ড. ইউনূসের সাজার বিরুদ্ধে আপিলের প্রস্তুতি চলছে

শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে দণ্ডিত গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার জনের পক্ষে আপিলের প্রস্তুতি চলছে। জেল-জরিমানার বিরুদ্ধে শিগগিরই শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন দণ্ডিতদের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন।
 
এ আইনজীবী শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার ৮৪ পৃষ্ঠার রায়টি হাতে পয়েছি। এখনো সবটা পড়া হয়নি।

সবটা পড়ে বিশ্লেষণ করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল ফাইল করা হবে।’

 

গত ১ জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলার ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ রায়ে গ্রামীণ টেলিকমের শীর্ষ চারজনকে জরিমানাসহ ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা। দণ্ডিত বাকি তিনজন হলেন- প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান এবং দুই পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান। 

গ্রামীণ টেলিকমের ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীর চাকরি স্থায়ী না করা, অর্জিত ছুটি মজুরিসহ নগদায়ন না করা, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে ৫ শতাংশ হারে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল আসামিদের বিরুদ্ধে।

 

 

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, আসামিরা শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ৪(৭) (৮), ১১৭, ২৩৪ এর বিধান লঙ্ঘন করে আইনের ৩০৩(৫) ও ৩০৭ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁদের শ্রম আইনের ৩০৩এর ৩ ধারায় ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড হলো। আর ৩০৭ ধারায় তাদের সবাইকে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ড হলো।

সব মিলিয়ে ইউনুসসহ চারজনের প্রত্যেককে ছয় মাসের কারাদণ্ডের সঙ্গে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত। 
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবী এক নম্বর আসামির (ড. ইউনুস) সম্পর্কে প্রশংসাসূচক বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। তাঁকে দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াই করা আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু এ আদালতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার হয়নি, বিচার হয়েছে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যানের। 

 

রায়ে সাজা হলেও সেদিন কাউকে জেলে যেতে হয়নি।

রায় ঘোষণার পর পরই জামিন আবেদন করা হলে আপিল করার শর্তে দণ্ডিতদের ১ মাসের জামিন দেন বিচারক। 

 

রায় ঘোষণার পর আদালত থেকে বেরিয়ে ড. ইউনূস নিজের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘যে দোষ আমি করিনি, সেই দোষে শাস্তি পেলাম। এটাই দুঃখ।’ 

২০২১ সালের এ মামলা করেছিলেন সরকারি সংস্থা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান। এতে শ্রমিক অংশগ্রহণ ও কল্যাণ তহবিল গঠন এবং তহবিলে নিট মুনাফার ৫ শতাংশ না দেওয়া, শ্রমিক-কর্মচারীদের অর্জিত ছুটি মজুরিসহ নগদায়ন না করা ও শ্রমিক-কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ী না করার জন্য শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
 
এ মামলা বাতিলের আবেদন নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গিয়েছিলেন ড. ইউনূস। কিন্তু গেল বছর মে মাসে তাঁর আবেদন আপিল বিভাগে খারিজ হয়। এরপর গত ৬ জুন শ্রম আইনের ৩০৩(ঙ) ও ৩০৭ ধারার অধীনে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ  গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা। অভিযোগ গঠনের এ আদেশ চ্যালেঞ্জ করেও উচ্চ আদালতে যান ড. ইউনূসসহ চার আসামি। শুনানির পর গত বছর ২৩ জুলাই হাইকোর্ট রুল জারি করেন। চূড়ান্ত শুনানির পর ৮ আগস্ট রুল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। পরে এ রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করা হলে সে আবেদনও খারিজ হয়। পরে ২২ আগস্ট থেকে মামলায় সাক্ষ্য গ্রহন শুরু হয়। কলকারকানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের চার পরিদর্শক এ মামলায় সাক্ষ্য দেন। গত ৬ নভেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলে ত ৯ নভেম্বর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার বিবাদী আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন। এ মামলা উদ্দেশ্যপূর্ণ, অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং নিজেদের নির্দোষ দাবি করে মামলা অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চান আসামিরা। পরে বাদী-বিবাদীপক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু হয়। গত ২৪ ডিসেম্বর উভয় পক্ষের চূড়ান্ত যুক্তিতর্কের পর রায় ঘোষণার তারিখ দেন বিচারক। সে ধারাবাহিকতায় বছরের প্রথম দিন রায় ঘোষণা করেন আদালত।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন