বয়সের ঢেউয়ে ঢেউয়ে, ভাঁজে ভাঁজে বাহারি সুখ-দুঃখ আসবে! জগতের কারো সময় একই রকম যায় না! সুসময়ে প্রিয়জনের পাশে থাকুন, দুঃসময়েও সাপোর্ট দিন!
রাজু আহমেদ। কলাম লেখক। ||
আপনাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য স্বামী খেটে মরছে! সবার হাসি এবং স্বচ্ছলতার জন্য একজন প্রাণোচ্ছল মানুষ দিন-রাত একাকার করে ফেলছে! সারাদিনের ধকলের পর রাতে বিছানায় যেতেই ঘুমে তলিয়ে যায়! অথচ আপনার অনেক অভিযোগ, এখন সে আর রোমান্টিক নাই! আপনি যেভাবে চান সে সেটা নয়! আপনার সাথে গল্পে মাতে না, ফোনেও কয়েক মিনিটের বেশি খোঁজ নেয় না! বৃষ্টিতে ভিজতে ডাকে না! সপ্তাহে সপ্তাহে ঘুরতে নিয়ে বেরোয় না! বদলে যাওয়া একজন মানুষকে ভালোবাসা যায় না!
অকর্মণ্য গোষ্ঠীর সরদার লেভেলের কেউ আপনার খুব খোঁজ রাখে! সুখ-দুঃখ জিজ্ঞেস করে! আপনি তাকে দুঃখের কথা বলেন এবং সে আপনাকে খুব করে সান্ত্বনা দেয়! যেথায় যেথায় আপনার দুর্বলতা সেখানে সেখানে মলম মাখে! যেখানে যেখানে আপনার বরের দোষ সেখানে সেখানে স্লোগান দেয়! মোটকথা, আপনার মত একজন মানুষকে যিনি সময় দেন না তার মত কপালপোড়া জগতে আর কেউ নাই! সে পাষাণ! আপনি মহান-তার ভাষ্যে!
অতঃপর বরের ওপর ভালোবাসা কমতে থাকে! অকর্মার জন্য শ্রদ্ধা-সম্মান জমতে থাকে! সে কায়দা করে আপনার কাছ থেকে ফায়দা আদায় করে! তার কামনায় আরও বহু কিছু! বেশিতেই কাম! আপনিও বোধ হারিয়ে ফেলেন! দুষ্টের মিষ্টি ভাষায় আপনার হিতাহিত জ্ঞান থাকে না! পৃথিবীর ঘৃণ্যতম পথে পা বাড়ান! মানুষের প্রতি বিশ্বাস-ভরসা হেরে যায়! একটা সময় নিজের দিকে তাকাতে ঘৃণা হয়! নিজেকে আর বাঁচিয়ে রাখতে ইচ্ছা হয় না!
সংসার-সন্তান সামলাতে সামলাতে আপনার স্ত্রীর চেহারায় বয়সের ছাপ পড়েছে! সেই রূপ-লাবণ্যের ঝলকানি নাই! কথাতেও কিছুটা কর্কশতা অনুভব করেন! সংসার সামলিয়ে আপনাকে অসীম সময় দেয়া, ঠিকঠাক যত্ন করতে কুলিয়ে ওঠে না! আপনার সাথে সেভাবে হেসে কথা বলে না! মনে হয় সেই আন্তরিকতা-রোমান্টিকতা নাই যতোখানি আপনার প্রত্যাশিত! সে আপনার জন্য সাজে না! আপনার কথা-ইশারায় বাজে না! কেমন রূপান্তরিত একটা মানুষকে ঠিকঠাক ভালোবাসা যায় না!
ফেসবুকের স্ক্রিনের সুন্দরী সুন্দরী রমনীদের সাথে আপনার রাতভর চ্যাট হয়! জগতের সব সৌন্দর্য, রূপ-লাবণ্য তাদের কপোলে ভর করে! আপনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সেসব দেখেন! জুম আউট, জুম ইন! নারী সহকর্মীদের জন্য আপনার দরদের শেষ নাই! যার যেখানে সমস্যা আপনি সেসবের ত্রাতা! কতো নারীর কতোভাবে প্রশংসা করেন অথচ স্ত্রীর দিকে ফিরে তাকাতেও আপনার ইচ্ছা হয় না! আপনি ভাবীদের সাথে আপনার স্ত্রীকে তুলনা করতে শুরু করেন! অগণিত খুঁত খুঁজে পান! বিকল্প কিছুর জন্য কাতর হয়ে ওঠেন! ধীরে ধীরে আপনি মানুষ থেকে অমানুষদের মিছিলে মিশে যান!
সংসারে আপনার মন কমে যায়! স্ত্রী-সন্তানদের ওপরে থাকা দায় এড়িয়ে চলেন! কথায় কথায় অশান্তির কথা বলেন! রক্ষিত আমানত ভেঙে দিয়ে আবর্জনায় মজতে চান! পৃথিবীর জঘন্যতম মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন! আশেপাশে কিছু অসুখী এবং অতৃপ্ত নারীর সাথে দেখা হয়! আপনি ব্যক্তিত্ব-বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন! যখন বিবেকে আসেন তখন নিজের সন্তানের সামনে দাঁড়ানোর যোগ্যতা হারান! স্ত্রী'র চোখে চোখ রেখে কথা বলার ক্ষমতা হারান! অনুশোচনায় জীবন পুড়তে থাকে!
বয়সের ঢেউয়ে ঢেউয়ে, ভাঁজে ভাঁজে বাহারি সুখ-দুঃখ আসবে! জগতের কারো সময় একই রকম যায় না! সুসময়ে প্রিয়জনের পাশে থাকুন, দুঃসময়েও সাপোর্ট দিন! কোন দুষ্ট মানুষের পাল্লায় পড়ে অন্তরের সুখ খোয়াবেন না। মানসিক প্রশান্তি হারাবেন না। রোমান্টিসিজম না পেলে কেন নাই সেটার কারণ অনুসন্ধান করুন। ভ্রষ্ট পথে পা বাড়ালে বিবেকের কৈফিয়ত ম্রিয়মান হয়। জগতের সকল অযাচিত মানুষের প্রবেশ থেকে নিজের জীবনকে মুক্ত রাখুন। ভেতরের শুক্তি মাঝে মুক্তা ফলান। এমন কোন কথা বলবেন না এবং কাজ করবেন না যা পরিনামে নিজেকে লজ্জিত করে, পরিবারকে সংকটে ফেলে এবং বিশ্বাসকে নষ্ট করে! খারাপ হওয়ার বহু তরিকা আছে কিন্তু ভালো থাকার পথ একটা এবং সেটা সোজা-সরল পথ।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন