ভারতের নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী বাজেটে বড় কোনো ঘোষণা হলো না ঠিকই, তবে নারী, দরিদ্র, কৃষক ও যুবদের গুরুত্ব দেওয়া হলো। ২০১৯ সালের অন্তর্বর্তী বাজেটে আয়কর কমানো হয়েছিল। তার আগে কৃষকদের বছরে ছয় হাজার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। এবারের বাজেটে সে রকম ঘোষণা কম।
আয়করের ক্ষেত্রে কোনো বদল করা হয়নি। ভোটের বছরে আয়কর হার বাড়বে—এমন চিন্তা অকল্পনীয়। তবে কমানোর প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সেই পথে হাঁটেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
শুধু আয়করের হার কমানো বা স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনের পরিমাণ বাড়ানো হয়নি তাই নয়, জিএসটির হারেও কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। যদিও ভারতে এবার আয়কর ও জিএসটির ক্ষেত্রে সরকারের অনেক বেশি বাড়তি রাজস্ব আদায় হয়েছে। তা সত্ত্বেও এই দুই ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করা হয়নি।
নির্মলা সীতারামন বৃহস্পতিবার বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, ‘সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে নারী, দরিদ্র, যুব ও কৃষকদের ওপর।
’ নারীদের ক্ষেত্রে তাঁর ঘোষণা, ‘লাখপতি দিদিদের সংখ্যা দুই কোটি থেকে তিন কোটি করা হবে।’
এই ‘লাখপতি দিদি’র প্রকল্প গত অগাস্টে ঘোষণা করা হয়। কারিগরি নানা প্রশিক্ষণ দিয়ে নারীদের বার্ষিক আয় এক লাখ রুপি করা হয়। এত দিন লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই কোটি নারীকে লাখপতি করা হবে। অন্তর্বর্তী বাজেটে বাড়িয়ে তিন কোটি করা হয়েছে।
সব আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের আয়ুষ্মান ভারত বিমা প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
এ ছাড়া অর্থমন্ত্রী দেশের ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী মেয়েদের ‘সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার’ প্রতিষেধক টিকা বিনা পয়সায় দেওয়ার কথা বলেছেন।
দরিদ্রদের জন্য বাড়তি আরো দুই কোটি বাড়ি সরকার করে দেবে বলে জানানো হয়েছে। মৎস্যজীবীদের আরো সাহায্যের কথা বলা হয়েছে। মধ্যবিত্তদের জন্যও আবাসন পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন নির্মলা। তা ছাড়া এক কোটি বাড়িতে কেন্দ্রীয় সরকার সৌর প্যানেল বসাবে। এক কোটি পরিবারকে ৩০০ ইউনিট সৌরবিদ্যুৎ বিনা মূল্যে দেওয়া হবে।
নির্মলা বলেছেন, বিমানবন্দরের প্রসার ঘটানো হবে। ভারতের বিমান সংস্থাগুলো নতুন এক হাজার বিমান কিনছে। রেলের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ৪০ হাজার বগিকে বন্দে ভারতের মানে উন্নীত করা হবে। তিনটি রেল করিডরের ঘোষণা করেছেন নির্মলা। খনিজ, জ্বালানি ও সিমেন্টের করিডর হবে।
মালদ্বীপে চিনপন্থী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। ভারতীয়দের আরো বেশি করে লাক্ষাদ্বীপে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছে সরকার। বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছে, লাক্ষাদ্বীপে উন্নত পরিকাঠামো তৈরি করা হবে।
রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ আরো কমানো হবে বলেও নির্মলা জানিয়েছেন।
রামমন্দিরের উল্লেখ
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেট বক্তৃতায় একবার রামমন্দিরের উল্লেখ করেছেন। বাড়ির ছাদে সৌর প্যানেল বসানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২২ জানুয়ারিতে অযোধ্যার রামমন্দিরের উদ্বোধন পর্বে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই বিষয়টির উল্লেখ করেছিলেন।’
ভোটের দিকে তাকিয়ে
প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত রায় চৌধুরী ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ‘এটা পুরোপুরি ভোটের দিকে তাকিয়ে বাজেট করা হয়েছে। সার, খাবার জিনিসের ওপর ভর্তুকি বাড়ানো হয়েছে। যুব, কৃষক, নারীদের প্রকল্পে অর্থ অনেক বাড়ানো হয়েছে।’
জয়ন্ত জানিয়েছেন, ‘প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে নৌবাহিনীর বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। ভারত মহাসাগরে চীনের নৌবাহিনীর সঙ্গে পাল্লা দিতে গেলে নিজেদের নৌবাহিনীর ক্ষমতা বাড়াতে হবে। সেই কাজটাই করার জন্য নৌবাহিনীর অর্থবরাদ্দ বেড়েছে।’
সরকারের প্রতিক্রিয়া
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘এই অন্তর্বর্তী বাজেটে ধারাবাহিকতার আত্মবিশ্বাস আছে। এর ফলে যুবা দরিদ্র, নারী ও কৃষকদের ক্ষমতায়ন হবে। এই বাজেট দেশের ভবিষ্যৎকে নির্মাণ করবে। ২০৪৭ সালে উন্নত ভারত তৈরির ভিত্তি স্থাপন করবে। গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে এক লাখ কোটি রুপির তহবিল বানানোর কথা বলা হয়েছে।’
সড়ক পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গড়করি বলেছেন, ‘বাজেটে পরিকাঠামোকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সড়ক পরিবহনের ক্ষেত্রে অর্থ বাড়ানো হয়েছে।’
কংগ্রেস সংসদ সদস্য শশী থারুর বলেছেন, ‘বাজেটে অর্থমন্ত্রী বেকারত্বের কথা বলেননি। নারী শ্রমিকদের সংখ্যা কম হচ্ছে, সেটা বলেননি। শুধু নানা ধরনের কথার ফুলঝুরি ছোটাচ্ছেন।’
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন