সৌদি-আমিরাতসহ ব্রিকসে নতুন ৫ দেশ, বিশ্লেষকরা যা বলছেন

সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, ইরান ও ইথিওপিয়া ১ জানুয়ারি বিকাশমান অর্থনীতির জোট ব্রিকসে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেছে। এতে জোটটির সদস্যসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ১০ হলো। জোটটির মূল সদস্য ছিল ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে অন্তর্ভুক্ত করে ব্রিকস জোটের সম্প্রসারণ আরব বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতিকে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ দেবে এবং বিশ্বব্যাপী এ জোটের প্রভাবকে বাড়িয়ে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

 

দুবাইয়ের হেরিয়ট-ওয়াট বিশ্ববিদ্যালয়ের এডিনবার্গ বিজনেস স্কুলের ফিন্যান্সের সহকারী অধ্যাপক উল্লাস রাও বলেন, ‘সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বহুপক্ষীয় জোট ব্রিকসের সম্প্রসারণ বিশ্ব অর্থনীতির মুখোমুখি চলমান ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে অত্যন্ত ভালো লক্ষণ। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত—উভয়ই মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে এবং সবচেয়ে বড় সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের আবাস হিসাবে সবচেয়ে ধনী দেশ। তারা বিনিয়োগ, ব্যবসা ও বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রচুর প্রবৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করে।’

 

উচ্চ সুদের হার, মুদ্রাস্ফীতি, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাসহ বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে।

 

কারণ তারা তাদের অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করার দিকে মনোনিবেশ করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল অনুসারে, বিশ্বের ২০টি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে সর্বোচ্চ বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার সৌদি আরবের অর্থনীতিতে। ২০২২ সালে দেশটিতে ৮.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল এহং এ হার ২০২৩ সালে ০.৮ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। রিয়াদ তেল শিল্পের বাইরের অর্থনীতিতেও ব্যাপকভাবে মনোনিবেশ করছে।

 

 

অন্যদিকে আরব বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি সংযুক্ত আরব আমিরাত আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্ক জোরদার করতে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করছে। তারা ২৬টি ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষরের দিকে কাজ করছে। কারণ তারা আরো বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করতে চায়।

ডালমা ক্যাপিটালের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা গ্যারি ডুগান বলেছেন, ‘অতীতে ব্রিকসের ভাবমূর্তি ছিল আর্থিকভাবে দুর্বল একটি গোষ্ঠীর। সৌদি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের আর্থিক শক্তি সেই ধারণাটিকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করবে।

 

এ ছাড়া সমষ্টিগতভাবে আমরা আশা করি, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সুবিধাজনক শর্তে ব্রিকসের সদস্য দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির বাজারে সহজে প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে।’

 

তেলের বাজার
গবেষণা সংস্থা এমইউএফজিতে পণ্য, ইএসজি ও উদীয়মান বাজার গবেষণার প্রধান এহসান খোমান বলেছেন, জোটে প্রধান তেল রপ্তানিকারকদের দুটিকে যোগ করা ‘ওপেক প্লাসে তাদের দর কষাকষির ক্ষমতা ও প্রভাবকে শক্তিশালী করবে এবং ব্রিকসের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তাদের কৌশলগুলো সারিবদ্ধ করতে জায়গা দেবে।’

ওপেক প্লাস তেলের বাজারের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, রাশিয়াসহ বিশ্বের সবচেয়ে বড় অপরিশোধিত উৎপাদকরা এ জোটের অন্তর্ভুক্ত। পাশাপাশি ব্রিকসের দুই প্রধান সদস্য চীন ও ভারত উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে শক্তিশালী জ্বালানি সম্পর্কসহ বিশ্বের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম তেল গ্রাহক।

স্থানীয় মুদ্রার প্রভাব বৃদ্ধি
এই নতুন দেশগুলো ব্রিকসে যোগদানের ফলে স্থানীয় মুদ্রায় আরো দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আশা করা হচ্ছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ কার্লা স্লিম বলেছেন, ‘ব্রিকসে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর যুক্ত হওয়ার পর থেকে আমরা যে প্রভাবটি ঘনিষ্ঠভাবে দেখছি তা হলো, স্থানীয় মুদ্রায় আরো দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সম্ভাবনা, বিশেষত জুলাইয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভারতের চুক্তির পর এবং ইতিমধ্যে মিসর ভারতের সঙ্গে একই রকম আলোচনায় রয়েছে।’ 

গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভারত আন্তঃসীমান্ত লেনদেনে স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহারকে উন্নীত করতে এবং তাদের অর্থপ্রদান ও বার্তাপ্রেরণ ব্যবস্থাকে আন্তঃলিংক করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠায় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তির পর ভারত দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে ভারতীয় মুদ্রায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের তেল কিনতে শুরু করে।

নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা?
উল্লাস রাওয়ের মতে, ব্রিকস জোট প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ব্যবস্থার সংশোধন এবং মার্কিন ডলারের বিকল্প মুদ্রার বিকাশের আহ্বান আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, যেহেতু বিশ্ব মার্কিন ডলারের বিকল্পের দিকে ঝুঁকছে, আজকে কম প্রাসঙ্গিক হলেও, ব্রিকসের সাধারণ মুদ্রার উত্থান ডলারের শক্ত ঘাঁটিকে ঝুঁকিতে ফেলতে একটি প্রধান আশ্রয়দাতা হিসেবে কাজ করতে পারে। গ্লোবাল সাউথের একটি শক্তিশালী কণ্ঠ হিসেবে বৃহত্তর প্রভাব গ্রহণ করতে ব্রিকস প্রস্তুত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

ইউরেশিয়া গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক প্রধান আয়হাম কামেলও বিশ্বব্যাপী আরো বেশি প্রভাব বিস্তারকারী এ জোটের ব্যাপারে উৎসাহী। তিনি বলেছেন, ‘সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও মিসরের ব্রিকসে যোগদানে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। যা সব দেশের রাজনৈতিক সহযোগিতার মাত্রাকে প্রভাবিত করবে। আরব দেশগুলো বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিতে তাদের প্রভাবের উন্নতির পথ খুঁজছে এবং পশ্চিম থেকে বিচ্ছিন্নতা এড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মনে হচ্ছে।’

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন