সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধের হুমকি দিলেন মুহিব !

উচ্চ আদালত কর্তৃক প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশনার পর ইলেকশন কমিশন থেকে প্রতীক বরাদ্দ না পেয়ে আন্দোলনে নেমেছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বনাথ পৌরমেয়র মুহিবুর রহমান। বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসানের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন মুহিব ও তাঁর কর্মী-সমর্থকরা। পরে জেলা প্রশাসকের অনুরোধে কার্যালয় প্রাঙ্গণ ছেড়ে সড়কে অবস্থান নেন তারা।


প্রায় দুই ঘণ্টা এ কর্মসূচি পালনের পর বিশ্বনাথ পৌরশহরে গিয়ে মানববন্ধন করেন মুহিব ও তাঁর কর্মী-সমর্থকরা। এ মানববন্ধনে বক্তব্য প্রদানকালে আজ (বৃহস্পতিবার) বিকাল পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়ে মুহিব বলেন- বিকালের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ না দিলে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করা হবে।

 

 


সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে- আদালতের নির্দেশনার বিপরীতে আপিল করা হবে। বিষয়টি আদালতকেন্দ্রীক তাই বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।


গত বছরের ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত পৌরনির্বাচনে সিলেটের বিশ্বানাথে প্রথম পৌরমেয়র নির্বাচিত হন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জগ প্রতীক নিয়ে ৮ হাজার ৪৭৪ ভোট পেয়েছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফারুক আহমদ নৌকা প্রতীক নিয়ে পান ৩ হাজার ২৬৩ ভোট।


পৌরমেয়র নির্বাচিত হওয়ার ১ বছরের মাথায় তিনি সংসদ সদস্য প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসন থেকে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। তবে ইলেকশন কমিশনের ‘স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা পদ ছেড়ে প্রার্থী হতে হবে’ এই নির্দেশনাকে অমান্য করে মেয়র পদে বহাল থেকে মুহিব মনোনয়ন কিনেন। ফলে যাচাই-বাছাইয়ে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান। তবে নাছোড়বান্দা মুহিব প্রার্থিতা ফিরে পেতে ইলেকশন কমিশনে গত ১০ ডিসেম্বর আপিল করেন। পাঁচ দিন পর আপিলটি খারিজ করে দেয় ইসি।

 


এরপর প্রার্থিতা ফেরাতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন মুহিবুর রহমান। তার দায়েরকৃত রিটের শুনানির ধার্য্য তারিখে (২০ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাটর্নি জেনারেল আমীর উদ্দিন অংশ নিয়ে এর বিরোধিতা করেন। পরে বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথ ও ইকবাল করিম’র যৌথ বেঞ্চ রিটের আদেশের জন্যে ২৭ ডিসেম্বর পরবর্তী তারিখ ধার্য্য করেন। কিন্তু এর দুইদিন আগে রবিবার (২৪ ডিসেম্বর) রিটের আদেশ দেন হাইকোর্ট। আদেশে বিচারপতি মো. ইকবাল কবির এবং বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ মুহিবের প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। 


হাইকোর্ট মুহিবের প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দিলেও ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেটি লিখিত আকারে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসে পৌঁছেনি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ফলে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়নি মুহিবকে।


এদিকে, প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রার্থীকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নামার সুযোগ না থাকলেও ২৫ ডিসেম্বর থেকে বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরের বিভিন্ন স্থানে ‘ট্রাক’ প্রতীকসম্বলিত মুহিবুর রহমানের নির্বাচনি প্রচারণার পোস্টার সাটানো দেখা যায়। এছাড়া বিভিন্ন গাড়িতেও লাগানো দেখা যায় এমন পোস্টার। এই নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ২৬ ডিসেম্বর বিকালে বিশ্বনাথ উপজেলা পৌরপ্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মুহিবকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন।  

 


অর্থদণ্ড পেয়েও থামেননি মুহিবুর রহমান। বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে সন্ধ্যারাত পর্যন্ত তাঁর পক্ষে বিভিন্ন স্থানে মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হয়। এছাড়া তিনিও বিশ্বনাথের বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ এবং লিফলেট বিতরণ করেন। এগুলো মুহিব তার ফেসবুক আইডিতে প্রচারও করেন। 


অন্যদিকে, হাইকোর্টের নির্দেশনার ৪ দিনের মাঝেও প্রতীক বরাদ্দ না পেয়ে আন্দেলনে নেমেছেন মুহিবুর রহমান। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা শেখ রাসেল হাসানের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন মুহিব ও তাঁর কর্মী-সমর্থকরা। এসময় সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয় এবং মুুহিবের সমর্থকদের হাতে প্রতীক বরাদ্দের দাবিসংবলিত বিভিন্ন ধরণের প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।  


প্ল্যাকার্ডগুলোতে লেখা ছিলো- ‘জেলা প্রশাসকের অবৈধ হস্তক্ষেপ বন্ধ কর’, ‘হাইকোর্টের আদেশ মানতে হবে’, ‘অযোগ্য নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চাই’, ‘২৪ শে ডিসেম্বর হাইকোর্ট প্রার্থিতা বহালের রায় দিলেও এখন পর্যন্ত প্রতীক বরাদ্দ না দেওয়া ষড়যন্ত্র নয় কি?’, ‘নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নয়’ ইত্যাদি। 

 


পরে জেলা প্রশাসকের অনুরোধে কার্যালয় প্রাঙ্গণ ছেড়ে সড়কে অবস্থান নেন মুহিব ও তার সমর্থকরা। এসময় মুহিব উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন- নির্বাচন কমিশন নিরপক্ষ ভূমিকা পালন করছে না। যে কারণে আদালতের নির্দেশনার পরও আমাকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। 


এখানে প্রায় ২ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন মুহিব তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বিশ্বনাথ পৌরশহরে চলে যান। সেখানে তারা মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে বক্তব্য প্রদানকালে মুহিব বলেন- আজ (বৃহস্পতিবার) বিকালের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ না দিলে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করা হবে।


প্রতীক বরাদ্দ না দেওয়ার বিষয়ে জানতে গেলে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান সাংবাদিকদের বলেন- আদালতের ওই নির্দেশনার বিপরীতে আপিল করা হবে। এরজন্য ইতোমধ্যে আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে ইলেকশন কমিশন। বিষয়টি আদালতকেন্দ্রীক তাই এর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।

 

 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন