়ে কী আন্দোলন হয় সেটা আমার জানা নেই। আমরাও আন্দোলন করেছি জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, আর মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি যেন হয়, সেটা চিন্তা করে। কিন্তু আমি এ রকম আন্দোলন দেখিনি। এটা দেখেছি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে, তারা আমাদের এভাবে সব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে। আর এখন দেখি ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের হামলা, হাসপাতাল রেহাই পায় না। হাসপাতালের ওপর পর্যন্ত তারা বোমা হামলা করে। ঠিক আমাদের দেশে যেন সেই চিত্রটাই দেখতে পাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন আন্দোলনের নামে অ্যাম্বুল্যান্সের ওপর হামলা করা, পুলিশ ফাঁড়িতে ঢুকে সেখানে অ্যাম্বুল্যান্স পুড়িয়ে দেওয়া, পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশকে মাটিতে ফেলে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা, এ রকম বীভৎস ঘটনা বাংলাদেশে ঘটানো হচ্ছে। এটা নাকি আন্দোলন। তাহলে কার স্বার্থে আন্দোলন?’
গাজীপুরে রেললাইন কাটা এবং ট্রেনের ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটু চিন্তা করে দেখুন, কী রকম ধ্বংসাত্মক কাজ। এরা আন্দোলন না, রেললাইন ফেলে দিয়ে, প্রায় আটটা বগি পড়ে যায়, একজন মানুষ মারা যায়, কয়েকজন আহত। তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। তার মানে হচ্ছে রেলের বগি ফেলে দিয়ে মানুষকে হত্যা করা।’
বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা মানুষ মারার জন্য রেললাইন উপড়ে ফেলে বা রেললাইন কেটে দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষ মারার কল্পনা করে বা জীবন্ত মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারে এদের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ বলে কিচ্ছু নেই। এটা জনগণকেই প্রতিহত করতে হবে। সেটাই আমার আহ্বান সারা দেশের মানুষের প্রতি।’
তিনি বলেন, ‘যারা রেললাইন কেটে দিয়ে বগি ফেলে দিয়ে মানুষ হত্যার পরিকল্পনা করে আর আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়, আর পিটিয়ে পিটিয়ে পুলিশ সাংবাদিক থেকে শুরু সাধারণ মানুষকে মারে, মিছিলে মেয়েদের ওপর অত্যাচার করে এদের ক্ষমা নেই। এদের শাস্তি একদিন পেতেই হবে। জনগণকে বলবে এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য।’
এ সময় ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বর্তমান সরকার দেশের ব্যবসার উন্নয়নে কাজ করছে। ব্যবসায়ীরা যেন ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারেন এ জন্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি। তিনি রপ্তানি বহুমুখীকরণ, রপ্তানি প্রণোদনা, কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, এলডিসি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত নেতারা জানান, প্রধানমন্ত্রী বাজার নিয়ন্ত্রণে এফবিসিসিআইয়ের দায়িত্বশীল রাখবে বলে আশা করেন। এই প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীরা নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনাসভা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম নেতৃত্বে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদষ্টো সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী, সহসভাপতি খায়রুল হুদা চপল, মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত সরকার, মো. মুনির হোসেন, শমী কায়সার, রাশেদুল হোসেন চৌধুরী রনি, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন