দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সিলেট-৩ আসনে শুরু হয়েছে নতুন হিসাব-নিকাশ। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য, স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় এ আসনে নতুন করে ‘চাপে’ পড়তে যাচ্ছে নৌকা।
এমনিতেই জাতীয় পার্টির সাথে আসন ভাগাভাগির সমীকরণে রয়েছে আসনটি। এবার ডা. দুলাল প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব সহজে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পারবেন না- এমনটা মনে করছেন স্থানীয়রা।
নির্বাচনে সিলেট-৩ আসনে এবারও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। তার সাথে স্বতন্ত্রের ব্যানারে প্রার্থী হন মনোনয়নবঞ্চিত বিএমএ মহাসচিব, আওয়ামী লীগ নেতা ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল।
গত ৪ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাইয়ের পর এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরে গড়মিল থাকায় তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান। এর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন ডা. দুলাল। গতকাল মঙ্গলবার আপিলের শুনানিতে তাঁর প্রার্থিতা বৈধ বলে ঘোষণা করে ইসি।
ডা. দুলাল মাঠে ফিরে আসায় নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন নৌকার প্রার্থী এমপি হাবিবুর রহমান। সিলেট-৩ আসনের তিন উপজেলা- দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি অংশ ডা. দুলালের পক্ষে মাঠে প্রকাশ্যে কাজ করছেন। বিশেষ করে আসনটির টানা ৩ বারের এমপি মরহুম মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকরা স্বতন্ত্র প্রার্থী দুলালের সঙ্গে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল সিলেট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ইনামুল হক চৌধুরী বীর প্রতীকের সহোদর। এলাকায় তাদের দৃঢ় সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান রয়েছে। মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর সিলেট-৩ আসনে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনেও ডা. দুলাল আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
তবে সেসময় নৌকার টিকেট পান হাবিবুর রহমান হাবিব। উপনির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত হলেও মাঠ ছাড়েননি ডা. দুলাল। ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জে ফ্রি চিকিৎসাসেবা প্রদানসহ নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখেন।
সিলেট-৩ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান এমপি হাবিব ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা.দুলাল ছাড়াও প্রার্থিতা করছেন জাতীয় পার্টির মো. আতিকুর রহমান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আনোয়ার হোসেন আফরোজ ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের জাহেদুর রহমান (মাসুম)।
এদিকে, সিলেট-৩ আসনটি একসময় জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। মহাজোটের কাছে সবসময় আসনটি দাবি করে আসছিল জাতীয় পার্টি। কিন্তু আওয়ামী লীগ আসনটি ছেড়ে দেয়নি। এই আসনে এবারও প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক।
জাতীয় পার্টি এবারও আসনটি চায় মহাজোটের কাছে। অন্যবারের চেয়ে এবার আরও শক্তভাবে আসনটি ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানাবে জাতীয় পার্টি। তাই শেষ পর্যন্ত আসন সমঝোতায় নৌকাবিহীন নির্বাচন করতে হয় কি-না এ নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন