দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয় স্বতন্ত্রের, তবু বিরোধী দলে জাতীয় পার্টি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দ্বিতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক আসনে বিজয়ী হলেও দল হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জাতীয় পার্টি। সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী দ্বিতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক আসনে বিজয়ী দলই বিরোধী দল হবে এবং সেই দলের নেতা বিরোধীদলীয় নেতা হবেন।

সেই হিসাবে দশম ও একাদশ সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি আবার বিরোধী দলের আসনে বসতে যাচ্ছে। আগামী ১১ জানুয়ারি নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন।

চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বসতে পারে দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন। এর আগেই বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হবেন।

 

বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সমমনা দলগুলোর বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করবে, এটা নিশ্চিত ছিল। আলোচনা ছিল, আগামী দিনে বিরোধী দল কারা হচ্ছে?

ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৮টির বেসরকারি ফলাফলে আওয়ামী লীগ ২২২টি, জাতীয় পার্টি ১১টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি করে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টি আসনে বিজয়ী হয়েছেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সংখ্যায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হলেও দল হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাওয়ায় জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী জাতীয় পার্টিই বিরোধী দল হবে।

 

কার্যপ্রণালী বিধির ২(১)(ট) ধারায় বলা হয়েছে, ‘বিরোধী দলের নেতা অর্থ স্পিকারের বিবেচনা মতে যে সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চসংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমতো দল বা অধিসংঘের নেতা।’

সেই হিসাবে জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হলেও বিরোধী দলের স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি স্পিকারের একক এখতিয়ারের বিষয়।

সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার গঠন করতে হলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকতে হবে, এটা সংবিধানে বলা আছে।

 

তবে বিরোধী দলের বিষয়ে বলার কিছু নেই। প্রথা বা রেওয়াজ হচ্ছে, সরকারি দলের পর যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠ, সেই দলই বিরোধী দল হবে এবং সেই দলের নেতা বিরোধী দলের নেতা হবেন। সেখানে তাদের কতটি আসন থাকতে হবে, এ রকম কোনো বিষয় নেই।

এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ ও সাতবারের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ মো. আবদুস শহীদ কালের কণ্ঠকে বলেন, কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা গ্রুপ বিরোধী দলের মর্যাদা পাওয়ার জন্য তাদের নেতা নির্বাচিত করে স্পিকারের কাছে আবেদন করবে। অবশ্য এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার স্পিকারের।

এ ক্ষেত্রে সংসদ নেতার একটা মতামতও থাকে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা চাইলে বিরোধী দলের সঙ্গে থাকতে পারেন।

 

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা গ্রুপ গঠন করে বিরোধী দলের মর্যাদা চাইতে পারেন কি না, জানতে চাইলে উপাধ্যক্ষ শহীদ বলেন, স্বতন্ত্ররাও গ্রুপ গঠন করে স্পিকারের কাছে আবেদন করে বলতে পারেন, তাঁরা বিরোধী দল হতে চান। তখন স্পিকার সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি হচ্ছে, দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বিরোধী দলের মর্যাদা পেয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে দল একটি বড় বিষয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, স্পিকার স্বীকৃতি না দিলে বিরোধী দল ছাড়াই সংসদ চলতে পারে। এর আগে স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রথম ও ষষ্ঠ সংসদে কোনো বিরোধী দল ছিল না। আর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর গঠিত চতুর্থ সংসদে বিশেষ বিবেচনায় বিরোধী দল করা হয়। ১৯৮৮ সালে বিশেষ বিবেচনায় কয়েকটি দলের সদস্যদের নিয়ে গঠিত সম্মিলিত বিরোধী দলকে বিরোধী দল এবং তাদের নেতা আ স ম আবদুর রবকে বিরোধীদলীয় নেতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এখানে বিরোধী দলের নির্বাচনের ক্ষেত্রে সরকারি দল জাতীয় পার্টির আগ্রহের বিষয়টি প্রধান্য পেয়েছিল।

এবারও তেমনটি হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নির্বাচনের ফল অফিশিয়ালি ঘোষণা হওয়ার পর বিরোধী দল কারা বোঝা যাবে। এর মধ্যে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির তো অনেকেই জিতেছেন। ১৪ দলেরও দুজনের মতো জিতেছেন। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তো দূরে নয়। যিনি লিডার অব দ্য হাউস হবেন, তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।

নতুন প্রধানমন্ত্রী, নতুন লিডার অব দ্য হাউস পরিস্থিতি, বাস্তবতা, করণীয় বিবেনায় নিয়ে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নেবেন। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের সংবিধান ও জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে সংসদের বিরোধী দল থেকে ঠিক কতসংখ্যক সদস্য প্রয়োজন, তা নির্ধারিত নেই। তবে ভারতের লোকসভার বিধান ও প্রচলিত রেওয়াজ অনুযায়ী, বিরোধী দলের স্বীকৃতির জন্য ন্যূনতম ১০ শতাংশ, অর্থাত্ ৩০০ আসনের মধ্যে ৩০টি আসন পেতে হবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তেমন বাধ্যবাধকতা নেই। যে কারণে একাদশ জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টি মাত্র ২২টি আসনে বিজয়ী হলেও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা এবং বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। ফলে এবারও তেমনটি হতে পারে।

এদিকে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার পর থেকে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করেছে সংসদ সচিবালয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিকভাবে আগামী ১১ জানুয়ারি শপথের তারিখ নির্ধারণ করে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ওই দিন সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের শপথকক্ষে চলতি একাদশ সংসদের স্পিকার নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ পাঠ করাবেন। এর আগে নিয়মানুযায়ী স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নিজে নিজেই শপথ গ্রহণ করবেন। শপথগ্রহণ শেষে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বসে তাদের নেতা নির্বাচিত করবে। এরপর রাষ্ট্রপতি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকে সরকার গঠনের আহ্বান জানাবেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বসে তাদের নেতা নির্বাচিত করে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার স্বীকৃতির জন্য স্পিকারের কাছে লিখিতভাবে অনুরোধ জানাবে।

নিয়মানুযায়ী, সংসদ নেতা নির্বাচন ও প্রধানমন্ত্রীর শপথের পর তাঁর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশন আহ্বানের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব পাঠাবেন স্পিকার। এরপর রাষ্ট্রপতি সংসদ অধিবেশন আহ্বান করবেন। আগামী ২৮ বা ৩০ জানুয়ারি এই অধিবেশন আহ্বান করা হতে পারে। অধিবেশনের শুরুতেই নতুন সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন হবে।

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন