বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতা এড়ানোর কৌশল হিসাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে নমনীয় আওয়ামী লীগ। ফলে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে প্রায় প্রতিটি আসনেই দলীয় প্রার্থীর বাইরে দলেরই আরও এক বা একাধিক নেতা নেমেছেন ভোটের লড়াইয়ে। এতে বিপাকে আওয়ামী লীগের তৃণমূল। বেশিরভাগ আসনেই দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী এবং দলেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে থাকায় দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন নেতাকর্র্মীরা। এতে তৃণমূলে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ সংকট।
সুনামগঞ্জ-১ (জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও মধ্যনগর) ও সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নিয়ে দলের নেতা কর্মীরা পড়েছেন বিপাকে। এই দুই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত দুই প্রার্থীর সঙ্গে দলের নেতা কর্মীদের যেমন যোগাযোগ আছে, নির্বাচনী এলাকা দুটি’র মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান সংসদ সদস্যদের সঙ্গেও অনেকের দহরম-মহরম আছে।
এই অবস্থায়, ‘শ্যাম রাখি না কূল রাখি অবস্থায়’ পড়েছেন অনেকে। কেউ কেউ দুই কূলই গোপনে এখন পর্যন্ত রাখার চেষ্টা করছেন।
সুনামগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. রনজিত সরকার দলের নিবেদিত কর্মী। ছাত্রলীগ থেকে আওয়ামী লীগে আসা রনজিতের সঙ্গে এলাকায় দলীয় নেতা কর্মীদের ভালো যোগাযোগ রয়েছে। বিশেষ করে ছাত্রলীগের বর্তমান ও প্রাক্তনদের সঙ্গে তাঁর নিবির যোগাযোগ। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন টানা তিনবার এই এলাকার এমপি থাকায় তাঁর সঙ্গেও গভীর যোগযোগ আছে দলের উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের। এই আসনের আরেক স্বতন্ত্রপ্রার্থী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সেলিম আহমদ সদ্য জেলা শ্রমিক লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে তার ভালো যোগাযোগ।
দলের কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলরাও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ইতিবাচকভাবে দেখায় তৃণমূলের কর্মীরা পড়েছেন মহাবিপাকে। কোন পক্ষে থাকবেন, এ নিয়ে দু’টানায় পড়েছেন কেউ কেউ। কেউ কেউ গোপনে দুই জন, তিন জনের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করছেন।
এমপি রতনের সুনামগঞ্জ শহরের ওয়েজখালির বাসায় ওই আসনের আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকের যাতায়াত চোখে পড়েছে এই প্রতিবেদকের। এরা আবার দলীয় মনোনীত প্রার্থী রনজিত সরকারের পক্ষেও বিভিন্ন সভায়, উঠোন বৈঠকে বক্তব্য দিচ্ছেন।
মধ্যনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ চন্দ্র সরকার, দুইপক্ষের সঙ্গে কারো কারো যোগাযোগ থাকার সত্যতা স্বীকার করে বললেন, ১৭ তারিখের পর এই ধোঁয়াশা কেটে যাবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এমপি রতনের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত রেজাউল করিম শামীম বললেন, ১৭ তারিখের পর অনেক কিছুই পরিস্কার হয়ে যাবে। ওই সময় থেকে আরেক রূপ ধরবে প্রচারণায়। যেহতু দলের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড নির্বাচন ‘ওপেন’ করে দিয়েছেন, প্রতীক বরাদ্দের পর দলীয়-সম্পর্ক এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক দুটোই কাজে লাগবে। গেল ১৫ বছর যারা এমপি রতনের কাছ থেকে বেশি সুবিধা নিয়েছে, তারা আগেই নিজের জায়গা করার জন্য রনজিতের পালে হাওয়া দেওয়া শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সুনামগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আইজিপি’র ভাই শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (আল আমিন চৌধুরী)। আওয়ামী পরিবারের সন্তান আল-আমিন চৌধুরী জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত ও এমপি জয়া সেন গুপ্তার পক্ষে বিগত সময়ে শাল্লায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করায় দলের নেতা কর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। একইভাবে এই আসনে সাতবার নির্বাচন করুয়া প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের স্ত্রী ড. জয়া সেন গুপ্তার সঙ্গে ৪০ বছর হয় পরিচয়-যোগাযোগ আছে এমন রাজনৈতিক কর্মীও আছেন দিরাই-শাল্লায়। বর্তমান এমপি জয়া সেন মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচনে নামায় মহাসংকটে পড়েছেন এরাও। ‘নেতা-কর্মীরা স্বতন্ত্র’র পক্ষে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না’ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের এই সিদ্ধান্তে এখানকার কর্মীরাও কোন পক্ষে যাবেন, এই নিয়ে হিসাব কষছেন।
দলের নেতা শাল্লার বাহাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ^জিত চৌধুরী নান্টু বললেন, দলের কর্মীরা দুই দিকেই আছে, কেউ কেউ বিপদে পড়েছে, কার পক্ষে থাকবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তবে যে যার পক্ষে আছে প্রকাশ্যেই আছে।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি, শাল্লার বাসিন্দা অ্যাড. অবনী মোহন দাস বললেন, যাদের সাহস ও সততা আছে, তারা প্রকাশ্যেই পক্ষ নিয়েছে। ভীতু স্বভাবের কিছু কর্মী আছে, এরা লুকিয়ে দুইপক্ষে হাওয়া দেবার চেষ্টা করছে। তবে এই সংখ্যা একেবারে কম।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন