বিল পরিশোধ করতে না পারায় এক নবজাতককে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে রংপুর নগরীর হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় প্রসূতি মায়ের অভিযোগে নবজাতককে উদ্ধার ও হাসপাতাল পরিচালকসহ তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ। রবিবার বিকেলে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন।
এর আগে, গত ১৭ জানুয়ারি হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালের বিল পরিশোধে ব্যর্থতার অযুহাত ও রোগীর পরিবারের অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে নবজাতককে বিক্রির ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আটকরা হলেন হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালের পরিচালক ও নগরীর কামারপাড়া এলাকার বাসিন্দা এমএস রহমান রনি (৫৮), শিশুটির ক্রেতা মধ্য পীরজাবাদ এলাকার রুবেল হোসেন রতন (৩০) ও রুবেলের স্ত্রী জেরিনা আক্তার বিথী (৩০)।
উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন জানান, গত ১৩ জানুয়ারি নগরীর কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল সংলগ্ন শাপলা রোডের হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে প্রসব বেদনা নিয়ে ভর্তি হন ভুরারঘাট এলাকার লাবনী আক্তার (২২)। ওই দিন রাতে সিজারের মাধ্যমে একটি নবাজাতক শিশুর (ছেলে) জন্ম দেন তিনি। এর চারদিন পর ১৭ জানুয়ারি ক্লিনিকের বিল পরিশোধে ব্যর্থতার অজুহাত ও অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে প্রসূতি মায়ের অগোচরে শিশুকে বিক্রির উদ্যোগ নেন হাসপাতালের পরিচালক। শিশুটির বাবা ওয়াসিম আকরামের সহায়তায় হাসপাতালের পরিচালক এমএস রহমান রনি তার পূর্ব পরিচিত জেরিনা আক্তার বিথী ও রুবেল হোসেন রতনের কাছে ৪০ হাজার টাকায় শিশুটি বিক্রি করে দেন।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় প্রসূতি লাবনী আক্তার কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে নগরীর মধ্য পীরজাবাদ এলাকা হতে নবজাতক শিশুটিকে উদ্ধার করে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত এমএস রহমান রনি, রুবেল হোসেন রতন, জেরিনা আক্তার বিথীকে আটক করেছে পুলিশ। ওই প্রসূতি মা আটকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লাবনী আক্তার বলেন, ‘আমার মা-বাবা নেই। সৎ ঘরে মানুষ হইছি। ঢাকায় চাকরি করতাম। রনি আঙ্কেলকে আমি আগে থেকে চিনি। ঢাকা থেকে রংপুরে এসে দেউতি বাজারে ভাড়া থাকতাম। রনি আঙ্কেলকে আমার বাচ্চা প্রসবের সময়ের কথা বলি। তখন উনি উনার হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন। তখন আমি উনাকে বলি প্রসব বেদনা উঠছে, আমার কাছে তো টাকা পয়সা নাই। কোনো সমস্যা হবে কী। তখন রনি আঙ্কেল বলেন, ‘‘কোনো সমস্যা নাই তুমি আস। টাকা পয়সা লাগবে না পরে দেখা যাবে।” ওনার ওখানে গেইছি সিজার হওয়ার জন্য। ৯০০ টাকা জমাও দিছি আমি। সিজারের তিনদিন পর হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিবে। কিন্তু অনেক জায়গায় আমার স্বামী টাকা জোগাড় করার চেষ্টা করেও পাইনি।’
লাবনী আক্তার আরও বলেন, ‘আমরা আরও দুদিন সময় চাইছি। কিন্তু বাচ্চাটা বিক্রির জন্য রনি আঙ্কেল প্রস্তাব দিছে। বাচ্চাটা আমার কাছ থেকে বারবার চাইছে। অনেক কান্নাকাটি করছি, দেখে উনি বলেন, ‘‘মায়াকান্না দেখায় লাভ নাই, টাকা দাও নাই বাচ্চা বিক্রি কর।” আমার স্বামী কিডনি দিতে চাইছে কিন্তু ওরা নেয় নাই। আমার দুইটা চোখ নিতে বলছি, রক্ত নিতে বলছি। কিন্তু উনি আমাদের কোনো কিছু শোনেনি। আমার বাচ্চাটাকে চুপ করে নিয়ে বিক্রি করে দিছে।’
নবজাতক উদ্ধারসহ হাসপাতালের পরিচালক, নবজাতক ক্রয়কারী দম্পতিকে আটক করা হয়েছে। অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। নবজাতকের বাবা পলাতক রয়েছে তাকেও আটকের চেষ্টা চলছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন