একটু ছাড় দিন না! যে ছাড়ে আপনার প্রভূত্ব চলে যাবে সেটুকু ছাড় দিন। মানুষ মানুষের প্রভূ হওয়া ঠিক নয়। রাষ্ট্রের ক্ষতি
রাজু আহমেদ। কলাম লেখক।|জিবি নিউজ ||
যে শ্বাশুড়ি তার শ্বাশুড়ি থেকে যন্ত্রণা পেয়েছে সে যদি তার পুত্রবধূকেও সেভাবে যন্ত্রণা দেয় তবে পরিবর্তনের সুযোগ থাকে না। অথচ সেই শ্বাশুড়ি যদি তার শ্বাশুড়ি থেকে প্রাপ্ত কষ্টগুলোর জ্বালা অনুধাবন করে পুত্রবধূকে কন্যাসম আদরে লালন করে তবে কী-যে সুন্দর পরিবার রচনা করা সম্ভব!-সেটা ভাবা হয়েছে কখনো? আটকে রাখার চেয়ে ছেড়ে দেয়ার যে সূখ, জোর করার চেয়ে ভালোবেসে আদায় করা কতোটা প্রশান্তির সেটা না বোঝা অবুঝদের বোঝাবে কে?
অস্থায়ী ক্ষমতা পেয়ে সেটার সুদ আদায়কারীদের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন করা যায়! কাউকে অধীনে পেলাম বলে তার সাথে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করা আদৌ ঠিক কি-না সে প্রশ্ন শিক্ষিতজনের মাথায় আসা উচিত! পেলাম বলে ইচ্ছামত ঝাঁকালাম-সম্পর্ক টিকবে? যাদের ক্ষমতার হাত অতি লম্বা, সেটাও তো একদিন খাঁটো হয়ে আসে! কিছুই থাকে না! স্মৃতিরাও ক্ষয়ে যায়! যারা সীমার বাইরে গিয়েছে তারা সস্মান পেয়েছে? টিকে থেকেছে? ভয় পাওয়া আর শ্রদ্ধা পাওয়া এক কথা নয়! এই বুঝ যতোদিনে ভেতরে না জন্মাবে ততোদিন কী মানুষের মনুষ্যত্ববোধ আদৌ ফিরবে?
একটু ছাড় দিয়ে যদি কাজ হয়, অধিক ভালোবাসা পাওয়া যায়-তবে সে সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক নয়। মানুষকে বন্দী করে, জিম্মি করে কাজ আদায় করা যায় কিন্তু অন্তরে সে ভালোবাসা থাকে না। কারো সমস্যা থাকতে পারে, কেউ অসুবিধায় পড়তে পারে-তাই ছাড় দেয়ার মানসিকতা সর্বত্র রাখা উচিত। এখনই করতে হবে, এখনই আসতে হবে-এমন হুলিয়া চাপিয়ে দিলে মানুষ বাধ্য হয় বটে কিন্তু মুখের গালি মন আটকাতে পারে না। যে ক্ষমতা আমার নয় সেটা ব্যবহার এবং অপব্যববহারের মাঝে সীমা রাখা উচিত! ভালোবেসে, কথা বলে যা পাওয়া যায় সেখানে কানুনের ভয়, লাঠির ভীতি দেখিয়ে আদায় করতে যাওয়া বোকামি!
ক্ষমতা পেলেই দেখানো ঠিক নয়। কী হয় অতিরিক্ত ক্ষমতা দেখিয়ে? দমানো যায়! ভালোবেসে যা যায় তা আর কিছু দিয়ে করা যায়? সবাই কথা শুনবে না। সবাইকে কথা শোনাতে যাওয়াও ঠিক না। সবাই শুধরে গেলে বিচারালয়-জেলখানার দরকার ছিল না! তাই বলে হাল ছেড়ে দেয়াও ঠিক নয়! তবে বিশৃঙ্খলা হবে! সাপ কামড় দেবে না ঠিক, তবে, ফোঁস করতে যে সাপ ভুলে যায় সে সাপের বেঁচে থাকার যোগ্যতাও থাকে না। শাস্তি দেয়ার আগে সুযোগ দেয়া উচিত! ভুলের যোগফলে যার সৃষ্টি সেই ব্যক্তি অন্যের ভুল দেখেই ফুোসে উঠতে পারে না! ওঠা উচিত নয়! বড় সাহেব হয়েছে বলে পদে পদে অন্যদেরকে নিপিড়ীত-নিগৃহীত করতে পারে না। ভৃত্যের আগেও সে মানুষ! মানুষের স্বতন্ত্র্য মর্যাদা থাকা উচিত!
একটু ছাড় দিন না! যে ছাড়ে আপনার প্রভূত্ব চলে যাবে সেটুকু ছাড় দিন। মানুষ মানুষের প্রভূ হওয়া ঠিক নয়। রাষ্ট্রের ক্ষতি, প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি, জাতীয় স্বার্থের ক্ষতি হলে সেখানে নাছোড়বান্দা হিসেবে থাকুন। কিন্তু যে ছাড়ে কোন ক্ষতি হয় না সেখানে আপনার মাহাত্ম্য দেখান। বস বলে কী একটু কষ্ট করা যাবে না? সাধারণের কাতারে আসা যাবে না? আপনি যাদের অধীন, আপনার সাথে কৃত তাদের আচরণে আপনার যেভাবে উপলব্ধি হয় খারাপ লাগে, আপনার অধীনরাও তেমনভাবে অনুধাবন করে! হয়তো বিরক্ত হয়! সবাই মানুষ! শেষ পরিচয়ে মানুষ! সবার আবেগ-অনুভূতি আছে! সেগুলোর মূল্য দিতে, ইচ্ছার সম্মান করতে, আশা বাস্তবায়িত করতে আমরা যেন ভুল না করি! উল্টোপথে চললে মানুষ আর মানুষ থাকে না!
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন