শেষ হতে চলেছে ২০২৩ সাল। প্রতি বছরের মতো এ বছরও অসংখ্য চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে হলিউডে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিনোদন ইন্ডাস্ট্রি হলিউড এ বছর ব্যবসাসফল সিনেমার বেশ বিরাট তালিকা বহণ করেছে। এ বছর প্রত্যাশিত অনেক চলচ্চিত্র যেমন বক্স অফিসে জাদু চালাতে পারেনি, তেমনি বহু চলচ্চিত্র প্রত্যাশা ছাপিয়ে বক্স অফিস কাঁপিয়েছে।
যার মধ্যে অন্যতম বার্বি। মার্টিন স্কোরসেজি ও লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওর ‘কিলারস অফ দ্য ফ্লাওয়ার মুর’ যেমন বক্স অফিসে আধিপত্য দেখাতে ব্যর্থ, সেখানে গ্রেটা গারউইগ ও মার্গট রবি জুটির বার্বি বক্স অফিসের আয়ে শীর্ষস্থানে থেকেই বছর শেষ করেছে। আন্তর্জাতিক বক্স অফিস ও আইএমডিবি’র বাণিজ্য সূত্র অনুসারে, চলুন দেখে নেওয়া যাক এ বছর বক্স অফিসে আয়ের তালিকায় কোন কোন চলচ্চিত্র হলিউডকে এনে দিয়েছে আর্থিক সাফল্য। সবচেয়ে বেশি আয় করা চলচ্চিত্রগুলোর তালিকা দেখে নিন একনজরে-
অ্যান্ট-ম্যান অ্যান্ড দ্য ওয়াস্প: কোয়ান্টুম্যানিয়া : মার্ভেলের ‘অ্যান্ট-ম্যান অ্যান্ড দ্য ওয়াস্প: কোয়ান্টুম্যানিয়া’ ২০২৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেয়েছিল।
পল রুড অভিনীত চলচ্চিত্রটি বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে আয় করেছে ৪৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যার মধ্যে যুক্তরাস্ট্রে আয় করেছে ২১৪.৫ মিলিয়ন এবং আন্তর্জাতিকভাবে আয় করেছে ২৬১.৫ মিলিয়ন। হলিউডের সর্বাধিক আয়ের তালিকায় দশ নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে এটি।
এলিমেন্টার : ডিজনির অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র এলিমেন্টাল এ বছর ১৬ জুন মুক্তি পায়। সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী ৪৯৬ মিলিয়নের বেশি আয় করেছে।
ঘরোয়া বক্স অফিসে ১৫৫ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ৩৪১ মিলিয়নের বেশি আয় করে বছরের সর্বাধিক আয়ের তালিকায় নয় নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে এটি।
মিশন: ইম্পসিবল - ডেড রেকনিং পার্ট ওয়ান : টম ক্রুজের দুনিয়া কাঁপানো ফ্রাঞ্চাইজির সপ্তম চলচ্চিত্র ‘মিশন: ইম্পসিবল - ডেড রেকনিং পার্ট ওয়ান’ এ বছর ৮ জুলাই মুক্তি পায়। সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী ৫৬৭.৫ মিলিয়নের বেশি আয় করেছে। ঘরোয়া বক্স অফিসে ১৭২ মিলিয়ন ও আন্তর্জাতিক বাজারে আয় করেছে ৩৯৫ মিলিয়নের বেশি। বছরের সর্বাধিক আয়ের তালিকায় আট নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে এটি।
দ্য লিটল মারমেইড : ডিজনির সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র ‘দ্য লিটল মারমেইড’ এ বছর দর্শকপ্রিয়তার পাশাপাশি ৫৬৯ মিলিয়নের বেশি আয় করেছে। ঘরোয়া বক্স অফিসে ২৯৮ মিলিয়নের বেশি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ২৭১ মিলিয়নের বেশি আয় করে সিনেমাটি এ বছর হলিউডের সর্বাধিক আয়ের তালিকায় সাত নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে।
স্পাইডার-ম্যান: এক্রস দ্য স্পাইডার-ভার্স : মার্ভেলের প্রত্যাশিত চলচ্চিত্র ‘স্পাইডার-ম্যান: এক্রস দ্য স্পাইডার-ভার্স’ এ বছর ২ জুন মুক্তি পায়। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী আয় করতে পারেনি এটি। এ বছর মার্ভেলের অন্যান্য চলচ্চিত্রের মতো স্পাইডারম্যান অ্যানিমেশনটিও কিছুটা হতাশ করেছে দর্শকদের। সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী আয় করেছে ৫৬৯ মিলিয়নের বেশি যার মধ্যে ঘরোয়া বক্স অফিসে আয় করেছে ৬৯০ মিলিয়নের বেশি। যার মধ্যে ঘরোয়া বক্স অফিসে ৩০৯ মিলিয়নের বেশি এবং আন্তর্জাতিকভাবে ৩৮১ মিলিয়নের অধিক আয় করেছে এটি। বছরের সর্বাধিক আয়ের তালিকায় ছয় নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে এটি।
ফার্স্ট এক্স : ফার্স্ট এন্ড ফিউরিয়াস ফ্র্যাঞ্চাইজির আরেকটি ধামাকা ‘ফার্স্ট এক্স’ এ বছর বক্স অফিসে বেশ সাড়া ফেলেছে। ২০২৩ সালের ১৯ মে মুক্তিপ্রাপ্ত ভিন ডিজেলের সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী আয় করেছে ৭০৪.৭ মিলিয়নের বেশি। ঘরোয়া মার্কেটে এটি ঘরে তুলেছে ১৪৬ মিলিয়ন ও আন্তর্জাতিক বাজারে ৫৫৮ মিলিয়নের বেশি আয় করে নিয়েছে এটি। হলিউডে এ বছরের সর্বাধিক আয়ের তালিকায় পাঁচ নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে এটি।
গার্ডিয়ানস অফ দ্য গ্যালাক্সি ভলিউম ৩ : মার্ভেলের আরেকটি চলচ্চিত্র এ বছর সর্বাধিক আয়ের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। ৫ মে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী আয় করেছে ৮৪৫ মিলিয়নের বেশি। যার মধ্যে আমেরিকায় ৩৫৯ মিলিয়ন এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ৪৮৬ মিলিয়নের বেশি আয় করেছে এটি। বছরের সেরা আয়কারী সিনেমার তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে ‘গার্ডিয়ানস অফ দ্য গ্যালাক্সি ভলিউম ৩’।
ওপেনহাইমার : বছরের সবচেয়ে আলোচিত চলচ্চিত্র ক্রিস্টোফার নোলান ও সিলিয়ান মারফি জুটির ওপেনহাইমার। দর্শক ও সমালোচকদের মন জয়ের পাশাপাশি বক্স অফিসেও দাপট দেখিয়েছে ওপেনহাইমার। পারমানবিক বোমার উৎপত্তি নিয়ে তৈরি বায়োপিকটি বিশ্বব্যাপী আয় করে নিয়েছে ৯৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ঘরোয়া মার্কেটে ৩২৬ মিলিয়ন আয়ের পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে ৬২৬ মিলিয়নের বেশি আয় করেছে এটি। এ বছর সেরা আয়কারী হলিউড সিনেমার তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওপেনহাইমার।
দ্য সুপার মারিও ব্রোস ডট মুভি : এ বছর বেশ চমক দেখিয়েছে বলা যায় এই অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রটি। দর্শক প্রত্যাশা ছাপিয়ে ১.৩ বিলিয়ন আয় করে নিয়েছে এটি। ঘরোয়া মার্কেটে প্রায় ৫৭৪ মিলিয়ন ও বিশ্ব বাজারে ৭৮৬ মিলিয়ন আয়ের চমক দেখিয়েছে চলচ্চিত্রটি। এ বছর সেরা আয়কারী হলিউড সিনেমার তালিকায় ওপেনহাইমারকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দ্য সুপার মারিও ব্রোস ডট মুভি।
বার্বি : এ বছরটাই যেন ‘বার্বি’ময়। ট্রেলার প্রকাশের পর থেকেই গোলাপি জগতে মাত হয়ে ছিলেন কোটি দর্শক অনুরাগী। আর সিনেমা মুক্তির পর ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষে জায়গা করে নেয় বার্বি। বার্বির কল্পিত জগতের বাস্তবায়ন করে দর্শক সমালোচকদের প্রশংসায় ভেসেছেন পরিচালক গ্রেটা গারউইগ ও অভিনেত্রী মার্গট রবি। সবচেয়ে বেশি চমক দেখিয়েছে বক্স অফিসে। এ বছর সবাইকে চমকে দিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রায় দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘরে তুলেছে বার্বি। বক্স অফিসের রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্বব্যাপী ১.৪৪ বিলিয়নের বেশি আয় করেছে বার্বি। ঘরোয়া মার্কেটে সিনেমাটি আয় করেছে প্রায় ৬৩৬ মিলিয়নের বেশি। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তুলে নিয়েছে ৮০৫ মিলিয়নের বেশি। সব মিলিয়ে এ বছর বক্স অফিসের লাগাম ধরে রেখেছিল বার্বি। বছর শেষে হলিউডের শীর্ষ আয়কারী সিনেমা হিসেবে বার্বি শীর্ষস্থান দখল করেছে। সর্বাধিক আয়ের পাশাপাশি এবার অস্কারের মঞ্চেও আলো ছড়াতে প্রস্তুত সিনেমাটি।
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন