দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

ডলার সংকট মোকাবেলায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে। একই সঙ্গে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য চেষ্টা করছে। এসব বিষয়ে আরো জোরদার পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

 

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ১ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষকে চিঠি দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ৮ ফেব্রুয়ারি সকালে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মত বিনিময় করবেন। এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও সহজীকরণ, বাজারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ, নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নসহ বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

 

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা অনেক। ফলে নতুন সরকার গঠনের পরপরই প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মত বিনিময় করছেন। একই সঙ্গে বেশ কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হবে। এর আগে ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেছিলেন।

এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের পর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করবেন তিনি।

 

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু) গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ১ নম্বরে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার কথা বলা হয়েছে। বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ জোর দিচ্ছেন বলেই প্রথমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আসছেন। এ জন্য আমরাও সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছি। টিসিবি, বাজার মনিটরিংসহ বাজারসংক্রান্ত কার্যক্রমগুলো প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরা হবে।

 

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরই কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এ বিষয়ে আরো পরিকল্পিতভাবে কাজ করা হবে।’

প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির মাধ্যমে দ্রুত দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের উপায় বের করতে গত ২১ জানুয়ারি অর্থ, কৃষি, খাদ্য এবং মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বৈঠক করেন। আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় সচিব সভায়ও বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলার বিষয়ে আলোচনা-পরিকল্পনা হবে।

প্রসঙ্গত, বাণিজ্য ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত ৩১ ধরনের কাজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত। এ কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্য চলমান রাখা এবং সম্প্রসারণে সহায়তা, আমদানি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করা, দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও সহনীয় পর্যায়ে রাখা, পণ্য ও সেবা রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ ও রপ্তানির স্বার্থে আলোচনা করা, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদন ইত্যাদি।

সচিব সভা আজ

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তাঁর কার্যালয়ে আজ সচিব সভা অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে বাজার পরিস্থিতি, খাদ্য, অর্থনীতি, জ্বালানি, কৃষি, নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নসহ অন্তত ১০টি বিষয়। উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের কর্মপরিকল্পনার বিষয়েও আলোচনা করা হবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান কালের কণ্ঠকে বলেন, অর্থ, বাণিজ্য, কৃষি, খাদ্য, শিল্প এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বাজার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সচিবরা বর্তমান পরিস্থিতি ও মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন। অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরাও সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী অন্য কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট সচিব সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী সার্বিক বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা কাজের পরিকল্পনা করবেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সর্বশেষ সচিব সভা হয়েছিল ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর। ওই বৈঠকে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জাতীয় অর্থনীতিকে সুসংহত রাখা, জ্বালানি নিরাপত্তা, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সারের জোগান নিশ্চিত করা এবং পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনা, সরকারি কাজে আর্থিক বিধি-বিধান অনুসরণ, সরকারি সেবা প্রদানে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারবিষয়ক পরিকল্পনা এবং ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি, সুশাসন, শুদ্ধাচারসহ বিবিধ প্রশাসনিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল।

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন