বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত রবিবার

লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে গতকাল অনুষ্ঠিত হলো প্রথম পর্বের বৃহত্তম জুমার নামাজ। আজ সারা দিন ঈমান ও আমলবিষয়ক বয়ানের পর আগামীকাল রবিবার অনুষ্ঠিত হবে আখেরি মোনাজাত।

গতকাল সকাল থেকেই জুমার নামাজের জন্য লোকসমাগম ঘটতে থাকে। ইজতেমা মাঠে স্থান না পেয়ে অনেকে মহাসড়ক ও অলিগলিতে পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ বিছিয়ে জুমার নামাজে শরিক হয়েছেন।

ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বেশ কিছুক্ষণের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জুমার জামাতে ইমামতি করেন বাংলাদেশের তাবলিগ জামাতের শুরা সদস্য, শীর্ষ মুরব্বি কাকরাইল মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের। রবিবার আখেরি মোনাজাতও তিনিই পরিচালনা করবেন বলে জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান।

 

ইজতেমা ময়দানে জুমার খুতবা পাঠ শুরু হয় দুপুর ১টা ৩৭ মিনিটে।

দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে জুমার জামাত শুরু হয়ে শেষ হয় ১টা ৫১ মিনিটে। ইজতেমার মূল প্যান্ডেল ছাপিয়ে ময়দানের চারদিকে সব রাস্তাঘাটেও মুসল্লিরা জুমার নামাজে শরিক হন। এতে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, স্থানীয় এমপি জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

 

জুমার নামাজের আগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, এরই মধ্যে বিশ্বের ৪৭টি দেশ থেকে দুই হাজার বিদেশি মেহমান এসেছেন।

 

দিনভর বয়ান
গতকাল ফজরের নামাজের পর আম (সার্বিক) বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাবলিগ জামাতের ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমা। শুরুতে ঈমান, আমল, আখলাক, দাওয়াত ও তাবলিগ সম্পর্কে বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা আহমদ বাটলা। তাঁর উর্দু ভাষার বয়ান বাংলায় তরজমা করে শোনান বাংলাদেশের মাওলানা নুরুর রহমান।

স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উদ্দেশে বয়ান করেন ভারতের আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. সানাউল্লাহ। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বয়ান করেন পাকিস্তানের রাইবেন্ডের ডা. মো. নওশাদ এবং খাস বা বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য বয়ান করেন ভারতের দিল্লির মাওলানা আকবর শরীফ।

জুমার পর বয়ান করেন তাবলিগের জর্দানের জিম্মাদার শেখ ওমর। তাঁর বয়ান বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা জাকির হোসেন। 

 

আয়োজকরা জানান, ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তাবলিগ মারকাজের শুরা সদস্যরা ও মুরব্বিরা বয়ান পেশ করছেন। উর্দুতে বয়ান হলেও বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসি ভাষায় তাত্ক্ষণিক অনুবাদ করা হচ্ছে। বিভিন্ন ভাষাভাষীর মুসল্লিরা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন মুরব্বি মূল বয়ানকে তাত্ক্ষণিক অনুবাদ করে শোনান।

নানা অব্যবস্থাপনা 
পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সড়ক-মহাসড়কগুলো যানজট ও হকারমুক্ত রাখার ঘোষণা দেওয়া হলেও দেখা গেছে উল্টো চিত্র। গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরা থেকে আবদুল্লাহপুর, আবদুল্লাহপুর থেকে কামারপাড়া, টঙ্গীর স্টেশন রোড থেকে নিমতলী পর্যন্ত ছিল তীব্র যানজট। মুসল্লিদের যত্রতত্র পারাপার, যানবাহনের ইচ্ছামাফিক পার্কিং, সড়কে জনস্রোত প্রভৃতি কারণে যানজট লেগে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ফুটপাতগুলোতে ছিল হকারদের দৌরাত্ম্য। অস্থায়ী হোটেলগুলোতে খাবারের মান খারাপ ছিল, দাম ছিল কয়েক গুণ বেশি। এসব বিষয়ে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি বলে জানান রংপুর থেকে আসা মুসল্লি বিল্লাল হোসেন (৭০)। 

মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা
টঙ্গী শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে শুক্রবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত শতাধিক মুসল্লি চিকিত্সা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই ঠাণ্ডা, সর্দিকাশি, শ্বাসকষ্ট, পেটের পীড়ার চিকিত্সা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই হাসপাতালের আবাসিক চিকিত্সক ডা. তারিক হাসান। এ ছাড়া ইজতেমাস্থলের পার্শ্ববর্তী ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্পগুলোতে কয়েক হাজার মুসল্লি বিনা মূল্যে ওষুধ সংগ্রহ ও প্রাথমিক চিকিত্সা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি ৩০০, হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ প্রায় দুই হাজার, ইবনে সিনার উদ্যোগে প্রায় ৬০০ রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

বাসচাপায় পুলিশ সদস্য নিহত
বিশ্ব ইজতেমায় দায়িত্ব পালন করতে আসার পথে বাসের ধাক্কায় পুলিশের এক এএসআই নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক এসআই। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের থানার মিলগেট এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে।  

নিহত হাসানুজ্জামান মানিকগঞ্জ জেলা আদালতে কর্মরত ছিলেন। আহত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আমির হামজা মানিকগঞ্জ জেলার পুলিশ কন্ট্রোলরুমে কর্মরত।  

পুলিশ জানায়, ইজতেমা মাঠের কাছে মিলগেট এলাকায় বলাকা পরিবহনের একটি বাস দুই পুলিশ সদস্যকে বহনকারী মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন তাঁরা। টঙ্গী থানা পুলিশ প্রথমে তাঁদের উদ্ধার করে টঙ্গী হাসপাতালে পরে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিত্সাধীন অবস্থায় এএসআই হাসান মারা যান।  

আগামীকাল রবিবার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে প্রথম পর্বের সমাপ্তি হবে। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা শুরু হয়ে আখেরি মোনাজাত হবে ১১ ফেব্রুয়ারি।

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন