বিশ্বের উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সামর্থ্যবান শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষাগ্রহণ ও বসবাসের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় দেশগুলোর মধ্যে কানাডা অন্যতম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ শিক্ষার্থী কানাডায় যান। যান সিলেটের শিক্ষার্থীরাও। গত কয়েক মাসে বেড়েছে এ যাওয়ার হার।
দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ইউরোপের স্বপ্ন সিলেটিদেরই বেশি। গত বছর সাড়ে ৪ লাখেরও অভিবাসী নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় ইউরোপের দেশ কানাডায় যাওয়ার হিড়িক পড়ে সিলেটিদের। গত ৬ মাসে কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীসহ নানা বয়েসিরা সিলেট থেকে পাড়ি জমিয়েছেন। তবে বর্তমানে যারা যাচ্ছেন তাদের পড়তে হচ্ছে দুই বড় সমস্যায়। সে দুটি হচ্ছে- আবাসন ও কাজ।
গত সোমবার (২২ জানুয়ারি) কানাডার অভিবাসনমন্ত্রী মার্ক মিলার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘সম্প্রতি কানাডায় বেশ কিছু সাইনবোর্ডসর্বস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের কোনো যোগাযোগ নেই। এছাড়া শিক্ষা, ক্যাম্পাস, শিক্ষার্থীদের সুবিধাসংক্রান্ত সরকারের যেসব নীতিমালা রয়েছে, সেসবের কোনোটিই প্রতিষ্ঠানগুলো মানছে না এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও তারা অতিরিক্ত ফি রাখছে। এই প্রতারণাচক্র বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন- গত বছর ২০২৩ সালে যত সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থীকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিলো, শতকরা হিসেবে এই সংখ্যা তার চেয়ে ৩৫ শতাংশ কম। তবে এই বিধিনিষেধ স্থায়ী নয়। আগামী ২ বছর পর্যন্ত এই ব্যবস্থা জারি থাকবে। আর চলতি (২০২৪ সাল) বছরে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৬০ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রবেশ-অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কানাডা।
সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষার্থীকে প্রবেশ-অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি সিলেটি তরুণ-তরুণীদের জন্য সুখবর হলেও সে দেশে আবাসন ও কাজ সংকট দেখা দেওয়ায় সদ্য যাওয়া সিলেটিরা পড়েছেন বিপাকে।
আরিফুল হক নামে সিলেটের এক যুবক শিক্ষাভিসায় গত মাসে গিয়েছেন কানাডায়। গিয়েই পড়েছেন আবাসন সংকটে। টরন্টো শহরে একটি মেসে থাকেন প্রতি মাসে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭০ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে। তিনি জানান- আর একটি পুরো বাসা ভাড়া নিলে গুনতে হয় ২ হাজার কানাডিয়ান ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার মতো। আর বাসা বলতে বুঝায়- একটি বেডরুম, একটি ছোট্ট রান্নাঘর ও একটি বাথরুম। ফলে পরিবার নিয়ে সে দেশে যাওয়া সিলেটিরা থাকা নিয়ে বেশ বিপাকে আছেন।
মারুফ হাসান নামের দক্ষিণ সুরমার আরেকজন বলেন- এখন কানাডায় কাজ পাওয়া বেশ কষ্টকর। যেসব শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করেও এখানে অবস্থান করছেন তাদেরকে পর্যন্ত কাজের অনুমোদনপত্র (ওয়ার্ক পারমিট) দেওয়া হচ্ছে না। ফলে অনেককেই দেশ (বাড়ি) থেকে টাকা আনতে হচ্ছে। তবে ৩-৪ মাস কষ্ট করে থাকতে পারলে কাজের সুযোগ তৈরি হয় বা সন্ধান মিলে।
এ অবস্থায় কানাডায় অবস্থানরত সিলেটিদের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন অভিবাসন-বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৩ পরামর্শ হচ্ছে-
১. যাঁরা কানাডায় পড়তে যাবেন, তাঁদের যাওয়ার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অন্টারিও ও ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিযোগিতা অনেক থাকবে, তাই শিক্ষার্থীরা এই প্রদেশ দুটি বাদে অন্য জায়গায় চেষ্টা করতে পারেন।
২. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে খোঁজখবর নিয়ে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বেছে নিতে হবে।
৩. যাঁরা পড়াশোনা শেষ করে কানাডায় থেকে যেতে চান, তাঁদের সঠিক সময়ে পড়াশোনা শেষ করে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। অর্থাৎ পড়াশোনা বাদ দিয়ে কাজের পেছনে ছুটলে কানাডায় থেকে যাওয়া বেশ কঠিন হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন