ট্রেনে আগুনের পর র‍্যাবের অভিযান, বোমা বানানোর সময় আটক ৩

রাজধানীর গোপীবাগে ট্রেনে আগুনের পর শনিবার (৬ জানুয়ারি) মধ্যরাতে ঢাকার জুরাইন রেললাইন সংলগ্ন বস্তি থেকে তিনজনকে আটকের কথা জানিয়েছে র‌্যাব। আলমগীর, রাব্বী ও কাশেম নামের তিনজনকে রেললাইনের পাশেই একটি ঘর থেকে পেট্রল বোমা বানানোর সময় আটক করার কথা কথা জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।

শনিবার রাত দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ট্রেনে আগুন লাগার পর আমাদের গোয়েন্দারা তথ্য পায় জুরাইন বস্তিতে কিছু সন্দেহজনক ব্যক্তি আনাগোনা করছেন। এরপর র‌্যাব-৩ অভিযান চালিয়ে আলমগীর, রাব্বী ও কাশেম নামের তিনজনকে আটক করে।

 

তারা এখানে বসে বিপুল পরিমাণে ককটেল ও পেট্রল বোমা বানাচ্ছিল। ৩০টি তৈরি ককটেল ও ২৮টি পেট্রল বোমা পাওয়া গেছে।’

 

ট্রেনের আগুনের সঙ্গে তাদের কোনো যোগসূত্র রয়েছে কি না জানতে চাইলে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা স্পষ্টই নাশকতা। যাত্রীরা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, তারা কয়েকজনকে দেখেছেনও।

 

আর জুরাইনে যেখান থেকে এই তিনজনকে ধরা হলো, সেখান থেকে ট্রেনে খুব সহজে অগ্নিসংযোগ করা সম্ভব। কোনো সম্ভাবনাই আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না। তাদেরকে ব্যপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’

 

এ অভিযান রাত ১২টার পর হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সময় পেয়েছি কম, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা শুধু আয়নাল নামের এক ব্যক্তির কথাই বলেছেন।

 

তাদের আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

 

র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘জায়গাটা একদম রেললাইনের পাশে। আমরা মনে করি, এখানে বসে ট্রেন বা যেকোনো জায়গায় নাশকতা করা সম্ভব।’

এর আগে ট্রেনে আগুনে চারজনের প্রাণহানির পর জুরাইন রেলগেট সংলগ্ন বস্তির একটি বাড়ি ঘিরে রাখার বার্তা দিয়েছিল পুলিশের বিশেষ এ ইউনিট। তখন সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ ককটেল, পেট্রল বোমা ও বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছিল।

 

র‍্যাবের বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিটও সেখানে পৌঁছে কাজ করছে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়।

 

 

পরে অভিযান শেষে মধ্যরাতে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, ‘আটক ব্যক্তিদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। তাদের মাদকাসক্ত বলেও মনে হয়েছে। তাদের কাছ থেকে আয়নাল নামের এক ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে, যিনি তাদের দিয়ে ককটেল ও পেট্রল বোমা বানাচ্ছিলেন। এর আগেও আয়নাল তাদের কাছ থেকে বোমা বানিয়ে নিয়েছেন। সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় তারা এর আগে সরবরাহ করেছে।’

তবে আয়নালের কোনো পরিচয় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জানাতে পারেননি জানিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, ওই ব্যক্তি ফতুল্লায় থাকেন। বিভিন্ন সময় নাশকতার জন্য আয়নালের কাছ থেকে টাকা পেয়ে তারা বোমা বানিয়েছে।

এদিকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনায় দুই যাত্রীকে সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তারা কুষ্টিয়া থেকে উঠেছিলেন ওই ট্রেনে। পুলিশ বলছে, যে দুই যাত্রীকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে, তারা কুষ্টিয়া থেকে উঠেছেন। তাদের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। পুলিশ কর্মকর্তারাও এ অগ্নিকাণ্ডকে নাশকতা হিসেবেই দেখছেন।

 

বিরতিহীন এ ট্রেন সবশেষ থেমেছিল ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশনে। সেখান থেকে ছেড়ে আসার পর শুক্রবার রাত ৯টার দিকে গন্তব্যস্থল কমলাপুর পৌঁছনোর কিলোমিটার দুয়েক আগে আগুনের কারণে থেমে যেতে বাধ্য হয় ট্রেনটি। আগুনে ট্রেনের তিনটি বগি পুড়ে যায় এবং উদ্ধার করা হয় শিশুসহ চারজনের লাশ। নিহতদের তিনজনই একই পরিবারের, যারা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

 

বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনাস্থলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারি বিভাগের উপকমিশনার ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘ট্রেনের দুজন যাত্রীকে স্পটেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের আমরা আটক করিনি, বলতে পারেন নজরদারিতে রেখেছি। ফরিদপুরের ভাঙ্গার পর ট্রেনটি আর থামেনি। ঢাকা থেকে উঠে কেউ এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে মনে হয় না। কারণ এটির সর্বশেষ স্টপেজ ছিল ভাঙ্গা স্টেশন।’

শুক্রবার রাতে পদ্মা সেতু হয়ে যশোরের বেনাপোল থেকে ঢাকায় আসা বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে আগুন লাগলে সেটি শেষ গন্তব্যস্থল কমলাপুর পৌঁছনোর কিলোমিটার দুয়েক আগে থেমে যেতে বাধ্য হয়। ট্রেনটির তিনটি বগি পুড়ে যায়।

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন