আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক প্রতীক) হিসেবে লড়ছেন ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়িকা মাহিয়া মাহি। নির্বাচনী প্রচারণার শেষদিকে এসে মাহি সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সিনেমায় জনপ্রিয় এই নায়িকা এরই মধ্যে তানোর-গোদাগাড়ীর মানুষের মাঝেও জায়গা করে নিয়েছেন। ফলে তিনি যেদিকেই যাচ্ছেন, তাকে একনজর দেখার জন্য, তাঁর সঙ্গে একটি ছবি তোলার জন্য হলেও শত শত মানুষ ভিড় করছেন রাস্তার পাশে।
মাহি বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে গিয়ে বর্তমান এমপি ফারুক চৌধুরীর নানা অনিয়ম-দুর্নীতি তুলে ধরেও ভোটারদের তাঁর পক্ষে টানার চেষ্টা করছেন। নারীদের বুকে জড়িয়ে নিয়ে চাচ্ছেন ভোট। ভোটাররাও তাকে দিচ্ছেন আশ্বাস।
জয়ের ব্যাপারে সুদৃঢ় আশাবাদী মাহি বলেন, ‘নির্বাচনে জয়ী হলেও আমি অভিনয় ছাড়ব না।
অভিনয় এবং রাজনীতি দুটিই আমি উপভোগ করি। অভিনয় আমার পেশা, আর রাজনীতি হলো জনসেবা। তবে দুটিই জনসেবার কাজে ব্যবহার করব।’
আজ রবিবার দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল এলাকায় গণসংযোগকালে কালের কণ্ঠকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
কালের কণ্ঠের পাঠকদের জন্য মাহির সেই সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।
বর্তমান নির্বাচন পরিস্থিতি কেমন দেখছেন?
মাহিয়া মাহি : আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। নির্বাচনী পরিবেশও সুন্দর। কিন্তু হঠাৎ করে ফারুক চৌধুরীর লোকজন গতকাল রাতে (শনিবার দিবাগত) আমার একটি নির্বাচনী ক্যাম্প আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। আমাকে এর আগেও নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে।
নির্বাচনী পরিবেশ তারা খারাপ করার চেষ্টা করছে। তবে তারা কাপুরুষ। তারা রাতের আঁধারেই পারবে। কিন্তু দিনের বেলায় পারবে না। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, তারা আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। তারা আমার জনপ্রিয়তা দেখে ভয় পাচ্ছে। তারা বুঝতে পেরেছে যে মাহি তো ভালো করছে।’
অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতিবিদ, আপনি কোনটাকে এগিয়ে রাখবেন?
মাহিয়া মাহি : অভিনয় হচ্ছে আমার পেশা। আর রাজনীতি হচ্ছে মানুষের সেবা করা। জনগণের কাছাকাছি যাওয়া। জনগণ আর রাজনৈতিক নেতার মধ্যে যে দূরত্ব সেটি আমি ফিল করছি। আমি দুটি নিয়েই থাকতে চাই। দুটি দিয়েই মানুষকে সেবা করতে চাই। সিনেমা করে পাওয়া অর্থ মানুষের কাজে লাগাতে চাই।
: নির্বাচনে জয়ী হলে আপনি কী করবেন?
মাহিয়া মাহি : আমার প্রথম কাজ হলো মানুষকে সম্মান করা। শিক্ষকদের প্রথমে সম্মান দেব। যারা দিনের পর দিন অবহেলার শিকার হয়েছেন। তাদের আমি ফুলের মালা পরাব।
আপনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
মাহিয়া মাহি : স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাকে কাছে টেনে নিয়েছে। আমার সঙ্গে সব শ্রণির মানুষ আছে। সবাই আমাকে ভালোবাসছে। মানুষও আসলে পরিবর্তন চায়। এই এলাকার যিনি এমপি আছেন, তার কারণে মানুষ রাজনীতির ওপর বিরক্ত। আমি সেখান থেকে মানুষকে আবার ফেরাতে চাই।
ভোটারদের আপনি কী ধরনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন?
মাহিয়া মাহি : ভোটারদের আমি বলছি, তারা যেন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করে আমার ট্রাক মার্কায়। এই এলাকার উন্নয়নের জন্য, সরকারি ভাতার সুষ্ঠু বণ্টনের জন্য, গভীর নলকূপের পানি সঠিকমতো পাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য, রাস্তা-ঘাটের উন্নয়নের জন্য আমাকে ভোট দিতে বলছি। আমি এসব করব বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আমি জয়ী হলে সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজের অর্থে উন্নয়ন কাজে হাত দেব। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাইব। আর পাঁচ বছরে না পারলে যেন জনগণ এরপরে ভোট চাইতে এলে আমাকে ঝাঁটাপেটা করে সেটিও বলছি।
আপনি এত দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করলেন কি নারী হিসেবে?
মাহিয়া মাহি : নারী হিসেবে আমি দ্রুত জনপ্রিয়তা পাইনি। এখনকার যিনি এমপি তার ব্যর্থতার কারণে আমি জনপ্রিয় হয়েছি। উনি মানুষকে সম্মান করেন না। তিনি শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন, শিক্ষককে সম্মান করেন না। কোনো একটা মিটিংয়ে ৫০ জন শিক্ষক ছিলেন জুতা ছুড়ে মেরেছেন। কোথাও কোথাও দেখলাম যে নেতাকর্মীর মোবাইল আছাড় মেরে ভেঙে ফেলা হয় সবার সামনে। আসলে তিনি কাউকে সম্মান করেন না। সরকারি ভাতার জন্য গরিব মানুষকে টাকা দিতে হয়। করোনার সময় সরকার যে অনুদান দিয়েছে, সেই টাকাও লুটপাট হয়েছে। এলাকার উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই মানুষ আমাকে চায়।
নারী হিসেবে কী কী প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হচ্ছে?
মাহিয়া মাহি : নারী হওয়ার কারণে আমাকে নানাভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু আমি এসব বাধায় ভীত নই। আমি যোদ্ধা। আমি লড়াই করে এগিয়ে যেতে চাই। ওরা আমার সামনে আসতে পারবে না। যা করছে দূর থেকে। এসব বাধা উপেক্ষা করে আমি নির্বাচনে জয়ী মানুষের সেবা করতে চাই।
অনেকেই বলছে, এমপি হওয়ার জন্য আপনি রাজনীতিতে নেমেছেন?
মাহিয়া মাহি : এটা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। আমি অনেক দিন ধরেই এই এলাকার মানুষের পাশে আছি। তাদের পাশে আজীবন থাকব। হারি-জিতি থাকব। পালিয়ে যাব না।
কোন শ্রেণির মানুষের বেশি সমর্থন পাচ্ছেন?
মাহিয়া মাহি : একেবারে খেটে খাওয়া মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি বেশি। যারা মাঠে কাজ করে, বাড়িতে কাজ করে, তারা আমাকে বুকে টেনে নিচ্ছেন। তাদের ভালোবাসায়ই আমি জয়ী হব।
: জয়ের ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী?
মাহিয়া মাহি : জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত, ইনশাআল্লাহ। কারণ পরীক্ষা দিতে নেমেছি পাস করার জন্যই তো। আমার নেতাকর্মীরা শুধু নয়, সাধারণ জনগণও আমাকে ভালোবাসে। আমি সেই ভালোবাসাটুকু পেতে চাই।
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন