আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের অভিযোগ তুলে তা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে দেশের ৯১ জন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বিশিষ্ট নাগরিকদের পক্ষে গণমাধ্যমে এই বিবৃতি পাঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত সংবিধান অনুযায়ী ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা সচেষ্ট রয়েছেন।
কিন্তু একটি মহল নির্বাচনকে বানচাল করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারবাহিকতায় গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে গণসমাবেশের নামে বিএনপির উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে একজন কর্তব্যরত নিষ্ঠাবান পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে। এমনকি মাননীয় প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও হাসপাতালে তারা তাণ্ডব চালায়। পরবর্তী সময়ে বাসের ভেতর ঘুমন্ত শ্রমিককে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়।
এতে আরো বলা হয়, গত ২৯ অক্টোবর থেকে অদ্যাবধি বিএনপি-জামায়াতের কর্মী সমর্থকরা রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে বিপুল সংখ্যক যানবাহন ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নজিরবিহীন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এমনকি খাদ্যপণ্য বহনকারী যানবাহন, কাঁচামাল বহনকারী ট্রাক ও পিকআপ তাদের এই তাণ্ডব থেকে রেহাই পায়নি।
সম্প্রতি গাজীপুরে রেলালাইন কেটে ফেলার ঘটনা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১২ ডিসেম্বর বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা গাজীপুরের রেললাইনের ফিস প্লেট উপড়ে ফেলে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটায়। এতে একজন নিরীহ নাগরিক নিহত হওয়াসহ অসংখ্য ট্রেনযাত্রী আহত হয়।
সর্বশেষ আজ ১৯ ডিসেম্বর সকালে ঢাকা বিমান বন্দর ও তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনের মাঝামাঝি জায়গায় আন্তঃনগর মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের বগিতে সন্ত্রাসীচক্র অগ্নিসংযোগ করে। এই ঘটনায় চার জন নিরীহ যাত্রী নির্মমভাবে নিহত হয়। রাজনীতির নামে পরিচালিত দুর্বৃত্তদের এই ধরনের নৃশংস বর্বরতা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।
বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেন, এসব নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রতিরোধ করে দেশের চলমান গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করা। একই লক্ষ্যে দেশের একটি চিহ্নিত মহল সংবিধানের একটি নির্ধারিত ধারার অপব্যাখ্যা দিয়ে নির্বাচনের সময়সূচি পরিবর্তন করে সাংবিধানিক অচলাবস্থা সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত।
ইতিমধ্যে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৯টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। চূড়ান্তভাবে অংশগ্রহণ করা প্রার্থীদের সংখ্যা ১৮৯৬ জন। প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে সারা দেশে সৃষ্টি হয়েছে অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের উৎসমুখর পরিবেশ।
বিশিষ্ট নাগরিকদের মতে, সব বিভ্রান্তি ও বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে বাংলাদেশের মানুষ এখন মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্ধুব্ধ হয়ে উন্নয়নের ধারা অক্ষুন্ন রাখার লক্ষ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। কিন্তু একটি চিহ্নিত কুচক্রি মহল দেশের জনগণ ও নির্বাচনের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। রাজনীতির আড়ালে সক্রিয় উন্নয়ন ও প্রগতিবিরোধী এই অপশক্তির বিরুদ্ধে দেশের সচেতন নাগরিকদের সোচ্চার হওয়া একান্ত প্রয়োজন। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ দেশের সব নাগরিককে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সফলভাবে সম্পন্ন করার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে সই করা বিশিষ্ট নাগরিকরা হলেন
১. বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, সাবেক প্রধান বিচারপতি
২. আবদুল করিম, সাবেক মুখ্য সচিব
৩. মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, বীর বিক্রম, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার
৪. অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শিক্ষক ও গবেষক
৫. শিল্পী হাশেম খান, প্রফেসর এমিরিটাস, ঢাকা বিশ্ববিবিদ্যালয়
৬. রামেন্দু মজুমদার, নাট্যজন
৭. কাজী রিয়াজুল হক, সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
৮. এমিরেটাস অধ্যাপক আতিউর রহমান, সাবেক গর্ভনর, বাংলাদেশ ব্যাংক
৯. মোহাম্মদ নুরুল হুদা, সাবেক আইজিপি, সচিব ও কলামিস্ট
১০. মুন্সী ফয়েজ আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত
১১. ড. ইকবাল মাহমুদ, সাবেক চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশন।
১২. মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামান, সাবেক চেয়ারম্যান, বেসরকারিকরণ কমিশন
১৩. ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সাবেক মুখ্য সচিব ও কবি
১৪. বীর মুক্তিযোদ্ধা এ টি আহমেদুল হক চৌধুরী পিপিএম, সাবেক চেয়ারম্যান, পাবলিক সার্ভিস কমিশন
১৫. সোহরাব হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত
১৬. মো. নজিবুর রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব
১৭. কবির বিন আনোয়ার, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব
১৮. অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী, সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিবিদ্যালয়
১৯. নাসির উদ্দিন ইউসুফ, সাংস্কিতিক ব্যক্তিত্ব
২০. অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিবিদ্যালয়
২১. ড. হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক আইজিপি ও রাষ্ট্রদূত
২২. শাহরিয়ার কবির, লেখক ও গবেষক
২৩. অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিবিদ্যালয়
২৪. মমিন উল্লাহ পাটোয়ারী, বীর প্রতীক, সাবেক সচিব
২৫. লে. জেনারেল মোল্লা ফজলে আকবর, এনডিসি, পিএসসি (অব.)
২৬. লে. জেনারেল আবদুল ওয়াদুদ, এনডিইউ, পিএসসি (অব.)
২৭. লে. জেনারেল সাব্বির আহমেদ, এসবিপি, ওএসপি, এসজিপি, এনডিসি, পিএসসি (অবঃ)
২৮. এয়ার ভাইস মার্শাল সাদে উদ্দিন (অবঃ)
২৯. উজ্জ্বল বিকাশ দত্ত, সাবেক সচিব ও সাবেক সদস্য, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন
৩০. মো. আবদুল হান্নান, সাবেক রাষ্ট্রদূত
৩১. সুরাইয়া বেগম, সাবেক সিনিয়র সচিব ও সদস্য, তথ্য কমিশন
৩২. একেএম শহীদুল হক, সাবেক আইজিপি
৩৩. বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি
৩৪. অধ্যাপক মো. মুস্তাফিজুর রহমান, সাবেক উপাচার্য, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
৩৫. অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী, উপাচার্য, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি
৩৬. অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া, সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
৩৭. অধ্যাপক ড. এম এ মান্নান, সাবেক উপাচার্য, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
৩৮. অধ্যাপক ড. রশিদ আসকারী, সাবেক উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
৩৯. অধ্যাপক নিসার হোসেন, ডীন, চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিবিদ্যালয়
৪০. মেজর জেনারেল আলাউদ্দিন মুহাম্মদ আবদুল ওয়াদুদ, বিপি, এনডিসি, পিএসসি (অব.)
৪১. মেজর জেনারেল শিকদার মো. সাহাবুদ্দিন (অব.)
৪২. মেজর জেনারেল মো. আবদুর রশিদ, পিএসসি, জি (অব.)
৪৩. মেজর জেনারেল নাসির উদ্দিন (অব.), এমপি
৪৪. মেজর জেনারেল মো. সালাহউদ্দিন মিয়াজী, পিএসসি (অব.)
৪৫. মেজর জেনারেল মোহাম্মদ তৌহিদ-উল-ইসলাম, বিএসপি, এনডিইউ, পিএসসি (অব.)
৪৬. রিয়ার এডমিরাল এ কে এম আজাদ (অব.)
৪৭. শ্যামল দত্ত, সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেসক্লাব ও সম্পাদক দৈনিক ভোরের কাগজ।
৪৮. ফরিদা ইয়াসমিন, সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব।
৪৯. অপরূপ চৌধুরী, সাবেক সচিব
৫০. অশোক কুমার বিশ্বাস, সাবেক সচিব
৫১. মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ, সাবেক সচিব
৫২. অশোক মাধব রায়, সাবেক সচিব
৫৩. এ কে এম আতিকুর রহমান, সাবেক রাষ্ট্রদূত
৫৪. গোলাম মোহাম্মদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত
৫৫. মোহাম্মদ শহীদুল হক, সাবেক সিনিয়র সচিব
৫৬. চৌধুরী ইখতিয়ার মমিন, সাবেক রাষ্ট্রদূত
৫৭. মাহবুব উজ জামান, সাবেক রাষ্ট্রদূত
৫৮. এটিএম নজরুল ইসলাম, সাবেক রাষ্ট্রদূত
৫৯. মসয়ূদ মান্নান, সাবেক রাষ্ট্রদূত
৬০. এম এ কাদের সরকার, সাবেক সচিব
৬১. নাসিমা বেগম, এনডিসি, সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
৬২. জেসমিন আরা বেগম, সাবেক সদস্য, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
৬৩. মো. শহীদুল ইসলাম, সাবেক রাষ্ট্রদূত
৬৪. সেলিনা আফরোজ, সাবেক সচিব
৬৫. পবন চৌধুরী, সাবেক সচিব
৬৬. খন্দকার শওকত হোসাইন, সাবেক সচিব
৬৭. অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান, সাবেক সভাপতি, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ
৬৮. এ কে এম শামীম চৌধুরী, সাবেক প্রধান তথ্য কর্মকর্তা
৬৯. মিজানুর রহমান, সাবেক সচিব
৭০. ড. রফিকুল ইসলাম, সাবেক নির্বাচন কমিশনার
৭১. মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন মিয়া, অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি
৭২. মো. আবুল কাশেম হাওলাদার, অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি
৭৩. এম সানাউল হক, অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি
৭৪. অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নুরুল হক, সাবেক মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
৭৫. ড. সুরাইয়া আক্তার, অধ্যাপক ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিবিদ্যালয়
৭৬. অধ্যাপক ডা. বরেন চক্রবর্তী
৭৭. অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী
৭৮. মো. আলী ইমাম চৌধুরী, বিপিএম, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি
৭৯. বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওয়ালিউর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি
৮০. মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি
৮১. মালিক খসরু, সাবেক এআইজি
৮২. ইব্রাহীম হোসেন খান, সাবেক সচিব
৮৩. আফরোজা খানম, সাবেক সচিব
৮৪. মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারী, সাবেক সচিব
৮৫. ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মাদ নুরুল হুদা, চেয়ারম্যান, রাজউক
৮৬. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. রকিবুর রহমান, বিপি (অব.)
৮৭. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফ আহমেদ খান (অব.)
৮৮. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনিস জামান (অব.)
৮৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সিরাজুল ইসলাম শিকদার, এনডিসি, পিএসসি (অব.)
৯০. কমোডর এ ডব্লিউ চৌধুরী (অব.)
৯১. মাসুদুজ্জামান, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও লেখক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন