সিরাজুল আলম খানের জন্মদিন পালন রাষ্ট্র জন্মের পরেই রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠে দলপ্রধানের ব্যক্তিগত হাতিয়ার স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ

হাকিকুল ইসলাম খোকন,সিনিয়র প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা ষাট ও সত্তরের দশকের ছাত্র রাজনীতির মহানায়ক সিরাজুল আলম খানের রাজনৈতিক ভাবনার নতুন দিক উন্মোচন করেছেন তার আদর্শে দিক্ষিত প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ আবু জাফর মাহমুদ। তিনি বলেছেন, সিরাজুল আলম খান দাদা ভাই তার জীবনকে উৎসর্গ করেন জাতির জন্য। তিনি কোনো রাজনৈতিক নেতার বক্তৃতা শুনে নিজের গন্তব্য নির্ধারণ করেননি। তিনি ছিলেন প্রচলিত ধারার বাইরের মানুষ। তিনি যেখান থেকে বাংলাদেশকে দেখতেন, যে দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মানুষের ভবিষ্যৎ বিশ্লেষণ করতেন তা প্রচলিত রাজনৈতিক দলনেতাদের সঙ্গে মিলবে না। রাজনৈতিক নেতারা যে প্রেক্ষিতে দল গড়ে তুলে রাজনৈতিক সুবিধা ও ক্ষমতা ভোগ করে এগুলোর কোনোকিছুই সিরাজুল আলম খানকে ছুঁতে পারেনি। রাষ্ট্র জন্ম দেয়ার পরক্ষণেই আমরা দেখেছি রাজনৈতিক দলকে দলপ্রধানের ব্যক্তিগত হাতিয়ার বানানোর প্রক্রিয়া। এই সত্য সিরাজুল আলম খান উন্মোচন করে গেছেন। নিউইয়র্কে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্অন্যতম রূপকার সিরাজুল আলম খানের ৮৩তম জন্মদিন পালন করেছে রাজনীতি গবেষণা ও অনুশীলনের সংগঠক পিপল ইউনাইটেড ফর প্রগ্রেস, পিপল আপ। ।গত ৬ জানুয়ারি ২০২৪,শনিবার ,সন্ধ্যায় ষাট ও সত্তরের দশকের শীর্ষস্থানীয় ছাত্রনেতার জন্মদিন উপলক্ষে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস-এ বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের কর্পোরেট অফিসে ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিপল আপ এর প্রেসিডেন্ট, গ্লোবাল পিস অ্যামব্যাসেডর বীর মুক্তিযোদ্ধা স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ। অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কের সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. এম ওয়াজেদ, টাইম টিভি’র সিইও আবু তাহের, সিনিয়র সাংবাদিক মঈনউদ্দিন নাসের, প্রথম আলো সম্পাদক ইব্রাহিম চৌধুরী খোকন, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মনওয়ারুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোমিন মজুমদার, লেখক সাংবাদিক মাহবুব রহমান, হক কথা’র সম্পাদক এবিএম সালাহউদ্দিন, রাজনীতিক ও আইনজ্ঞ এড.ভোরেট শেখ আখতারুল ইসলাম, জেএসএফ নেতা ও সিরাজুল আলম খানের ¯ঘনিষ্ট অনুসারী হাজী আনোয়ার হোসেন লিটন, রফিকউল্লাহ, জাগপা সভাপতি রহমতউল্লাহ প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাংবাদিক আদিত্য শাহীন। স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ বলেন, সত্তরের নির্বাচন আমরা যখন ৬ দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টি করে শায়ত্বশাসন আন্দোলনটাকে ত্বরান্বিত করছি, তখন পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ট জনগণ পূর্ব পাকিস্তানীদের রায় আমাদের পক্ষে আসে। তখন সেই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়ার মতো লোকও খুব কম ছিল। এত প্রভাব ছিল মুসলিম লীগের। সেই সময়ও এই ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দই নির্বাচনে জয়লাভের জাগরণ সৃষ্টি করে। আমরা সেই যুবশক্তিকে ভুলে গেছি। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের রাজনৈতিক ইতিহাসে রাখা হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলোতে রাখা হচ্ছে না। মানা হচ্ছে না। দেশ জন্ম হওয়ার আগে শ্লোগান ছিল গণতন্ত্রের। গণতন্ত্রের জন্য আমরা এত বেশি যৌক্তিক অবস্থানে ছিলাম, সেই মানুষ আমরা যারা কোনোদিন অস্ত্র দেখিনি সামরিক পোশাক দেখিনি তারাই পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হয়েছি। তিনি বলেন, রাষ্ট্র স্বাধীনের পর বড়রা নের্তৃত্ব করবে। নেতারা নেতৃত্ব করবেন সেটিই স্বাভাবিক। কিন্তু ৭০ সনে পাকিস্তানী নেতৃত্ব করবার জন্য বা পার্লমেন্টে যাওয়ার জন্য যাদের আমরা নির্বাচিত করি তাদের দিয়েই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করা হয়। সেটি কি বাংলাদেশের ছিল না কি পাকিস্তানের ছিল? ড. আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আমরা রাষ্ট্র বুঝতাম না। এর আগে রাষ্ট্র গঠন করিনি। রাষ্ট্র পরিচালনায় ছিলাম না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু যিনি স্বধীনতা যুদ্ধি দেখেননি যার সাথে এর কোনো সম্পর্কও ছিল না, তিনিই যেহেতু সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা তার নেতৃত্বেই সরকার গঠন করা হয়। এই সরকারটা মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশ সরকার হবার কথা। মহান মুুক্তিযুদ্ধে যারা অংশ নিয়েছেন, যারা সংগঠক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের মাধ্যমে না হয়ে পাকিস্তানী পার্লিমেনেটে দায়িত্ব নেয়ার জন্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের নয়মাসে প্রতিটি মানুসের সাহস, দেশপ্রেম শত্রুকে প্রতিরোধ করার যে ক্ষমতা ও চেতনার যে অভূতপূর্ব যে পরিবর্তন হয়, সেই অভিজ্ঞতা যাতে স্বাধীন দেশের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় কাজে না লাগানো হয়, সেই চক্রান্তের অংশ হিসেবে পাকিস্তানপন্থী জনপ্রতিনিধিদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়। আর যেসব ছাত্র যুবকরা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছে তাদের স্বপ্ন ও চেতনাকে ধুলিস্যাৎ করা হয়েছে একটি শ্লোগান দিয়ে ‘এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধুই বাংলাদেশ’। তিনি বলেন, এখন বুঝতে পারি কেন আমরা পরাজিত হলাম। কেন আজ বাংলাদেশ আমাদের নেই। তিনি বলেন, আমরা শিখিনি কীভাবে রাষ্ট্র চালাতে হয়। যে রাষ্ট্র জন্ম দিলাম সেখানে শুধু একজন নেতা থাকবে, আর কোনো নেতা থাকবেন না। কাউকে স্বীকার করা হবে না। আর কোনো নেতা গড়ে উঠতে দেয়া হবে না। উপরোন্তু অন্যদের বিরুদ্ধে পুলিশ লেলিয়ে দেয়া হবে। তাদের বিরুদ্ধে রক্ষীবাহিনী লেলিয়ে দেয়া হবে। দেশ মাতৃকার জন্য যুদ্ধ করা তরুণদের গুনজা বানিয়ে তাদের হাতে অস্ত্র দিয়ে বাকিদের হত্যা করার তৎপরতা যখন শুরু হয়েছে তখনই স্পষ্ট হয়ে গেছে, এই রাষ্ট্র আর আমাদের নেই। আমরা আবার পরাধীন হয়ে গেছি। রাষ্ট্র জন্মের পরেই এই ধারা চলে এসেছে। আবু জাফর মাহমুদ বলেন, সিরাজুল আলম খান বারবার একথাই বলে গেছেন। আমি কয়েক বছর আগে এই নিউইয়র্কেই দাদা ভাইকে জিজ্ঞেক করেছিলাম। তিনি তখন নিউইয়র্কে এল্মহার্স্ট হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। সুস্থ হয়ে তার রাজনৈতিক অনুসারী জনাব মহসীনের বাসায় ওঠেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম জন্ম হওয়ার আগেই যখন বাংলাদেশ বিক্রি হয়ে গেল, তখন আপনারা তো ভারতেই ছিলেন, কোনো প্রতিক্রিয়া দেখলাম না কেন? তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেছিলেন, আরো অনেকেই তো ফ্যাক্টর ছিলেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন