গাজায় হামলা ঘিরে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার মামলার দুই দিনব্যাপী প্রকাশ্য শুনানি আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে। ফিলিস্তিনের প্রতি সহানুভূতিশীল আন্দোলনকারীদের প্রত্যাশা, আইসিজে হয়তো গাজায় ইসরায়েলের প্রাণঘাতী অভিযান থামাতে পারবে। এদিকে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনে ‘বাস্তব পদক্ষেপের’ প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অটুট আছে বলে জানিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্য সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।
আজ বৃহস্পতিবার হেগ শহরের স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার গণহত্যাবিষয়ক মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি হবে।
এই মামলার জন্য নিজেদের শীর্ষ আইনজীবীদের একটি দল হেগে পাঠাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আন্তর্জাতিক বিচারালয় জাতিসংঘের ছয়টি প্রধান অঙ্গের একটি। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি এর লক্ষ্য।
গত ২৯ ডিসেম্বর আইসিজেতে এই মামলার আবেদন দাখিল করে দেশটি।
আবেদনে দক্ষিণ আফ্রিকা অভিযোগ করেছে, ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘ জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘন করে গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এতে বলা হয়, ব্যাপকসংখ্যক বেসামরিক নাগরিক হত্যা, গণহারে বিতাড়ন, বাড়িঘর ধ্বংস করা এবং ফিলিস্তিনিদের বর্বর হিসেবে চিত্রিত করে তারা সমষ্টিগত শাস্তি পাওয়ার যোগ্য—এ মর্মে কিছু ইসরায়েলি নেতার বিবৃতি এ সব কিছু গণহত্যা এবং তার অভিপ্রায়েরই প্রমাণ। মামলায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় খাদ্য সরবরাহে বাধা দেওয়া এবং অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুদের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা ধ্বংসের অভিযোগও তুলে ধরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আজ আইসিজেতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলার প্রথম অংশের কাজ শুরু হবে।
এতে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার এবং সেখানে নির্বিচার বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে বিশেষ জরুরি অনুরোধের প্রতি নজর দেওয়া হবে। এই বিষয়ে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অভিমত জানাতে পারেন আদালত। তবে ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা সংঘটিত করেছে কি না তা বিধি অনুযায়ী নির্ধারণে আদালতের কয়েক বছরও লেগে যেতে পারে।
আব্বাস-ব্লিনকেন বৈঠক
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনে ‘বাস্তব পদক্ষেপের’ প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থন আছে। গতকাল পশ্চিম তীরের রামাল্লায় ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি এ কথা বলেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, ফিলিস্তিনি নেতার সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অবস্থানের প্রতি ওয়াশিংটনের দীর্ঘদিনের অবস্থান অটুট থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। নব্বইয়ের দশকের দিকে আলোচিত অসলো চুক্তি হওয়ার পর ফিলিস্তিনিদের পৃথক রাষ্ট্র গঠনের প্রত্যাশা করা হয়েছিল। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এসংক্রান্ত আলোচনা স্থবির। আলোচনা পুনরুজ্জীবিত করতে ইসরায়েল সরকার আগ্রহ দেখায়নি। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি নেতৃত্বও আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং গাজা শাসনকারী কট্টরপন্থী হামাসের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
আব্বাসের সঙ্গে বৈঠকে পশ্চিম তীরে অস্থিরতা বৃদ্ধির কথাও উল্লেখ করেন ব্লিনকেন। অঞ্চলটিকে স্থিতিশীল করতে ব্লিনকেন ফিলিস্তিনিদের পাওনা রাজস্ব ফিরিয়ে দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানান। ব্লিনকেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে জর্দানের একটি বিমানে চড়ে আকাবা গেছেন আব্বাস। সেখানে জর্দানের রাজা আবদুল্লাহ দ্বিতীয় এবং মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে তাঁর।
হামলা ও রক্তপাত অব্যাহত
এদিকে গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্বিচারে বোমাবর্ষণ চালিয়েই যাচ্ছে ইসরায়েল। গত মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণ ও মধ্য গাজায় যুদ্ধবিমানের বোমাবর্ষণ ও স্থল হামলায় বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যে ইসরায়েল ঘোষিত ‘নিরাপদ এলাকা’ রাফাহ শহরে হামলায় ১৫ জন প্রাণ হারিয়েছে। গাজায় হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল স্থানীয় সময় বিকেলে বলেছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৪৭ জন নিহত হয়েছে। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর হামলা শুরুর পর থেকে গাজায় ২৩ হাজার ৩৫৭ জন নিহত এবং ৫৯ হাজার ৪১০ জন আহত হয়েছে।
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন