প্রাকৃতিক রূপ-বৈচিত্র্যের অপূর্ব লীলাভূমি সুনামগঞ্জ জেলার দুর্গম অঞ্চল সীমান্তঘেঁষা তাহিরপুর উপজেলার টেকেরঘাটের শহিদ সিরাজ লেকের (নীলাদ্রি লেক) সামনে ২০১৮ সালে ধারণ করা ইত্যাদির একটি বিশেষ পর্ব।
বিষয়-বৈচিত্র্যে ভরপুর ইত্যাদির সেই পর্বে রয়েছিল বেশ কয়েকটি হৃদয় ছোঁয়া প্রতিবেদন। সুনামগঞ্জের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য-দর্শনীয় ও পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থানগুলোর ওপর তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন। ইত্যাদির ধারণ উপলক্ষে হাওর কন্যা সুনামগঞ্জে ছিল উৎসবের আমেজ।
সম্প্রতি এই লেকের সামনে জেলা প্রশাসনকে অনুমতি নিয়ে ইট-পাথরের তৈরি ‘ইত্যাদি’ নামে ফলক নির্মাণ করা শুরু করে পর্যটন কর্পোরেশন। যার নাম দেয়া হয় ইত্যাদি পয়েন্ট। যা নিয়ে রীতিমতো হৈ হুল্লোড় শুরু হয় পর্যটন প্রেমীদের মাঝে। এমন অবকাঠামো লেকের সৌন্দর্য নষ্ট করছে একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই স্থানের নাম বদলে মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন অনেকে। একই সাথে এই অবকাঠামো অপসারণের দাবি জানান প্রকৃতি প্রেমিরা। এ ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও চলে নিন্দার ঝড়।
তবে সবার প্রতিবাদের মুখে ফলকটি অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে ইত্যাদি পয়েন্ট নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হয়েছে। ভেঙে ফেলা হচ্ছে ফলকটি।
টেকেরঘাটের নীল জলের লেকটিকে বলা হয় ‘শহীদ সিরাজ লেক’। অনেকের কাছেই যা নীলাদ্রি লেক হিসেবে পরিচিত।
ইত্যাদি পয়েন্ট নির্মাণ কাজ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একজন প্রতিবার করে লিখেন-
এটা কোন তামাশা!
এই জায়গাটি সুনামগঞ্জের অপরুপ সৌন্দর্যের, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত হিসেবেই সারা দেশব্যাপী পরিচিত। সবাই শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রি) হিসেবে চিনে। এটাকে ইত্যাদি পয়েন্ট নাম দিয়ে কেন পরিচিত করতে হবে। এই জায়গাটি সারাদেশে ব্যপী পরিচিত বলেই হানিফ সংকেত এখানে এসে ইত্যাদি অনুষ্ঠানটি করেছেন। প্রকৃতিকে এমন ভেঙেচুরে ইট পাথরের বাণিজ্যিক নাম দিয়ে অপরুপ সুনামগঞ্জের এ জায়গাটাকে ইত্যাদির কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। নয়নাভিরাম এ লেকটিকে ধ্বংসের এমন উপহাস কারা করছে। এটি শহীদ সিরাজ লেক বাইরের পর্যটকদের কাছে সৌন্দর্যের নীলাদ্রি একে ইত্যাদি নামক বানিজ্যিক নামকরণ দিয়ে কলুষিত করবেন না নয়তো আমরা যারা সুনামগঞ্জকে ভালোবাসি অপূর্ব সুনামগঞ্জকে সারা বিশ্বে আমাদের প্রকৃতিকে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে তারা বসে থাকবো না। এর বিরুদ্ধে কঠোরভাবে রুখে দাড়াবো। তাই কর্তৃপক্ষ যারাই সুনামগঞ্জের শহীদ সিরাজ লেকে এমন মনগড়া বানিজ্যিক তামাশা করছেন সেটি বন্ধ করতে হবে।
আরেকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেন-
মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে ইত্যাদি বড়?
চারিদিকে শুধু ইট-পাথরের উন্নয়ন! এইসব মাথামোটা লোকের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেয়েও ইত্যাদি বড়!
এই অপতৎপরতা বন্ধের দাবি জানাই। সুনামগঞ্জের সচেতন মানুষদের উচিত এখনই এই নামফলকটি ভেঙে ফেলা এবং এখানে যেকোনো ধরনের পরিবেশবিরোধী কাজ প্রতিহত করা।
ফলকটি ভাঙা না হলে এটি জনগণকে নিয়ে ভেঙে ফেলা হবে-
কিসের ইত্যাদি পয়েন্ট মিয়া?
সুনামগঞ্জ তাঁর নিজের পরিচয়ে পরিচিত।
এটি ভেঙ্গে ফেল। না হয় নিজে এসে জনতাকে নিয়ে ভেঙ্গে ফেলবো।
এসবের পর ইত্যাদি পয়েন্ট নির্মাণ কাজ বন্ধ করা সিদ্ধান্ত নেয় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন। পরে ফলকটি ভাঙার কাজও শুরু হয়। এক বিবৃতিতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ফেসবুক পেজে বলা হয়-
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার টেকেরঘাটে ইত্যাদি পয়েণ্ট নির্মাণ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত কিছু খবর জেলা প্রশাসন, সুনামগঞ্জ এর দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ইত্যাদি পয়েন্ট নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হয়েছে এবং এ সংক্রান্ত সকল স্থাপনা অতি দ্রুতই অপসারণ করা হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন