ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ এবং দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভকে লক্ষ্য করে মঙ্গলবার রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ছয়জন বেসামরিক নিহত এবং অনেক মানুষ আহত হয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এদিন ভোরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভে আবাসিক ভবনে হামলা হয়। এতে পাঁচজন নিহত এবং ৪২ জন আহত হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে ৪০ এবং ৫৬ বছর বয়সী দুই নারী রয়েছেন। শহরের মেয়র বলেছেন, ফ্ল্যাটের একটি ব্লকের কিছু অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং উদ্ধারকর্মীরা জীবিতদের উদ্ধারের জন্য ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছেন। এ ছাড়া দিনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলের শিল্প শহর পাভলোহরাদে অন্তত একজন নিহত হয়েছে।
খারকিভের বাসিন্দা নাটালিয়া বিবিসিকে জানান, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি এতটা ‘জোরে’ শব্দ শুনেছেন বলে মনে করেন না।
তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি কেঁপে উঠেছিল। পুরোটাই খুব জোরে ছিল। সেখানে বিস্ফোরণ হয়, তারপর আরো ১০ সেকেন্ড এবং আরেকটি বিস্ফোরণ। অনেক মানুষ বিদ্যুৎ ও উত্তাপহীন রয়েছে।
ভয় ও ঘৃণা ছাড়া এই মুহূর্তে আমি কিছুই অনুভব করছি না।’
গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, কিয়েভে আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিমান হামলা চালানো হয়, যা ২ জানুয়ারির পর থেকে দীর্ঘতম। ফ্ল্যাটের একটি ব্লকে আগুন লাগলে বেশ কয়েকজন আহত হয় এবং অন্য আরেকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধ্বংসস্তূপ থেকে এক তরুণীকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে উদ্ধারকারীরা ভেবেছিলেন, তিনি মারা গেছেন।
কিন্তু তিনি এখন হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যায় রয়েছেন। অধিকাংশ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কিয়েভের সেন্ট্রাল সোলোমিয়ানস্কি এবং পশ্চিমের সোভিয়াতোশিনস্কি জেলায়।
সোভিয়াতোশিনস্কি জেলায় বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলার কয়েক ঘণ্টা পর জরুরি পরিষেবা সংস্থা বিবিসিকে বলেছে, তারা এখনো ঘটনাস্থলে রয়েছে এবং বিস্ফোরক খুঁজছে। কারণ সন্দেহ করা হচ্ছে, এমন কোনো ক্ষেপণাস্ত্রের অংশ থাকতে পারে, যা বিস্ফোরিত হয়নি।
এ ছাড়া হামলার সময় বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী রুশ ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে বাধা দেওয়ার পর ধ্বংসাবশেষ পড়ে কিয়েভের আরো তিনটি অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। মেয়র ভিটালি ক্লিটসকোর কার্যালয় বলেছে, ২০ জন আহত হয়েছে এবং শিশুসহ ১৩ জন হাসপাতালে রয়েছে।
এদিকে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী বলেছে, তারা গত রাতে রাশিয়ার ছোড়া ৪১টি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ২১টি ধ্বংস করেছে।
ইউক্রেনের শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এখন এই যুদ্ধের একটি মারাত্মক বাস্তবতা এবং সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আক্রমণ তীব্র হয়েছে। ইউক্রেনের উদ্বেগ প্রতিফলিত করে, অস্ত্রের জন্য তাদের দাবি পশ্চিমা মিত্ররা পূরণ করছে না। ইউক্রেনীয় বাহিনী গত সপ্তাহে রাশিয়ার জ্বালানি অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, যার মধ্যে তাদের দ্বিতীয় শহর সেন্ট পিটার্সবার্গের একটি তেল টার্মিনালে নজিরবিহীন হামলাও রয়েছে। উস্ট-লুগা বাল্টিক সাগর রপ্তানি কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের পরে জ্বালানি সংস্থা নোভাটেককে তাদের কিছু কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়েছে।
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন