বেসরকারি নিবন্ধিত হাসপাতাল ৫০ হাজার, লাইসেন্স ১৫ হাজার

সারা দেশে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে চলছে অসংখ্য অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান বিভাগীয় শহরের বাইরে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বেশি। কিন্তু অবৈধভাবে কত প্রতিষ্ঠান চলছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এসব বিষয়ে তেমন কিছুই জানে না। সরকারের দপ্তরটির কাছে এ সংক্রান্ত সঠিক তথ্যও নেই।

 

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, মাঠ পর্যায়ে নজরদারি না থাকায় এই অরাজকতা চলছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো সেবাদানের নামে প্রায়ই ভুল চিকিৎসা দিয়ে রোগীদের মৃত্যুঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

নিবন্ধন ৫০ হাজার, লাইসেন্স ১৫ হাজার

এমন পরিস্থিতিতে গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির ব্যাপারে ছাড় না দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এসব অননুমোদিত ও লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল চলতে দেওয়া যাবে না। এগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।

 

তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এর মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের সব বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের তথ্য দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে নিবন্ধনকৃত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। তাদের এক প্রতিষ্ঠানের জন্য একাধিকবার নিবন্ধন করেছে।

অনেকে নিবন্ধন নম্বর নিলেও প্রতিষ্ঠান আলোর মুখ দেখেনি।

 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, ‘সারা দেশে নিবন্ধনের বাইরে কত প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তবে সংখ্যাটি খুব বেশিও নয়।’ তিনি বলেন, ‘লাইসেন্সের জন্য আবেদনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত আমরা জানতে পারি না সেটি বৈধ না অবৈধভাবে চলছে। আবার বৈধতা যাচাইয়ে অধিদপ্তরের নিজস্ব জনবল (আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী) বা তেমন কিছু নেই।

সুতরাং দেশে লাইসেন্সবিহীন বা আবেদন ছাড়া কতটি বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক আছে, বলা কঠিন।’

 

এই কর্মকর্তা বলেন, গত সোমবার পর্যন্ত অধিদপ্তরে নিবন্ধিত লাইলেন্সধারী বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের সংখ্যা ১৫ হাজার ১৪৩। এর মধ্যে ব্লাড ব্যাংক ১৯৪টি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৯ হাজার ৯৫৬টি এবং চার হাজার ৯৯৩টি হাসপাতাল রয়েছে। এর বাইরে যারা আছে, তাদের কারো লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন, কারো লাইসেন্স সাসপেন্ড (স্থগিত) রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের সব বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের তথ্য দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৮২ সালের মেডিক্যাল অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালানোর সুযোগ নেই। কিন্তু বৈধ-অবৈধ অনেক হাসপাতালে প্রায়ই ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। চলতি জানুয়ারিতে রাজধানীর বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিক্যাল হাসপাতালে খতনা করাতে গিয়ে আয়ান নামের এক শিশুর মৃত্যুর পর জানা যায়, হাসপাতালটি অনুমোদন ছাড়াই কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিদর্শন করে জানতে পেরেছে, হাসপাতালটি কখনো নিবন্ধনের আবেদনই করেনি। নির্মীয়মাণ ভবনে চিকিৎসাসেবা পরিচালনা করছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের পরিবেশের ছাড়পত্র, মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, হাসপাতালের অর্গানোগ্রাম বা জনবলের তালিকা পাওয়া যায়নি।

এদিকে ওই ঘটনার পর ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে ইউনাইটেড মেডিক্যাল হাসপাতালের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ছাড়া গত সোমবার সারা দেশে লাইসেন্স ও অনুমোদনহীন হাসপাতালের তালিকা তৈরি করে তিন মাসের মধ্যে তা জমা দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আয়ানের পরিবারের সদস্যরা গতকাল সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি তিনি জেনেছেন, আইন অনুযায়ী সব ধরনের ব্যবস্থা তিনি নেবেন।

এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘আমি বলেছি, দুর্নীতির ব্যাপারে ছাড় দেব না। এই অননুমোদিত ও লাইসেন্স ছাড়া হাসপাতালগুলোকে চলতে দেওয়া যাবে না। বিষয়টি আমি এক দিনে পারব না; কিন্তু আমার মেসেজ হচ্ছে যে এই অননুমোদিত ক্লিনিক, হাসপাতাল বন্ধ করে দিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে। এগুলোর জন্য আমি নিজেও ভুক্তভোগী।’

এর আগে করোনা মহামারির মধ্যে ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসার নামে প্রতারণা ও জালিয়াতির ঘটনা সামনে আসে। ওই সময় জানা গিয়েছিল, অনুমোদন ছাড়াই চলছিল হাসপাতালটি। ২০২০ সালের নভেম্বরে ঢাকার আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে এক সহকারী পুলিশ কমিশনারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর জানা যায়, ওই হাসপাতালও সেবা দেওয়ার অনুমোদন পায়নি।

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২৫ মে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সারা দেশে অনুমোদিত এবং অনুমোদনহীন বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠাতে বিভাগীয় পরিচালকদের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিভাগীয় কার্যালয়গুলোর পাঠানো তথ্য নিয়ে লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একটি তালিকা তৈরি করে অধিদপ্তর। ওই তালিকায় ১১ হাজার ৯৪০টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম আসে। যারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন এবং যথাযথ সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছিল সে সময়।

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন