ভুল করে জিম্মি হত্যা : ব্যাপক বিক্ষোভে চাপে নেতানিয়াহু

গাজায় অভিযানরত ইসরায়েলি সেনাদের ভুল করে তিন জিম্মি হত্যার খবরে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখিয়েছে ইসরায়েলিরা। এ ঘটনায় হামাসের হাতে এখনো জিম্মি শতাধিক ইসরায়েলিকে জীবিত ফেরত আনতে চাপের মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এদিকে ইসরায়েলের হামলায় চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়া গাজার জন্য আরো ত্রাণসামগ্রী দরকার বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। 

ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে গত শুক্রবার ইয়োতাম হাইম (২৮), সামের তালালকা (২২) ও আলন শামরিজ (২৬) নামের তিন জিম্মি নিহত হন।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, তাদের সেনারা তিন জিম্মিকে সন্ত্রাসী ভেবে গুলি করেছিল। ইসরায়েলি এক কর্মকর্তা বলেন, সেনারা খালি গায়ে থাকা ওই জিম্মিদের সাদা কাপড় বাঁধা লাঠি নিয়ে একটি ভবন থেকে বের হয়ে আসতে দেখে। এ সময় তাঁদের সন্ত্রাসী ভেবে গুলি করা হয়।

 

ইসরায়েলি বাহিনী বলছে, ওই জিম্মিদের হামাস ফেলে গিয়েছিল নয়তো তাঁরা কোনোভাবে পালিয়ে এসেছিলেন।

নিজেদের সেনাদের হাতেই এভাবে জিম্মি নিহত হওয়ার ঘটনায় গত শুক্রবার রাতে তেল আবিব শহরের সড়কে নামে ক্ষুব্ধ ইসরায়েলিরা। এখনো গাজায় আটক থাকা জিম্মিদের উদ্ধারের দাবিতে বিক্ষোভকারীরা  ইসরায়েলি সরকারকে হামাসের সঙ্গে আলোচনায় বসার আহবান জানায়।  তারা প্ল্যাকার্ড ও মোমবাতি হাতে তেল আবিবের এক সামরিক ঘাঁটির দিকে মিছিল নিয়ে যায়। জিম্মিদের স্বজনরা গত শুক্রবার রাতে তেল আবিবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনেও বিক্ষোভ করে।

 

জিম্মি হত্যার ঘটনায় ‘গভীর অনুতাপ’ প্রকাশ করে ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, তারা এ ঘটনার তদন্ত করবে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই হত্যাকাণ্ডকে  ‘অসহনীয় দুর্ভাগ্য’ বলে বর্ণনা করেছেন।

নিজেদের নাগরিক হত্যার এ ঘটনা যুদ্ধবিরতি তথা আলোচনার জন্য ইসরায়েলি সরকারের ওপর নতুন করে চাপ বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। নেতানিয়াহুর অতি কট্টরপন্থী সরকার এখনো জিম্মিদের ফেরত আনতে হামাসের ওপর ব্যাপক সামরিক চাপ প্রয়োগকেই একমাত্র সমাধান বলে দাবি করে আসছে। কিন্তু ভুল করে জিম্মি হত্যার ঘটনায় তারা রীতিমতো অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়েছে।

 

গত ৭ অক্টোবর হামাসের  নজিরবিহীন হামলায় এক হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি প্রাণ হারায়। হামাস সদস্যরা ২৪০ জনকে  ধরে গাজায় নিয়ে যায়।  হামাস-ইসরায়েল সাময়িক যুদ্ধবিরতির সময় চুক্তি অনুযায়ী  প্রায় ১০০ জিম্মি মুক্তি পেয়েছে।

স্কুল ও ভবনে হামলা 

গাজায় বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। গতকাল শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে  ইসরায়েলি বাহিনী জানায়, তারা গাজা সিটির কয়েকটি স্কুলে অভিযান চালিয়েছে। সেখানে হামাস সদস্যরা লুকিয়ে ছিল বলে তারা দাবি করেছে। ভিডিও ফুটেজে গাজা সিটির রাইমাল এলাকায় ধ্বংসস্তূপের আড়াল থেকে ইসরায়েলি সেনাদের গুলি ছুড়তে দেখা যায়। আইডিএফ বলেছে, তারা অভিযান চালানো স্কুলগুলো থেকে কিছু হামাস সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। ইসরায়েলি সেনা কর্তৃপক্ষ আরো বলেছে, জাবালিয়া এলাকায় একটি ভবনের ছাদে হামাস সদস্যদের গতিবিধি দেখতে পেয়ে আকাশযান থেকে গুলিবর্ষণ ও পরে ভবনটি বোমা দিয়ে ধ্বংস করা হয়। গাজা উপত্যকার দক্ষিণাংশে খান ইউনিসেও ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে।

হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তাদের ত্রিমুখী হামলায় গাজায় ১৮ হাজার ৭০০ জন নিহত হয়েছে, যার প্রায় অর্ধেক শিশু। আহত হয়েছে ৫০ হাজার মানুষ।

গাজায় আরো ত্রাণ প্রয়োজন : ডাব্লিউএইচও

গাজায় ত্রাণসামগ্রী প্রবেশে কারেম শালোম ক্রসিং খুলে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো ক্রসিংটি খোলার ঘোষণা দিল ইসরায়েল। এটিকে একটি সুখবর জানিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) প্রতিনিধি রিচার্ড পিপারকর্ন জানান, ‘গাজার জন্য আরো অনেক কিছু করা প্রয়োজন।’

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন